রাজকুমার, আলিপুরদুয়ার: শপিং মল থেকে চকোলেট (Chocolate) চুরির অপবাদ। বিল মিটিয়ে দেওয়ার পরও চকোলেট চুরির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল (Viral Video)হয়ে যায়। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পরিবারের অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar)জয়গাঁ। রবিবারের ঘটনার পর সোমবার শপিং মল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থানা ও মলের সামনে বিক্ষোভ দেখান পরিবারের সদস্যরা।
ভারত-ভুটান সীমান্তের জয়গাঁর (Jaigaon) নিউ সুভাষপল্লি এলাকার বাসিন্দা পূজা ঘোষ। ফালাকাটা কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। জানা গিয়েছে, রবিবার তিনি একটি শপিং মলে গিয়েছিল। সেখানে বিল করার সময় কর্তৃপক্ষ পূজার বিরুদ্ধে চকোলেট চুরির অভিযোগ তোলে। তার ব্যাগ থেকে উদ্ধার হয় চকোলেটের প্যাকেট। তখনই পূজার অভিভাবকরা সেই বিল মিটিয়ে দেন। অনুরোধ করা হয়, এই ঘটনা যেন জানাজানি না হয়। পূজা এবং তাঁর বাবা বারবার এই অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, এরপরও ওই শপিং মলের এক কর্মী সেই ভিডিও ভাইরাল করে দেন।
মল থেকে সন্ধেবেলা বাড়িতে ফেরেন পূজা। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারে, সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। এরপর আর স্থির থাকতে পারেননি পূজা। অপমানে ফাঁকা বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এনিয়ে রবিবার রাতেই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। এরপর সোমবার জয়গাঁ থানা ও ওই শপিং মলের সামনে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা। দাবি একটাই, এভাবে অপমানিত হয়ে পূজার আত্মহত্যার ঘটনায় যাদের হাত রয়েছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: দার্জিলিংয়ের পাহাড়ি পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, খাদে পড়ল যাত্রীবোঝাই গাড়ি, মৃত অন্তত ৩]
পূজার বাবা রতন ঘোষ কান্নাভেজা গলায় বলছেন, ”মেয়ে দোষ করেছিল চকোলেট চুরি করে। আমরা সেই বিল মিটিয়ে দিই। অনুরোধ করি ওঁদের যে এটা যেন জানাজানি না হয়। বিল তো মিটিয়েই দিয়েছিলাম। আমার কাছে সেই বিল আছে। কিন্তু আমরা ওখান থেকে বেরিয়ে আসার পরই জানতে পারি, ওই ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। কেন টাকা দিয়ে দেওয়ার পরও কেন এভাবে ভাইরাল করা হল? শপিং মলের কর্মীরাই এসব করেছে। আমার মেয়ে যে হারিয়ে গেল, তাকে আর কোথায় পাব?” মেয়ের এহেন পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী, তাদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: কেন ভাঙল গুজরাটের সেতু? চাঞ্চল্যকর দাবি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের]
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার (SP) ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। কে বা কারা ছবি ভাইরাল করল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই ঘটনায় ফালাকাটা (Falakata) কলেজের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ফালাকাটা কলেজের অধ্যক্ষ হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যর বলেন, “এভাবে একটি সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ ঝরে পড়ল। উঠতি বয়সের একটি ভুল করলেও তাকে ভুল শোধরানোর সুযোগ দিতে হত। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হল না। আমি এই ঘটনার নিন্দা করছি ও দোষীদের ধিক্কার জানাচ্ছি।”