কৃষ্ণকুমার দাস: লকডাউনের পাশাপাশি ১৪৪ ধারা জারি করে ধর্মীয় রীতি ও আচার মেনেই মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের রথের নির্মাণ শুরু হল পুরীতে। পাশাপাশি শনিবার সম্পূর্ণ হল চন্দনযাত্রাও। কোভিড সংক্রমণ রুখতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে গতবছরের রথযাত্রার মতো এদিনও ভক্তহীন চন্দনযাত্রা সম্পন্ন হল নীলাচলে। নীলমাধবের প্রতিনিধি হয়ে মন্দির থেকে সরোবরে গিয়ে নৌকাবিহার সেরে ফিরে এলেন মদনমোহন।
করোনার (Coronavirus) সংক্রমণের জেরে গতবছর মন্দিরের ভিতরেই চন্দনযাত্রা হলেও এবার কিন্তু লকডাউন (Lockdown) সত্ত্বেও দেড় কিমি দূরের ইন্দ্রদ্যুম্ন সরোবরে হয়েছে দেবতার নৌকাবিহার। অনেকে এই সরোবরকে চন্দন পুষ্করণী নামেও তীর্থের মর্যাদা দেন। এদিন পৌরানিক রীতি মেনে মহাপ্রভুর প্রতিনিধি হয়ে মন্দির থেকে মদনমোহন শোভযাত্রা করে রাজকীয় দোলায় চেপে পৌঁছে গিয়েছিলেন ইন্দ্রদ্যুম্ন সরোবরে। সঙ্গে ছিলেন মন্দির থেকে যাওয়া পঞ্চপাণ্ডবও। সন্ধেয় স্নান পর্ব সেরে রাত ন’টায় ফের মন্দিরে ফিরে আসেন মদনমোহন। কিন্তু এই পঞ্চপাণ্ডবই টানা ২১দিন মদনমোহনের ওই নৌকাবিহার করবেন বলে সেবায়েতরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, ওড়িশা পঞ্জিকার নিয়ম মেনে এদিনই ছিল অক্ষয় তৃতীয়া। বস্তুত সেই কারণে এদিন থেকেই রাজপুরোহিত ও মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েতদের উপস্থিতিতে শুরু হল রথের নির্মাণ। মন্দির পরিচালন সমিতির প্রবীণ সদস্য নীলকণ্ঠ মহাপাত্র জানিয়েছেন, “চন্দনযাত্রা ও রথের নির্মাণ, দুই অনুষ্ঠানেই পৌরাণিক ধর্মীয় আচার-রীতির পাশাপাশি কোভিড বিধিও কঠোরভাবে মানা হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: ফের কমল দৈনিক সংক্রমণ, দেশে একদিনে করোনাজয়ী সাড়ে তিন লক্ষের বেশি]
সুপ্রিম কোর্টের গাইড লাইন মেনে গতবছরের মতো এবারও কোভিডবিধি মেনে ভক্তহীন রথযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরীর মন্দিরের অন্যতম প্রবীণ সেবায়েত জগন্নাথ দৈত্যাপতি। তাঁর কথায়, “মহাপ্রভু গতবার লকডাউন না থাকা সত্ত্বেও ইন্দ্রদ্যুম্ন সরোবরে গিয়ে নৌকাবিহার করতে চাননি। এবার তিনি লকডাউন ও ১৪৪ ধারা নিয়েও চন্দন পুষ্করণীতে গেলেন। সবই মহাপ্রভু জগন্নাথ দেবের ইচ্ছা ও নির্দেশে হচ্ছে।” পৌরানিক রীতি মেনে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা শুরুর সূচনা পর্ব হিসাবে বহু বছর ধরে পুরীতে ইন্দ্রদ্যুম্ন সরোবরে চন্দনযাত্রা হয়ে আসছে বলে মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েতরা বলছেন। তবে এবছর আগামী ১২ জুলাই রথযাত্রা হওয়ার কথা থাকলেও জগন্নাথ ভক্তরা আদৌ আসতে পারবেন কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে পুরীর প্রশাসকদের।
প্রায় পাঁচশো বছর ধরে চলে আসা পুরীর মন্দিরের রথযাত্রার তিন রথের নির্মাণ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই। কিন্তু এবছর পুরী-সহ গোটা ওড়িশায় লকডাউন চলছে। স্বভাবতই আশঙ্কা ছিল আদৌ চন্দনযাত্রা ও রথনির্মাণ শুরু হবে কি না। কারণ, কোভিড সংক্রমণ রুখতে গতবছর চন্দনযাত্রা মন্দিরের ভিতরেই হয়েছিল। কিন্তু এবছর ভক্তহীন চন্দনযাত্রাও সম্পূর্ণ হল। পুরীর মন্দিরের প্রশাসক কৃষাণ কুমার জানিয়েছেন, “যাঁরা রথ নির্মাণের কাজে অংশ নিচ্ছেন ও চন্দনযাত্রায় পুজো-অর্চনায় যুক্ত ছিলেন সকলকেই টিকার দুটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। তেমনই গতকালই সবার আরটিপিসিআর পরীক্ষা করে রিপোর্ট পাওয়ার পরেই সেবায়েতদেরও মহাপ্রভুর আরাধনায় যুক্ত হওয়ার অনুমতি মিলেছে।” আসলে গত বছর বেশ কয়েকজন সেবায়েত ও প্রবীণ পরিচালন সমিতির সদস্য করোনায় মারা যাওয়ার পর থেকেই সবাই খুবই সতর্ক।
দেখুন ভিডিও: