সম্যক খান, মেদিনীপুর: এসএসসি দুর্নীতি মামলা নিয়ে শোরগোলের আবহে এবার নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল সিপিএমের লোকাল কমিটির প্যাডের কাগজে লেখা চাকরির ‘সুপারিশপত্র’। যদিও ভাইরাল হওয়া ওই চিঠির সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে রাজ্যের শাসকদলকে লাগাতার বিঁধে চলেছে বিরোধীরা। তার মাঝে চাকরির সুপারিশ নিয়ে সিপিএমের চিরকূটতত্ত্বের নথি এখন ঘুরছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে (WhatsApp)। যা নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় তীব্র চাঞ্চল্য।
টেট-সহ শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে বিরোধীদের একের পর এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) পালটা অভিযোগ করে বলেছিলেন, বাম আমলে চিরকুটে লিখে চাকরি দেওয়া হত। তারপর এই চিঠি যেন সেই কথারই প্রতিচ্ছবি। ভাইরাল হওয়া চিঠিতে দেখা যাচ্ছে যে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাচরা লোকাল কমিটির প্যাডে এক নেতা এক কমরেডকে স্কুলে গ্রুপ ডি পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার সুপারিশ করছেন অপর এক লোকাল কমিটির সম্পাদককে। চিঠিটি ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর লেখা। তৎকালীন সময়ে সদর ব্লকেরই চাঁদড়া লোকাল কমিটির সম্পাদক খগেন্দ্রনাথ মাহাতোকে ওই চিঠি লেখা হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: ‘চাকরির জন্য নয়, পরকীয়ায় জড়িয়েছিল তাই হাত কেটেছি রেণুর’, দাবি অভিযুক্ত স্বামী শরিফুলের]
ওই চিঠিতে লেখা আছে, “কমঃ আমি শ্রী মোহিতলাল হাজরা গ্রাম পালজাগুল, পোঃ জাগুল, জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর জানি ও চিনি, এবং খুব দুঃস্থ পরিবারের ছেলে, বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। একে আপনার কাছে পাঠালাম। ধেড়ুয়া অঞ্চল মাধ্যমিক বিদ্যালয় গ্রুপ ডি পদে যে লোক নেওয়া হবে সেই বিষয়ে যাতে একে নেওয়া যায় তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি। পরে আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নেব।” অভিনন্দন-সহ জনৈক আহাম্মদ লেখা আছে। গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে ওই চিঠি। সেই সঙ্গে নানা মন্তব্যও ভেসে আসছে। তবে যাকে উদ্দেশ করে লেখা এই চিঠি সেই খগেন্দ্রনাথ মাহাতো এধরনের কোনও চিঠি পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমার কাছে এধরনের চিঠি নিয়ে কেউ কোনওদিন আসেনি। ওই চিঠির বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। ওই নামের কেউ এ তল্লাটে কোনও স্কুলে চাকরি করে না। তাছাড়া অনেকদিন আগেই আমি পার্টি ছেড়ে দিয়েছি।”
যদিও খগেন্দ্রনাথকে নিয়ে অন্য তথ্য ফাঁস করলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ। এই চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চিঠিটি দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন শালবনির বিধায়ক খগেন্দ্রনাথ মাহাতোকে। কোনও আবেদন জানানোটা মোটেই অপরাধ নয়। যে কেউ জানাতে পারেন। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি, দুর্নীতি হয়নি সেটাই বিচার্য।” এ নিয়ে সিপিএমকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান অজিত মাইতি বলেছেন, “ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ছে। সিপিএম নেতারা কীভাবে চাকরিকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন তা এই চিঠি থেকেই পরিষ্কার। এক লোকাল কমিটির প্যাড ব্যবহার করে অপর এক লোকাল কমিটির কাছে কোনও এক কমরেডকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে। এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে সিপিএম আমলে সিপিএম পার্টি অফিস থেকে চাকরি দেওয়া হত। ঘুঘুর বাসা ভেঙে যেতেই এখন আর্তনাদ করছে সিপিএম। যারা উপর থেকে নিচু পর্যন্ত দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তাদের মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা মানায় না।”