সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: বিত্তশালী ও প্রভাবশালী রাজু। কালো হীরের সৌজন্যে ‘উঁচুতে’ওঠা রাজু ঝা নিচুতলার কাউকে খালি হাতে ফেরাতেন না।
কনৌজ ব্রাহ্মণ, ধার্মিক রাজু ঝা কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির মানুষ হলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রকাশ্যে মেলামেশা করতেন না। এড়িয়ে চলতেন দিনের আলো। দুর্গাপুর, আসানসোল এলাকার বহু মানুষ তাঁর নাম শুনলেও তাঁকে চাক্ষুষ দেখেননি। কিন্তু তাঁর সঙ্গীদের মাধ্যমে নিরুপায় কেউ রাজু ঝায়ের কাছ পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে কাজ হত নিশ্চিত। মেয়ের বিয়ে, চিকিৎসা খরচের জন্যে তাঁর কাছে কেউ হাত পাতলে কাউকে খালি হাতে ফেরাতেন না রাজু। অকাতরে দান করেছেন ধার্মিক অনুষ্ঠান কিংবা মন্দির তৈরিতে। কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক রাজু ঝার কিন্তু কয়লা থেকে ‘কালো’রোজগার ছাড়া আর কোনো ‘নেশা’ ছিল না।
[আরও পড়ুন: রিষড়ায় নতুন করে অশান্তি নিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ শুভেন্দু, রাজ্যের রিপোর্ট চাইল আদালত]
দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাড়িতে মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে থাকেন। জেলায় থাকলে থাকতেন এই বিধাননগরের বাড়িতেই। এর বাইরে মহিলা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ কোনদিনই ওঠেনি রাজুর বিরুদ্ধে। কয়লার কালো কারবার থেকে ধীরে ধীরে নিজেকে ‘সমাজসেবী’ রূপ দিতেই রাজনীতিতে প্রবেশ। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রাজু বলেছিলেন, ‘‘আমাকে লোকে ভয় পায় মাফিয়া বলে। এই পরিচয় নিয়ে আমি বের হতে পারি না। কিন্তু মানুষ রাজু ঝা এমন নয়। আগেও লোকচক্ষুর আড়ালে বহু সমাজসেবামূলক কাজ করেছি। এবার সবার জন্য ভালো কিছু কাজ করতে চাই। দুর্গাপুরের জন্যে কিছু করতে চাই।’’
অন্ধকার জগতে নিরঙ্কুশ প্রতিপত্তি থাকলেও রাজনৈতিক জগতে পরিবারের আপত্তি সত্বেও যোগ দেন রাজু। দলের কাছে প্রত্যাখ্যাত হলেও দুর্গাপুরে তাঁর বিলাসবহুল হোটেলেই উঠতেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। এতে রাজুর দিল্লিস্তরে যোগাযোগ বাড়তে থাকে। কেন্দ্রীয়স্তরে সখ্যতা হওয়ায় অনেক বিজেপি নেতারও চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন রাজু। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা থেকে বাঁচতে বহু অন্ধকার জগতের লোক রাজুর উপর এই কারণেই ভরসা করেছিলেন। সেটাই শেষে ‘কাল’ হয়ে গেল না তো?