অর্ণব আইচ: গভীর রাতে মধ্য কলকাতার বউবাজারের (Bowbazar) গনেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের একটি বহুতলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। ভস্মীভূত আটতলা আবাসনটির বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কীভাবে আগুন, তা জানতে শনিবার ঘটনাস্থলে যাবে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। জানা গিয়েছে, রাতে আগুন নেভানো সম্ভব হলেও সকাল থেকে ফের ধোঁয়া বের হতে দেখা যায় বাড়িটি থেকে।
শুক্রবার রাতে একতলায় মিটার ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত। ক্রমে আটতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায় লেলিহান শিখা। গভীররাতে এই ঘটনা ঘটায়, অধিকাংশ বাসিন্দারা সেই সময় ঘরেই ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি টের পেয়ে আতঙ্কে ছাদে উঠে যান অনেকে। এর মধ্যে ১৪ বছরের এক কিশোর স্রেফ ভয়ে ৬ তলা থেকে ঝাঁপ দেয় নিচে। রাতেই তাকে হাসপাতাল ভরতি করা হলে কিছুক্ষণের মধ্যে নাবালকের মৃত্যু হয়। সাততলার একটি ফ্ল্যাটের শৌচাগারে আটকে পড়েছিলেন এক বৃদ্ধা। ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁরও। মধ্যরাতের মধ্যে দমকল ও পুলিশের ডিএমজির ততপরতায় উদ্ধার কাজ শেষ হলেও স্থানীয়দের আশঙ্কা, মৃত্যু আরও বাড়তে পারে। এদিন ঘটনাস্থলে যান দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। তিনি জানান, পুরনো এই বহুতলটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি রয়েছে। ফলে দমকলের কাজ করতে অসুবিধা হয়। ৫৫ মিটার হাইড্রোলিক ল্যাডারের সাহায্যে বাসিন্দাদের উদ্ধার করা হয়।
[আরও পড়ুন: ‘উৎসবের আবেগ নিয়ে খেলছে সরকার’, অনুদান ইস্যুতে মমতাকে বিঁধলেন সুজন-দিলীপ]
পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ আটতলা বাড়িটির একতলায় মিটার ঘরে আগুন লাগে। ধোঁয়া দেখতে পান ওই আবাসন ও এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরাই দমকলে খবর দেন। মুহূর্তের মধ্যে একতলার মিটার ঘরটি সম্পূর্ণ জ্বলতে শুরু করে। দূর থেকে দেখা যায় আগুন। কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। মূলত এক তলায় আগুন লাগার ফলেই সিঁড়ি দিয়ে বাসিন্দারা নেমে আসতে পারেননি। জানা গিয়েছে, প্রায় ৬০টি পরিবার থাকে বাড়িতে। বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় দু’শো জন। একতলা থেকে বৈদ্যুতিক তার বেয়ে আগুন ক্রমশ উপরে উঠতে থাকে। ক্রমে আটতলায় ধরে যায় আগুন। বাড়ির বাসিন্দারা ভিতরে আটকে পড়েন। খবর পেয়ে একে একে দমকলের দশটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। শুরু হয় উদ্ধার কাজ। বেশি সমস্যায় পড়তে হয় সাত ও আটতলার বাসিন্দারা। নিচ থেকে অত উঁচুতে দমকলের জল দিতে অসুবিধা হয়। তার ফলে ওই দুটি তলায় আগুন ক্রমশ বাড়তে থাকে। বাসিন্দারা ছাদে উঠে যান ভয়ে। দমকল ও ডিএমজি পাশের ছাদ থেকে তাঁদের উদ্ধার করতে শুরু করেন। অন্যদিকে, হাইড্রোলিক সিঁড়ি দিয়ে দমকল অনেককে নামিয়ে আনে।
দমকল ক্রমাগত জল দিয়ে বাড়িটি ঠান্ডা করে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর আগুন আয়ত্তে আসে। জানা গিয়েছে, আবাসনটিতে প্রবেশ ও বাইরের জন্য একটি মাত্র গেট রয়েছে। পুরনো বাড়িটিতে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না বলেই অভিযোগ। দমকলের মতে, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। বাড়ির বাসিন্দাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বহু বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের ফ্ল্যাট সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। অনেকের ঘরের ভিতরে ছিলো টাকা, গয়না, জামা কাপড় ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিস। ছাত্রছাত্রীদের ছিল বই খাতা। কিন্তু কেউই প্রায় কিছু নিয়ে বের হতে পারেননি। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কী থেকে আগুন? আদৌ কি অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল? তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ছবি: পিন্টু প্রধান