ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা রাজ্য বিধানসভায়। রাজ্যপালের বাজেট ভাষণ নিয়ে আলোচনা বিধানসভায়। অথচ অধিবেশনের শুরুতে দেখা গেল, মাত্র তিনজন মন্ত্রী উপস্থিত। বাকি আর কেউ নেই। তা দেখেই খেপে যান কংগ্রেসের বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তাপস রায় দেরি করে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে মনোজ চক্রবর্তী তাঁর দিকে তেড়ে যান বলে অভিযোগ। দু’পক্ষের হাতাহাতি বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হয়। কোনওক্রমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। মন্ত্রীর আচরণের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলা হয় বিধায়কদের তরফে। তিনি তা না করায় ওয়াকআউট করে অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান বাম ও কংগ্রেস বিধায়করা।
মঙ্গলবার বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে রাজ্যপালের ভাষণ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হন কংগ্রেস, বাম বিধায়করা। সূত্রের খবর, শাসকদলের মন্ত্রীদের মধ্যে তখন হাজির হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু বসু এবং বিনয় বর্মণ। এই দৃশ্য দেখেই খেপে যান বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। তিনি জানতে চান, বাকি মন্ত্রীরা কোথায়? গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় কেন তাঁরা নেই?
[আরও পড়ুন: এনআরসি আতঙ্ক, জন্মের শংসাপত্র তুলতে কলকাতা পুরসভায় মুসলিমদের ভিড়]
এরই মাঝে মোবাইলে কথা বলতে বলতে বিধানসভায় ঢোকেন পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বরানগরের বিধায়ক তাপস রায়। মনোজ চক্রবর্তী তাঁকে বলেন, “তাপস তুমি পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রী। তাও এত দেরি?” অভিযোগ, এই প্রশ্নের পরই তাঁর দিকে তেড়ে যান কংগ্রেস বিধায়ক। তা নিয়েই গন্ডগোল বাঁধে। মনোজ চক্রবর্তীর অভিযোগ, “মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে মন্ত্রী ঢোকেন। আমিও মন্ত্রী ছিলাম, ভগবান হয়ে যাইনি। তাপসকে নিঃশর্তে ক্ষমা চাইতে হবে।” তাপস রায় পালটা অভিযোগের সুরে জানান, “আমার একটা জরুরি ফোন এসেছিল। স্পিকারের ঘর থেকে একসঙ্গে আসি। যে ভাষায় কথা বলা হয়, ওয়েলে নেমে তেড়ে আসা হয়, তা কাম্য নয়। প্রথমে হেসে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তেড়ে আসেন তিনি।” অভিযোগ, পালটা অভিযোগে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হয়। ফলতার বিধায়ক তমোনাশ ঘোষ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী স্পিকারের কাছে আবেদন জানান, “মনোজবাবু পরিষদীয় প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন তাঁর দেরি হল কেন? তাতেই কী প্রতিক্রিয়া, আপনারা দেখলেন। আমার মনে হয় স্পিকার, আপনি বলুন মন্ত্রীকে দুঃখ প্রকাশ করতে।” কিন্তু বিরোধী বিধায়কদের এই আবেদন রাখেননি মন্ত্রী তাপস রায়। তাতে প্রতিবাদ জানিয়ে অধিবেশন ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যান বাম ও কংগ্রেস বিধায়করা। পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে এরপর আসরে নামেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজের ঘরে ডেকে পাঠান মনোজ চক্রবর্তী, সুজন চক্রবর্তী, তাপস রায়কে। আলোচনার মধ্যে দিয়ে গন্ডগোল মিটিয়ে নিতে বলেন স্পিকার। শেষমেশ অধিবেশনে যোগ দেন বিরোধী বিধায়করা।
[আরও পড়ুন: চুরির তদন্তে জেরা চলাকালীন ব্যবসায়ীর মৃত্যু, থানায় ঢুকে তাণ্ডব পরিবারের]
তবে এদিনের ঘটনা বিধানসভার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন হয়ে রইল। এই ঘটনা মনে করিয়ে দিল বছর আট আগেকার একটি ঘটনার কথা। চিটফান্ড বিষয়ক আলোচনার দাবিতে সরব হয়েছিলেন বাম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা হেমব্রম। শাসকদলের বিধায়কদের দ্বারা প্রহৃত হতে হয় তাঁদের। মাথা ফেটে যায় গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের। আজকের ঘটনাও তারই পুনরাবৃত্তি। এ নিয়ে তুমুল তরজা শুরু রাজনৈতিক মহলে।
The post মন্ত্রীকে ধমক দিয়ে তেড়ে গেলেন বিধায়ক! নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা রাজ্য বিধানসভায় appeared first on Sangbad Pratidin.