চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: দশ দিনের জেল হেফাজত হল গরু পাচার কাণ্ডে (Cow Smuglling Case) অভিযুক্ত বিএসএফ কমাডান্ট (BSF Commandant) সতীশ কুমারের। ১৪ দিন সিবিআই (CBI) হেফাজতে রাখার পর বুধবার ফের আদালতে তোলা হয় সতীশ কুমারকে। তখনই বিচারক জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
বুধবার সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ নীল কোয়ালিস গাড়িতে আসানসোল সিবিআই আদালত চত্বরে সতীশকুমারকে আসেন নিয়ে সিবিআই আধিকারিকরা। মুখে কালো মাস্ক, সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরে সতীশ ঢুকে পড়েন আদালতের ভেতরে। নিরাপত্তার কারণে এদিন সকাল দশটা থেকেই আসানসোলের সিবিআই আদালতের সামনে ছয়জনের কমব্যাট ফোর্স এবং ব্যাপক পুলিশের ব্যবস্থা করা ছিল।
[আরও পড়ুন: ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদন, ‘তৃণমূলের ভয়ে সিদ্ধান্ত বদল’, তোপ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের]
পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) থেকে বাংলাদেশে (Bangladesh) গরু পাচারে জড়িত সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশ এবং বেআইনিভাবে অর্থ উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে সতীশ কুমারের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ছত্রিশগড়ের (Chattisgarh) রায়পুরে (Raipur) কর্মরত বিএসএফের কমান্ডান্ট সতীশ কুমার। গত ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার নিজাম প্যালেসে সিবিআই দপ্তরে প্রায় সাত ঘণ্টা জেরার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সতীশ কুমারকে। গত ২১ সেপ্টেম্বর সিবিআই সতীশ কুমারর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং দুর্নীতি বিরোধী আইনে একটি মামলা করে।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০১৭ মার্চ পর্যন্ত মালদা এবং মুর্শিদাবাদে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৬ টি ইউনিটের কমান্ডান্টের দায়িত্বে ছিলেন সতীশ কুমার। সেই সময় তিনি মালদার ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন। তখন পাচারের সময় ২০ হাজার গরু সীমান্তরক্ষী বাহিনী ধরেছিল। পরে সেগুলি নিলাম করা হয়। এতে গরুপিছু ২ হাজার টাকা করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং কাস্টমস ৫০০ টাকা করে পেয়েছিল। পাচার চক্রের অন্যতম নায়ক মুর্শিদাবাদের এনামুল হকের (Enamul Haque) কোম্পানির সঙ্গে এদের যোগসাজশ আছে। ২০১৮ সালে বিএসএফের কমান্ডান্ট টমাস জিবু ম্যাথু কোচি থেকে ৪৯ লাখ টাকা-সহ ধরা পড়ে। এরপরেই এনামুলের গরু পাচার সিন্ডিকেটের তথ্য সিবিআইয়ের সামনে আসে। তারপর সিবিআই জানতে পারে এই চক্রে সতীশকুমার–সহ বেশ কয়েক জন অফিসার এবং প্রভাবশালীরা জড়িয়ে আছেন।
[আরও পড়ুন: প্রতিষ্ঠা দিবসে বিশ্বভারতীতে মোদিকে আমন্ত্রণের পরিকল্পনা, উপস্থিত থাকতে পারেন রাজ্যপালও]
এদিন সতীশ কুমারের আইনজীবী হিসেবে কলকাতা (Kolkata) থেকে এসেছিলেন কুমারজ্যোতি তেওয়ারি, মানস কুমার দাস ও প্রান্তিক ঘোষ। সিবিআইয়ের পক্ষে কলকাতা থেকে আসেন আইনজীবী কালীচরণ মিশ্র। কুমারজ্যোতি তেওয়ারি বলেন, সেকশন ৭–এর কোনও কেস সিবিআই মেকআউট করতে পারেনি। গত ১৪ দিন সতীশ কুমারকে হেফাজতে নিয়ে সিবিআই নতুন কোনও তথ্য তুলে আনতে পারেনি। কাস্টমস অফিসার বা অন্য কোনও বিএসএফ অফিসার কাউকে ডাকতেও পারেনি।
তিনি বলেন, সতীশ কুমার কোন সিজার লিস্ট তৈরি করেননি। অন্য কোম্পানি কমাডান্টরা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের নোটিশ পাঠানো হল না। শুধুমাত্র সতীশ কুমারকেই টার্গেট করা হচ্ছে। তাই সতীশ কুমারকে সিবিআই হেফাজতে না দিয়ে দশ দিনের জেল হেফাজতে রাখা হোক। এদিকে, সিবিআই আইনজীবী দাবি করেন, সতীশ কুমার প্রভাবশালী। তাঁকে জামিন দেওয়া হলে এই ঘটনায় সাক্ষ–প্রমাণে প্রভাব পড়তে পারে। এরপর দীর্ঘ দু’ঘণ্টার শুনানির পর দশ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।