অর্ণব আইচ: ট্রাফিক আইন ভেঙেছিল ট্যাক্সিটি। লাল সিগন্যাল না মেনে গাড়িটি এগিয়ে গিয়েছিল। আর ট্রাফিক মামলা করতে গিয়েই ট্যাক্সির ভিতর থেকে সন্দেহজনক গন্ধটা নাকে এসে লেগেছিল ট্রাফিক সার্জেন্টের। আর সেই সন্দেহই প্রাণ বাঁচাল শ’দুয়েক কচ্ছপের। উত্তরপ্রদেশ থেকে উত্তর ২৪ পরগনায় পাচার হওয়ার আগেই ট্যাক্সির ভিতর থেকে ২০১টি কচ্ছপ উদ্ধার করল উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার ট্রাফিক গার্ড। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা দুই পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে শ্যামপুকুর থানার পুলিশ। উদ্ধার হওয়া বিরল প্রজাতির কচ্ছপগুলি তুলে দেওয়া হয়েছে বন দপ্তরের হাতে।
পুলিশ ও বন দপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে উত্তরপ্রদেশ কচ্ছপ পাচারের হাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বছরই উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে ওই রাজ্যের পুলিশ ও বন দপ্তর প্রায় ৮০০টি বিভিন্ন ধরনের কচ্ছপ উদ্ধার করে। পাচারকারীরা এই রাজ্য ও নেপাল হয়ে বাংলাদেশ, চিন, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় কচ্ছপ পাচার করে বলে খবর। ওই দেশগুলিতে খাবার হিসাবে ভারতীয় কচ্ছপের বিপুল চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়াও চিন-সহ কয়েকটি জায়গায় কচ্ছপের খোল ও শরীরের অন্যান্য অংশ দিয়ে ‘ওষুধ’ তৈরি হয়। আবার কিছু জাতের কচ্ছপ বিদেশে পোষ্য হিসাবেও কেনাবেচা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে শ্যামবাজারের মোড়ের কাছে ডিউটি করছিলেন শ্যামপুকুর ট্রাফিক গার্ডের এক সার্জেন্ট। একটি ট্যাক্সি খুবই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে লাল সিগন্যাল ভেঙে এগিয়ে যায়। নাইট ডিউটিতে থাকা ওই সার্জেন্ট ও কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা দৌড়ে গিয়ে ট্যাক্সিটিকে থামান। তাঁরা গাড়িটির বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের মামলা করতে যান। আর তখনই ট্রাফিক সার্জেন্ট ও পুলিশকর্মীদের নাকে আসে ‘সন্দেহজনক’ গন্ধ। কোনও জলজ প্রাণী গাড়ির ভিতর রয়েছে বলে সন্দেহ হয় তাঁদের। তাঁরা গাড়ির ভিতর দুই আরোহীকে দেখতে পান। তাদের সঙ্গে ছিল দু’টি চোট ব্যাগ। পুলিশ ট্যাক্সির ডিকি খুলতে বলে। দেখা যায়, ভিতরে দু’টি বড়মাপের বস্তা। সেই বস্তা খুলতেই বেরিয়ে আসে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ। সেগুলি উদ্ধার করে ট্রাফিক পুলিশ শ্যামপুকুর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। দুই আরোহী বাবুলাল কাঞ্জার ও রাকেশ কাঞ্জারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে, তারা উত্তরপ্রদেশ থেকে ট্রেনে করে হাওড়ায় নামে। হাওড়া স্টেশনের বাইরে থেকে প্রি পেড বুথ থেকে ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার ইচ্ছাপুরের দিকে যাচ্ছিল। সেখানেই রয়েছে পাচারকারীদের এজেন্টরা। তাদের হাতে ওই কচ্ছপগুলি তুলে নিয়ে টাকার হিসাব বুঝে ফের উত্তরপ্রদেশে ফিরে যাওয়ার ছক কষেছিল দু’জন।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত, উত্তরপ্রদেশের এটাওয়াহ, বারাণসী, ফিরোজাবাদ, গোন্ডা-সহ বেশ কিছু জায়গার নদী ও জলাভূমি থেকে কচ্ছপ ধরেন মৎস্যজীবীরা। তাঁদের কাছ থেকে ওই বন্যপ্রাণ কিনে নেয় পাচারকারীরা। তারাই বস্তাবন্দি করে ট্রেন অথবা সড়কপথে সেগুলি পাচার করে। তার জন্য বিভিন্ন রাজ্য ও বিদেশেও রয়েছে এজেন্টরা। এই পাচারের সময় বেশ কিছু কচ্ছপের মৃত্যুও হয়। শ্যামপুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া কচ্ছপগুলি বিভিন্ন জলায় ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে বন দপ্তর ও পুলিশ।
