গৌতম ব্রহ্ম: শরীর একটা। কিন্তু মাথা দু’টো। একটিতে প্রাণের স্পন্দন। অন্যটি নিথর। দু’টো পা। তিনটে হাত। তার একটিতে আবার দশ আঙুল।এমনই অদ্ভূত এক শিশু ভূমিষ্ঠ হল কলকাতার পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। দুই মাথাওয়ালা যে ‘অর্ধমৃত’ সদ্যোজাতকে নিয়ে তুঙ্গ টানাপোড়েনে পড়ে যান চিকিৎসকরা। কী বলা হবে একে, জীবিত, নাকি মৃত? ডেথ সার্টিফিকেটেই বা কী লেখা হবে?
চিকিৎসার অবশ্য কোনও ত্রুটি করেননি ন্যাশনালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা। এসএনসিইউ-তে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু জন্মের মিনিট চল্লিশ পরে সারা শরীর নিশ্চল হয়ে যায় বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। কার সন্তান?
[মহিলাকে স্তন্যদানে বাধা সাউথ সিটি মলে, পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমা চাইল কর্তৃপক্ষ]
প্রসূতির নাম ফরিদা পারভিন সরদার। বাড়ি বারুইপুরের রামনগর এক নম্বর পঞ্চায়েতে। দিন সাতেক আগে ফরিদার প্রসব বেদনা ওঠে। ন্যাশনালে নিয়ে আসা হয়। ভর্তি করা হয় স্ত্রীরোগ বিভাগের ইউনিট ছয়ের অধীনে। ইউএসজি করে জানা যায়, ফরিদার গর্ভে রয়েছে ‘কনজয়েনড টুইনস’ বা সংযুক্ত হয়ে থাকা যমজ সন্তান। বুধবার ডা. অর্ঘ্য মৈত্র ফরিদার সিজার করেন। ভূমিষ্ঠ হয় ওই বিস্ময় যমজ। স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান ডা. আরতি বিশ্বাস জানিয়েছেন, “এই ধরনের শিশু গর্ভে থাকলে মায়ের জীবনের ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়। আমরা তাই প্রথম থেকেই সতর্ক ছিলাম। শিশুটির শরীরে একাধিক ত্রুটি ছিল। চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। কিন্তু মা পুরোপুরি সুস্থ আছেন।” এদিন রাত পর্যন্ত শিশুটির মরদেহ ন্যাশনালেই ছিল। শিশুটির বাবা শহিদুল সরদার জানিয়েছেন, “হাসপাতাল চাইলে গবেষণার জন্য শিশুটিকে রেখে দিতে পারে। না হলে আমরা নিয়ম মেনে শেষকৃত্য করব।” শহিদুলের আক্ষেপ, ফরিদার আগে ইউএসজি হয়েছিল। কিন্তু, তাতে এই সমস্যা ধড়া পড়েনি। ওই ভুলের জেরে ফরিদার জীবন বিপন্ন হতে পারত। প্রসঙ্গত, এমন শিশু অতিবিরল। প্রতি ২ লক্ষ শিশুর মধ্যে এমন এক যমজের দেখা মেলে।
[মামার বাড়িতে ইঞ্জিনিয়ারের রহস্যমৃত্যু, উদ্ধার ঝুলন্ত দেহ]
যদিও ন্যাশনালের ডাক্তারবাবুরা ইউএসজি করে জেনে যান, ‘কনজয়েনড টুইন’-এর কথা। অর্ঘ্যবাবু জানিয়েছেন, এদিন দুপুর বারোটা ১৪ মিনিটে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হয়। তিনটি হাত, দু’টি পা, দু’টি মাথা। হার্টও সম্ভবত দু’টিই ছিল। কিন্তু, মাত্র একটির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। ওজন ছিল ৪.১ কেজি। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দেখা যায়, একটি মাথা নড়াচড়া করছে। বাকিটা নিথর। বুক-পেট-পা জোড়া। আগে একে গঙ্গা-যমুনা বলা হত। এক্ষেত্রে যমজের একটি ছেলে, একটি মেয়ে। কিন্তু কে বেঁচে ছিল তা বলা মুশকিল। এমন শিশু বেশিক্ষণ বাঁচে না। তবু আমরা এসএনসিইউ-তে নিয়ে গিয়ে শেষ চেষ্টা করেছিলাম। কিছুদিন বাঁচলে হয়তো সার্জারি করার প্রয়োজন হত।”
[আইএএস অফিসার সেজে বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে থানায় হাজির যুবক! তারপর…]
The post দুই মাথা, তিন হাত, বিস্ময় যমজ ভূমিষ্ঠ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে appeared first on Sangbad Pratidin.