অভিরূপ দাস: গত জুনে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, ‘‘করোনা (Coronavirus) চিকিৎসার নামে বেসরকারি হাসপাতালগুলি মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিচ্ছে। এত টাকা তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।’’ পাঁচ মাস পরেও সে চিত্র যে এতটুকু বদলায়নি তার প্রমাণ মিলছে রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের অভিযোগের বাক্স খতিয়ে দেখলেই।
সোমবার ফের শহরের দুই বেসরকারি হাসপাতালকে চিকিৎসার বিল বাবদ নেওয়া টাকা থেকে মোটা অংশ ফেরতের নির্দেশ দিল কমিশন। কোভিড নিয়ে রুবি হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন স্বপন সুর (৬০)। গত ২৬ আগস্ট করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর মাত্র ১০ দিন বেঁচেছিলেন তিনি। ৫ সেপ্টেম্বর মারা যান। কিন্তু শোকপ্রকাশ করবেন কি, মাত্র ৯ দিনে হাসপাতালের বিলে পরিবারের ফতুর হওয়ার জোগাড়। ৮ লক্ষ ৮৭ হাজার ৬৬১! অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ নিয়ে স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয় সুর পরিবার। বিল জরিপ করে চমকে যায় কমিশনও।
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কমিশনের অ্যাডভাইসরিতে বলা হয়েছিল ১ মার্চ, ২০২০ অনুযায়ী বেড ভাড়া নিতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ মানেনি রুবি হাসপাতাল। রোগীর কাছ থেকে প্রতিদিন ১২হাজার ৫০০ টাকা করে আইসিইউ বেড চার্জ নেওয়া হয়েছে। অ্যাডভাইসরি অনুযায়ী যা হওয়া উচিৎ ছিল ৯ হাজার টাকা। রুবি হাসপাতালের বক্তব্য রোগীর পরিবারের আবেদন শুনে তারা ৩৪ হাজার ৬৬১ টাকা ছাড় দিয়েছেন। যদিও সুর পরিবারের দাবি, পুরো বিলই দিতে হয়েছে হাসপাতালকে। রোগীর পরিবারকে রশিদ আনতে বলে কমিশনের রায়, ৩৪ হাজার ৬৬১ তো অবশ্যই সঙ্গে আরও ১ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে রোগীর পরিবারকে।
[আরও পড়ুন: ১৫ ডিসেম্বরের আগে কলকাতা পুরভোট নয়, প্রশাসক বোর্ডের মেয়াদ বাড়াল সুপ্রিম কোর্ট]
কমিশনের চক্ষু চড়কগাছ উডল্যান্ডের বিল দেখেও। উত্তর কলকাতার শ্রী গোপাল মল্লিক লেনের সুব্রত বসু মল্লিক (৬৯) মূত্রনালি সংক্রমণ নিয়ে ভরতি ছিলেন আলিপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে। গত ১১ মে-র ঘটনা। করোনা আবহে স্বাভাবিক নিয়মেই রোগীর কোভিড টেস্ট করা হয়। অভিযোগ, সেই টেস্ট পজিটিভ আসতেই বদলে যায় হাসপাতালের ব্যবহার। সুব্রতবাবুর দাবি, হাসপাতাল জানিয়ে দেয় দ্রুত হাসপাতাল ছাড়তে হবে। করোনা রোগীর চিকিৎসা এখানে হয় না। এরপর মাত্র ২৮ ঘন্টা উডল্যান্ডে ছিলেন ওই প্রৌঢ়। তার মধ্যেই প্যাথলজিকাল টেস্ট বাবদ তার বিল হয়েছে ৩৬ হাজার!
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, ওনাকে ওইটুকু সময়ে ১৫ হাজার টাকার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তেমনটাই হাসপাতালের দাবি। মোট বিলের ৯২ হাজার থেকে অবিলম্বে হাসপাতালকে ৬০ হাজার টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা এবং প্যাথলজি টেস্টের লাগামছাড়া বিলে নাভিশ্বাস রোগী ও তার পরিবারের। এদিন বেসরকারি হাসপাতালের প্যাথলজি টেস্টগুলিতে যে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন খোদ চেয়ারম্যানও। তিনি জানিয়েছেন, দিন প্রতি হাজার টাকা চিকিৎসকের ফিজ বাবদ বেঁধে দেওয়া হলেও তার বেশি বিল করেছে রুবি হাসপাতাল। এটা ঠিক নয়।