কলহার মুখোপাধ্যায়: পাগলা গারদে মা কালীর আরাধনা! মণ্ডপে এমন থিম ভাবনা ফুটিয়ে তুলেই বিতর্কে জড়াল রাজারহাট নারায়ণপুরের সবুজ সংঘ ক্লাব। এই থিম ভাবনায় মানসিক ভাবে অসুস্থ রোগীদের প্রতি অসংবেদনশীল আচরণ। যা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবেই ক্লাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তবে পুজো উদ্যোক্তাদের পালটা দাবি, সচেতনতার বার্তা দিতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সবুজ সংঘ ক্লাবে শ্যামাপুজোয় (Kali Puja) এবারের থিম পাগলা গারদে মায়ের আরাধনা। তা কী সামাজিক সচেতনতার বার্তা রয়েছে এই সৃজন ভাবনায়? উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়েছে, রাস্তাঘাটে অনেক সময় মানসিক অসুস্থ মানুষজনকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সমাজে তাঁরা অবহেলিত। তাঁদের হাসপাতালে কিংবা নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ সচরাচর কেউই নেন না। তাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার বদলে এড়িয়েই চলারই চেষ্টা করেন। ফলে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হন অনেকেই। অবহেলা না করে যদি হাসপাতালে তাঁদের পৌঁছে দেওয়া যায়, তবে তাঁরা আবার সুস্থ জীবন ফিরতে পারবেন। এই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সবুজ সংঘ ক্লাব।
[আরও পড়ুন: চিংড়িহাটায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, পরপর ছয় পথচারীকে পিষল বেপরোয়া গাড়ি, মৃত এক]
গোটা মণ্ডপে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। সেখানে মানসিক ভারসাম্যহীনদের চরিত্রে অভিনয় করছেন অনেকে। কেউ মোবাইল গেম খেলে পাগল তো কেউ এনআরসির জন্য কাগজপত্র জোগাড় করতে গিয়ে। পাগলা গারদ দেখতে ভিড়ও জমিয়েছেন দর্শনার্থীরা। তুলছেন ছবি। কিন্তু থিমের খবর ছড়িয়ে পড়তেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। এমন থিম একেবারেই পছন্দ হয়নি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার। পুজো উদ্যোক্তাদের তাঁরা বেশ কিছু চরিত্র বাদ দিতে বলেছেন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক, তা বাদ দেওয়া হবে।
তবে পুজো উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিধায়ক তথা এই পুজোর পৃষ্ঠপোষক তাপস চট্টোপাধ্যায়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে একহাত নিয়ে তিনি বলে দেন, “যারা পুজো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তারা সমাজের কী কাজ করেছে? এই মণ্ডপে মানসিক রোগীদের চিকিৎসার দিকটিই তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমাতেও তো মানসিক ভারসাম্যহীনের ভূমিকায় দেখা যায় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। তাহলে তো সেটাও করা যাবে না। সুতরাং এ সব বিতর্কের মানে হয় না। যদি মনে হয় আদালতে যেতে হবে, আমরা তার জন্যও প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, চলতি বছর দুর্গাপুজোয় দমদম পার্ক ভারতচক্রের থিমে কৃষক আন্দোলনকে তুলে ধরা হয়েছিল। সেই মণ্ডপে জুতো ব্যবহার করা নিয়ে তৈরি হয়েছিল তুমুল বিতর্ক। জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। যদিও শেষমেশ পুজো উদ্যোক্তাদের পক্ষেই রায় যায়। এবার কালীপুজোতেও শিরোনামে ‘থিম বিতর্ক’।