সুকুমার সরকার, ঢাকা: সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে ষড়যন্ত্র। এমনটাই ইঙ্গিত বাংলাদেশের (Bangladesh) নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য আগুনে গোটা একটি লঞ্চ পুড়ে যাওয়ার ঘটনা বেনজির। তাই এর পেছনে কোনও রহস্য থাকতে পারে।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে জেহাদের ছায়া, এবার রোহিঙ্গা শিবিরে নিজস্ব মুদ্রা চালু করেছে জঙ্গি সংগঠন আরসা]
শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চ পরিদর্শন করেন নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী। তার আগে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান তিনি। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সংস্থা থেকে দেড় লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা জেলা প্রশাসন করবে। আগুনে গোটা একটি লঞ্চ পুড়ে যাওয়ার পেছনে কোনও রহস্য থাকতে পারে। কারণ, এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেনি। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি সরেজমিনে দেখলাম আমারও একটি ধারণা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা যাবে।”
উল্লেখ্য, দেশের দক্ষিণ জনপদের জেলা বরগুনার ঝালকাঠি সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪১ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। দগ্ধ হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক যাত্রী। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। লঞ্চটিতে সহস্রাধিক যাত্রী ছিলেন। ঝালকাঠি থানার নির্বাহী আধিকারিক আগুন দেখে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে ৭০ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। বাকিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। দগ্ধ ৭২ জনের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা।
এমভি অভিযান যাত্রীবাহী লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার নৌপরিবহণ মন্ত্রকের সাত সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লুটিএ)। লঞ্চটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠি উপজেলার সুগন্ধা নদীর দপদপিয়া এলাকায় পৌঁছলে রাত ৩টে নাগাদ ইঞ্জিন কক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে লঞ্চটি সদর উপজেলার দিয়াকুল এলাকায় গিয়ে নদীর তীরে নোঙর করে। স্থানীয় নৌকার মাঝিরা এগিয়ে গিয়ে লঞ্চ ও নদী থেকে বেশ কিছু যাত্রীকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শুক্রবার ভোর ৪টে নাগাদ বেতাগি উপজেলার লঞ্চ টার্মিনাল শত শত স্বজনের হাহাকারে ভারী হয়ে উঠেছিল। স্বজনদের কাছ থেকে ফোন নম্বর নিয়ে লঞ্চে থাকা একাধিক যাত্রীকে ফোন করা হলেও অনেকেই তা রিসিভ করেননি। ওই লঞ্চের যাত্রী রুণু বেগম তাঁর এক স্বজনকে জানান, “পুরো লঞ্চে আগুন জ্বলছে। আমাদের বাঁচাও।” এই কথা বলার পরেই তাঁর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আরেক যাত্রী মহসিন বলেন, “রাত ২টোর সময় হঠাৎ নিচ থেকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখি। আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যাই।” ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। আগুনের তাপে ঘুম ভেঙে দেখি পুরো লঞ্চটিতে আগুন ধরে গিয়েছে। তখন নদীতে ঝাঁপ দিই।”
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত দগ্ধ ৭২ জনকে বরিশাল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। কয়েকজনের শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গিয়েছে। আরও বেশ কয়েকজনের ৫০ ভাগ পুড়েছে। ৫০ থেকে ৮০ ভাগ দগ্ধ ২০ জনের মতো রোগী রয়েছেন। তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।