সায়েন্স ফ্যান্টাসি ছবি 'পক্ষীরাজের ডিম', মুক্তির সময় আড্ডায় পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল। শুনলেন শম্পালী মৌলিক-
২০১৪ সালে ‘পেন্ডুলাম’ দিয়ে শুরু। আজকে ২০২৫ সাল। আসছে ‘পক্ষীরাজের ডিম’ (আজ)। প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। এতগুলো বছরে কী উপলব্ধি?
... এটা খুব সহজ জায়গা নয়।
২০১৮ সালে ‘রেনবো জেলি’ করলেন, মানুষ ভালোবেসেছিল। সেই ছবির দুজন মূল চরিত্র ঘেঁাতন (মহাব্রত বসু) আর পপিন্সকে (অনুমেঘা বন্দ্যোপাধ্যায়) নিয়ে ফিরছেন নতুন ছবি ‘পক্ষীরাজের ডিম’-এ। সেটা কতটা আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে?
... এই ছবিটা বানিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী। মনে হয়েছে, মানুষের ভালো লাগছে। ছবি বানাতে বানাতে একটা তো বোধ কাজ করে। এই ছবিটা সব মিলিয়ে নিজের জায়গা থেকে স্টেপ আপ করে বানানো। এই প্রথম আমার ছবিতে পূজা ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসাবে রয়েছে। সেই জন্য যেটা হয়েছে, অন্য ছবি তৈরির সময় আমার অনেকটা বেশি ব্যস্ততা থাকত। সেখানে এবার আমার বোঝা কমেছে অনেকটা। অভিনয় বা ছবির খুঁটিনাটির দিকে বেশি নজর দিতে পেরেছি। আরেকটা বড় জায়গা হচ্ছে ডিওপি সৌমিক হালদার। ওঁর ক্যামেরায় যা দেখছি, এই প্রথম মনে হয়েছে আমি ঠিক যেটা দেখাতে চেয়েছি সেইটা সবচেয়ে বেশি অ্যাচিভ করা গেছে এই ছবিতে। সবচেয়ে বড় কথা, ঘোঁতন-পপিন্সকে নিয়ে ফেরাটা খুব আনন্দের। সাধারণত, সিক্যুয়েলে আবার বাচ্চাদের নিয়ে ফেরা হয় না, খুব বিরল ব্যাপার। ওদের নিয়ে ফেরা এবং বড় প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কাজ করা, একটা যুদ্ধ। হয়তো বা গল্পের জোরে আমরা সেখানে পৌঁছতে পেরেছি। ঘোঁতন-পপিন্স যে সমাদর বা গ্রহণযাগ্যতা পেয়েছিল ‘রেনবো জেলি’-র সময়, সেই জায়গা থেকে আশাবাদী। আর এই প্রথম ছোটদের ছবিতে অনির্বাণ ভট্টাচার্য রয়েছেন, বটব্যাল স্যরের চরিত্রে।
এটাকে ছোটদের ছবি বলব? নাকি বড়দেরও?
... এটা সায়েন্স ফ্যান্টাসি ফিল্ম। বড়দের ছবিও বটেই। আমি মনে করি, দু’ধরনের ছবি হতে পারে। একটা বড়দের ছবি, আরেকটা ইউনিভার্সাল ছবি। সত্যজিৎ রায় যেমন বলেছিলেন, তিনি টাইম টু টাইম বাচ্চাদের ছবি করতে চান। সেজন্য ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’, ‘সোনার কেল্লা’ বা ‘হীরক রাজার দেশে’ করেছেন। আজকে তো বুঝতেই পারি, সেগুলো ইউনিভার্সাল ছবি। কিংবা জেমস ক্যামেরনের ‘অবতার’। ছোটদের ছবি আসলে ইউনিভার্সাল ছবি। আমাদের মধ্যেও ছোটবেলা থাকে, আমরা ফিরে যাই। এই ছবিটাও ইউনিভার্সাল ছবি, অবশ্যই বাচ্চারা তার কেন্দ্রীয় চরিত্রে। যেভাবে আমরা ‘খল’ দেখে অভ্যস্ত বড়দের ছবিতে তেমনভাবে নেই, কিন্তু একটু অন্য চোখে দেখা যাবে। বলব, খুব মজাদার অ্যাডভেঞ্চারাস ছবি।
ছবিটা করার নেপথ্য কারণ কী?
...সায়েন্স ফ্যাটান্সি এলিয়েন নিয়ে ছবি সচরাচর বাংলায় দেখা যায় না। আমার এই ছবি করার মূল কারণ হল, অনেক আগে সত্যজিৎ রায় এলিয়েন নিয়ে একটা ছবি করতে চেয়েছিলেন। নানা জটিলতায় ছবিটা হয়নি। তা নিয়ে ওঁর ক্ষোভ ছিল, যা আমরা জানি। হলিউড থেকে যেটা হওয়ার কথা ছিল। আমি আমার এই ছবিটা সত্যজিৎ রায়কে উৎসর্গ করেছি। ওঁর অনুরাগী হিসেবে আমার না পাওয়া, সত্যজিৎ চেয়েছিলেন এলিয়েন নেমে আসুক পোড়া বাংলায়। সিনেমার জন্য লেখা মৌলিক গল্পে এমন চেয়েছিলেন। এই জন্যই আমার দিক থেকে সত্যজিৎ রায়ের প্রতি এটা একশো বছরের ট্রিবিউট।
ছবিতে নিজে গান লিখেছেন এবং সুর দিয়েছেন। কতটা তৃপ্তি?
... খুবই ভালো লেগেছে। দু’বছর ধরে বাঁশি শিখছি। বাঁশিতে সুর করে, স্বরলিপি করে, পিয়ানোতে ফাইনাল নোটেশন করে তৈরি করেছি। এখন সবাই যে স্বরলিপি করে সুর করে না আমি জানতাম না। কেউ কেউ অবশ্য করে। নবারুণ (বোস) আমাকে অ্যারেঞ্জ করতে সাহায্য করেছে। কিন্তু নিজের কথায় সুর বসালাম এই প্রথম। নতুন অভিজ্ঞতা।
সাম্প্রতিককালে ‘অংক কি কঠিন’ হইহই করে চলছে। ‘দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা’ সুপারহিট। বা ‘সোনার কেল্লায় যকের ধন’ও ভালো চলছে। এগুলোর সবক’টা সঙ্গেই ছোটদের সংযোগ রয়েছে। এসব কি আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে?
...সামারে জেনারেল এরকম একটা ট্রেন্ড থাকে। এই সময় যদি একাধিক বাচ্চাদের ছবি চলে, নিশ্চয়ই একটা মিলিউ তৈরি হয়ে যায়, যা অবশ্যই একটা ভালো দিক।
