গৌতম ব্রহ্ম: সার্স-মার্সের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির মেয়াদ এক বছরেরও বেশি।
করোনার ক্ষেত্রে? কোভিডজয়ীদের ইমিউনিটি (Immunity) পাসপোর্টের আয়ু বড়জোর দু’ থেকে তিন মাস! উপসর্গহীন (Asymptomatic) হলে আরও কম! অতএব, একবার করোনা (Corona) হয়ে গিয়েছে বলে আর হবে না, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। ভাইরাস দ্বিতীয়বারের জন্য ছোবল মারতেই পারে। করোনাজয়ীদের উপর সমীক্ষা চালানোর পর একদল চিনা (China) গবেষক এমনই দাবি করেছে।
গবেষকদলটি চিনের ২৭ থেকে ৬৬ বছর বয়সি ৩৭ জন করোনাজয়ীর আইজিজি অ্যান্টিবডি (Antibody) মেপেছে। দেখা গিয়েছে, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি মাত্র ২-৩ মাস স্থায়ী হচ্ছে। অর্থাৎ, এই সময়কালের পর অ্যান্টিবডির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর থাকছে না। ফলে, ফের কোভিড হতে পারে করোনাজয়ীদের।
[আরও পড়ুন : শুধু ভারত নয়, লাদাখ সমস্যা মেটাতে চিনকেও ‘সাহায্য’ করবেন ট্রাম্প]
সার্স ও মার্সের ক্ষেত্রে অবশ্য অ্যান্টিবডির মেয়াদ এক বছরেরও বেশি ছিল। উপসর্গহীন মানুষদের ক্ষেত্রে রক্তে উপস্থিত অ্যান্টিবডি লক্ষণযুক্ত রোগীদের তুলনায় অনেক আগে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এমনই দাবি করা হয়েছে ‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে সদ্যপ্রকাশিত গবেষণাপত্রে। গবেষকদলটির বেশিরভাগ সদস্যই ‘চং কিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’র ‘ল্যাবরেটরি অফ মলিকিউলার বায়োলজি অন ইনফেকশাস ডিজিজেস’-এর বিজ্ঞানী। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই ৩৭ জন করোনাজয়ীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর আরও আট সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা গিয়েছে, ৮১ শতাংশ উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তের অ্যান্টিবডির প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তুলনায় লক্ষণযুক্ত করোনা রোগীর অবস্থা ভাল। মাত্র ৬২ শতাংশের অ্যান্টিবডির প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে। চিনা বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ, করোনা সংক্রমণ কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার ১২ মাসের মধ্যেই ৭৫ শতাংশ আক্রান্তের শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা ও মেয়াদ কমে যায়।
[আরও পড়ুন : অক্সফোর্ড থেকে স্নাতক হলেন মালালা ইউসুফজাই, সেলিব্রেশনের ছবি পোস্ট নোবেলজয়ীর]
যদিও ‘স্যাম্পল সাইজ’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। কারণ, মাত্র ৩৭ জন রোগীর আইজিজি অ্যান্টিবডি নিয়ে পরীক্ষাটি চালানো হয়। ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, এই নিরীক্ষা থেকে বোঝা যাচ্ছে, করোনাজয়ীদের তিন মাস পর ফের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মণহীন রোগীর ক্ষেত্রে কেন অ্যান্টিবডি কম, তার কোনও সঠিক ব্যাখ্যা গবেষকরা দেননি। অথচ উল্টোটাই হওয়ার কথা ছিল। উপসর্গহীনদের রক্তে অ্যান্টিবডির মাত্রা বেশি হওয়াই ছিল দস্তুর।
আরও একটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভাইরোলজিস্টরা। তাঁদের পর্যবেক্ষণ, এই গবেষণা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। বিশ্বের অন্যপ্রান্তে যতক্ষণ না গবেষণা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। সিদ্ধার্থবাবুর পরামর্শ, ভারতে যেহেতু সেরোসার্ভে শুরু হয়েছে তাই এই বিষয়টিকেও মাথায় রাখা উচিত।
The post অ্যান্টিবডির আয়ু মাত্র তিনমাস! করোনাজয়ীরা সংক্রমিত হতে পারেন আবারও appeared first on Sangbad Pratidin.