চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: অবশেষে হলদিয়ার (Haldia Municipality) প্রাক্তন পুরপ্রধান শ্যামল আদকের নামে হুলিয়া জারি করল মহকুমা আদলত। সেই নোটিস ইতিমধ্যে প্রাক্তন পুরপ্রধানের হলদিয়ার আজাদ হিন্দনগর এবং কলকাতার রিজেন্ট পার্কের বাড়িতে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে হলদিয়া আদালত চত্বর, পুরসভা দপ্তর, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ চত্বর, হলদিয়া-নন্দীগ্রাম ফেরিঘাট, কুকড়াহাটি ফেরিঘাট, হলদিয়ার সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডেও সাঁটানো হয়েছে এই হুলিয়া জারির নোটিস। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হলদিয়ায়।
হলদিয়া পুরসভায় চেয়ারম্যান থাকাকালীন শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ শোনা গিয়েছে। তবে চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর হলদিয়ার আজাদ হিন্দনগরের এক নির্মাণ সংস্থার মালিক অরুণাংশু মুখোপাধ্যায় জালিয়াতির অভিযোগ তুলে স্থানীয় ভবানীপুর থানায় এফআইআর করেন। তাঁর সংস্থার নাম এবং তাঁর সই জাল করে শ্যামল আদক তাঁর নিজের কোম্পানির নামে ৮৬ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা মূল্যের ক্রেডেনসিয়াল তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে বহু টেন্ডার দুর্নীতির তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, কয়েক কোটি টাকার অনিয়মের ঘটনা। ইতিমধ্যে পুরসভার টেন্ডার সংক্রান্ত দেড় হাজার ফাইল পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। সেই ঘটনায় ২ অক্টোবর হলদিয়া আদালত গ্রেপ্তার পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝেই তার আগে গা-ঢাকা দেন শ্যামল।
[আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় এবার তৃণমূলের তারকা বিধায়ক অদিতি মুন্সির স্বামীকে তলব CBIয়ের]
তবে দিল্লি বিমানবন্দরে নিরাপত্তারক্ষী বেষ্টিত হয়ে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। সেই মতো হলদিয়া পুলিশের একটি দল দিল্লিতে হানা দেয়। জানা গিয়েছে, তিনি দিল্লিতে কোনও এক সাংসদদের বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন। দিল্লি পুলিশ সহযোগিতা না করার ফলে অভিযুক্তকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। জানান পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে। দিল্লির পাশাপাশি হলদিয়ায় তদন্তের কাজ চলতে থাকে। ইতিমধ্যে প্রাক্তন পুরপ্রধানের সময়কালীন পুরসভার টেন্ডার কমিটির চেয়ারম্যান সত্যব্রত দাস, কাউন্সিলর নারায়ণচন্দ্র প্রামাণিক এবং অর্থদপ্তরের দায়িত্বে থাকা বিকাশ জানাকে থানায় তলব করেছে পুলিশ। কিন্তু সত্যব্রত দাস তদন্তে অসহযোগিতা করছেন। সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না বলে পুলিশের অভিযোগ। সেই সঙ্গে পুরসভার ১৬ জন কর্মীকেও পুলিশ জেরা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে সোমবার হুলিয়া জারি করল হলদিয়া আদালত। যা হলদিয়া পুরসভার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
হলদিয়ার এসডিপিও রাহুল পাণ্ডে জানান, “শ্যামল আদকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট রয়েছে, উনি জানেন। পুলিশকে এড়িয়ে চলেছেন। তাই এবার হলদিয়া আদালত সরাসরি আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য হুলিয়া জারি করল।” আদালতের নির্দেশ আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে তিনি আদালতে সশরীরে হাজিরা দেবেন। প্রাক্তন পুরপ্রধানের আত্মগোপন বিষয় টেনে জোর চর্চা চলছে হলদিয়ায়। তিনি ছদ্মবেশে বিদেশেও চলে যেতে পারেন বলে অনেকের ধারণা। যদিও সেই যুক্তি সমর্থন করছেন না পুলিশ কর্তারা। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা জানি শ্যামলবাবুর পাসপোর্ট নেই। বিদেশে যাওয়া ওঁর পক্ষে মুশকিল। তবুও সে ভাবনা থেকে সমস্ত সীমান্ত এবং বিমানবন্দরে আমাদের নজরদারি রয়েছে।”