জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে রীতিমতো মাস্টারস্ট্রোক দিয়ে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) লাগু করেছে কেন্দ্র। গত সোমবার তা লাগু হওয়ার পর মতুয়া গড়ে খুশির হাওয়া। এতদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে তাঁদের। নিঃশর্ত নাগরিকত্ব মিলবে এতদিনে। এদিকে, CAA বিরোধিতাও শুরু হয়ে গিয়েছে বিরোধী মহলে। রাজ্যের শাসকদল বরাবর এই আইনের ঘোর বিরোধী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে বার বার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করছেন। সম্প্রতি হাবরার জনসভা থেকেও তিনি নয়া আইন নিয়ে মতুয়াদের সাবধান করেছেন। আর তাতেই ক্ষুব্ধ মতুয়াদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী CAA নিয়ে উসকানি দিচ্ছেন। শনিবার গোপাল গোয়ালি নামে এক ব্যক্তি বাগদা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন।
গত সোমবার দেশজুড়ে চালু হয়ে গিয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। মঙ্গলবার থেকে কেন্দ্রের নির্দিষ্ট পোর্টালটিও সক্রিয়। ইতিমধ্যে পাকিস্তান (Pakistan)থেকে আসা বেশ ১৩ জন শরণার্থী তাতে আবেদন জানিয়ে নাগরিকত্ব পেয়েছেন। দেশের নানা প্রান্তে এনিয়ে উচ্ছ্বাস। তবে সিএএ কার্যকর হওয়া নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই৷ নয়া আইন লাগু হওয়ার পরদিনই উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamat Banerjee) প্রশাসনিক সভা। সেই সভা থেকে তিনি বলেন, “CAA-র কোনও স্বচ্ছতা নেই৷ এটা টোটাল ভাঁওতা৷ নির্বাচনের আগে এটা বিজেপির যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, জুমলাবাজি৷ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড থাকা সত্ত্বেও কেন কোনও ব্যক্তি আলাদ করে নাগরিকত্ব পেতে আবেদন জানাবেন? যাঁদের দরখাস্ত করতে বলা হচ্ছে, তাঁরা নাগরিক থাকা সত্ত্বেও আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গেই নাগরিকত্ব হারাবেন, অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন৷ এটা অধিকার কাড়ার খেলা৷ আবেদন করলে আর নাগরিকত্ব পাবেন কি না কোনও গ্যারান্টি নেই৷ সম্পত্তি হারাবেন। সরকারি প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হবেন৷”
[আরও পড়ুন: ‘ভোটের দিন সকাল থেকে রাস্তায় থাকব’, ‘হিংসা’ রুখতে কড়া দাওয়াই রাজ্যপালের]
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের কারণে রাজ্যে ঝামেলা, অশান্তি-দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি হবে, এমনই অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন বাগদার বাসিন্দা গোপাল গোয়ালি। মুখ্যমন্ত্রীর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। গোপালবাবুর অভিযোগ, ”CAA নিয়ে তিনি যা যা বলছেন, তা অসত্য। এইভাবে তিনি রাজ্যে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নন। আমরা চাই, তাঁর কড়া শাস্তি হোক।” একই দাবি বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের। তাঁর বক্তব্য, যিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন, তিনি ঠিক করেছেন। পালটা দিয়ে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার তৃণমূল সহ-সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ”যিনি এনিয়ে অভিযোগ দায়ের করছেন, তিনি কিছুই বোঝেননি। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছে সিএএ নিয়ে, তা একদম ঠিক।”
[আরও পড়ুন: প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পরিস্থিতি কেমন? চিনের মোকাবিলায় কতটা তৈরি ফৌজ? জানালেন সেনাপ্রধান]
অন্যদিকে, নিঃশর্তে নাগরিকত্বের দাবিতে গাইঘাটা থানার সামনে যশোর রোডের উপর টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধে নামে হরি গুরুচাঁদ মতুয়া ফাউন্ডেশন। প্রায় আধঘন্টা ধরে চলে অবরোধ। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় গাইঘাটা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। অবরোধকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। এর ফলে ব্যাপক যানজট হয় যশোর রোডে।
দেখুন ভিডিও: