অভিরূপ দাস: ট্যাবলেট নয়, প্রিয় মানুষটার কন্ঠ কাজে লাগছে কোভিড (COVID) পরবর্তী চিকিৎসায়। কোভিড নেগেটিভ হলেও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আচ্ছন্ন হয়ে থাকছেন অনেকেই। এই কোষ যদি অস্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে আচ্ছন্নভাব কাটাতে পারে প্রিয়জনের চেনা গলা। বাংলার অভিনেতা থেকে অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, দুজনের চিকিৎসাতেই ব্যবহার হয়েছে এই জিনিস। চিকিৎসকরা যাকে বলছেন, অডিটরি স্টিমুলেশন (Auditory stimulation)। সুস্থ অবস্থায় যা অন্যরকম অনুভূতি দিত, তাই ফিরিয়ে আনতে পারে ঘুমের দেশ থেকে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (Soumitra Chatterjee) এবং তরুণ গগৈ। দুজনের চিকিৎসাতেই কাজে লেগেছিল এমন কন্ঠস্বর। কার? সৌমিত্রর ক্ষেত্রে তাঁর কন্যা পৌলমীর গলা ব্যবহার করেছিলেন চিকিৎসকরা। তরুণ গগৈর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়েছিল দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর গলা। শেষরক্ষা হয়নি যদিও। শহরের নিউরো সার্জন অমিতকুমার ঘোষের কথায়, মস্তিষ্কের কোষ অস্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেই কাজে আসে প্রিয় মানুষের কন্ঠ। চেনা কন্ঠে মস্তিষ্কের রিসেপটরগুলো স্টিমুলেটেড হয়। যে নার্ভ অস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠে। কিন্তু নার্ভ পাকাপাকি নষ্ট হয়ে গেলে ঘুম ভাঙবে না আর। মস্তিষ্কের কোষ যে অসাড় তা পরীক্ষা করে টের পান চিকিৎসকরা। কিন্তু স্থায়ী না অস্থায়ী ভাবে তা বোঝার উপায় নেই। তাই শেষ চেষ্টা করতে ব্যবহার হচ্ছে এই ভয়েস থেরাপি।
[আরও পড়ুন: ৯০% কার্যকরী হতে পারে তাদের করোনা ভ্যাকসিন, তৃতীয় দফা ট্রায়ালের পর দাবি অক্সফোর্ডের]
কোভিড সেরে গেলেও গ্রাস করছে আচ্ছন্নতা। চিকিৎসকরা একে বলছেন, ইমিউন মেডিয়েটর ড্যামেজ। “কোভিড ভাইরাস যতদিন শরীরে ছিল ততদিন তারা শরীরটাকে পরিবর্তন করছে। ভাইরাস অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে সেগুলো শরীরের সাধারণ সেলকে আক্রমণ করছে। বাদ যাচ্ছে না মস্তিষ্কের কোষও। তাতেই আচমকা নেমে আসছে আচ্ছন্নতা।” জানিয়েছেন প্রখ্যাত নিউরো সার্জন অমিতকুমার ঘোষ। বিশেষ করে ষাট পেরনোদের নিয়েই চিন্তায় চিকিৎসকরা। বুড়োদের চিকিৎসার প্রয়োজনে এখনই নাতি-নাতনির গলা রেকর্ড করে রাখতে বলছেন তাঁরা।
ডাঃ ঘোষের কথায়, সারাদিন নাতনির সঙ্গে থাকতো দাদু। দাদুর মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই নাতনির গলাই দাদুর মস্তিষ্কে আলফা ও থিটা তরঙ্গ উৎপন্ন করবে। শুধু বাড়ির সদস্য নয় অনেকের ক্ষেত্রে তাঁর আইডল কিম্বা রোল মডেলের কন্ঠও কাজে আসতে পারে। কিন্তু কীভাবে কাজ করছে চেনা-প্রিয় কন্ঠ? চিকিৎসকদের ব্যখ্যায়, মস্তিষ্কে নিউরন থাকে। যা সিন্যাপসিসের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। যে কোনও তথ্য মস্তিষ্কে ইলেকট্রিক্যাল ইমপালসে পরিণত হয়ে সিন্যাপসিসের মাধ্যমে বাহিত হয়। তথ্যের উপর যত মনোযোগ দেওয়া হয়, ইমপালস তত শক্তিশালী হয় ও নিউরোনের মধ্যে যোগাযোগ তত জোরালো হয়। চেনা কন্ঠ শোনার পর মস্তিষ্কে আলফা ও থিটা তরঙ্গ উৎপন্ন হচ্ছে। যা পুরনো স্মৃতি মনে করতে সাহায্য করছে। এভাবেই কাটে কোমা স্টেজ।