স্টাফ রিপোর্টার: ষাট হাজার দর্শকাসনের নতুন ঝাঁ চকচকে অপ্টাস স্টেডিয়াম অধুনা যতই পারথের ক্রিকেট-হটস্পট হোক না কেন, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রকৃত ক্রিকেট তীর্থ আজও একটাই। সোয়ান নদীর উল্টো তীরে যার অবস্থান–ওয়াকা মাঠ! পূর্ব পারথের ব্রেথওয়েট স্ট্রিট ধরে হাঁটলে ওয়াকা মাঠের নেট পড়ে। যেখানে নিত্য দেখা যায়, কোনও না কোনও টিম ব্যাট-বল নিয়ে নেমে পড়ছে। রাজ্য দল। বয়সভিত্তিক দল। এ তল্লাটে সবার ক্রিকেট ধাত্রীভূমি যে একটাই। ইতিহাসের ওয়াকা!
মুশকিল হল, এত দিন সে দৃশ্য দেখা যেত। হালফিলে আর যাচ্ছে না। ভালো করে বললে, দলবল নিয়ে ভারতীয় টিম ওয়াকা দখলের পর সে দৃশ্য আচমকাই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে! পুরো নেট কালো কাপড় পরিবৃত। ভেতরে কী চলছে, বিরাট কোহলি কেমন ব্যাটিং করছেন, জশপ্রীত বুমরাহ তাঁর বোলিং অস্ত্রাগারে ঠিক কতটা শান দিয়ে রাখছেন, ভালো করে জানার বা বোঝার উপায় নেই। সোজা যেন ভারতীয় ট্রেনিং সেশনের গায়ে অদৃশ্য ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে!
উঁহু, এখানেই শেষ নয়। মঙ্গলবার ভারতীয় টিমের প্রথম ট্রেনিং সেশনে রীতিমতো নিশ্ছিদ্র দুর্গে রূপান্তরিত করা হয়েছিল ওয়াকা-কে। চতুর্দিকে যেন পুরোপুরি ‘লকডাউন’! মাঠে কোন কর্মীরা ঢুকছেন, কারাই বা বেরোচ্ছেন, তার আলাদা করে তালিকা রাখা চলছিল। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন, ‘কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার’-রা। আসলে ওয়াকা মাঠের সংস্কার চলছে এ মুহূর্তে। মাঠের আয়তন অনেকটাই বাড়ানো হবে। মাঠে কাজ করতে ঢোকার পূর্বে কড়া নির্দেশিকা ধরিয়ে সংস্কার-কর্মীদের বলে দেওয়া হচ্ছে, ভুল করেও যেন ভারতের ট্রেনিং সেশনের ছবি-পত্তর না তোলা হয়। ভিডিও-র তো প্রশ্নই নেই।
কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত স্টেডিয়ামেই কোনও না কোনও ফাঁকফোঁকর থাকে, যা প্রচারমাধ্যম ও ক্রিকেট অনুরাগীরা ঠিকই কোনও না কোনও ভাবে খুঁজে নেন! ওয়াকার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। তা, মঙ্গলবার ভারতের প্রথম ট্রেনিং সেশন চলল প্রায় কয়েক ঘণ্টা। প্রথম দিনের ট্রেনিংয়ে দেখা যায়নি বিরাট কোহলি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, জশপ্রীত বুমরাহ, রবীন্দ্র জাদেজাদের। কোহলিরা এলেন দ্বিতীয় দিন, আজ বুধবার। এবং এ দিন প্রথম বারের টেস্ট প্রস্তুতি নিতে নেমেই বুঝিয়ে দিলেন, রান ও হৃত মান-সম্মান–দুইকে ফিরে পেতে কতটা ক্ষুধার্ত তিনি!নেট প্র্যাকটিসের জন্য স্থানীয় পারথ ক্লাবের জনা কয়েক দ্রুত গতির পেসারের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তাঁদের শর্ট অফ লেংথ বোলিংয়ের সামনে যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ দেখিয়েছে বিরাটকে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে, চার-চারটে নেট ঘুরে ব্যাটিং করে গেলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। কখনও ব্যাক অফ লেংথ ডেলিভারি খেললেন, কখনও আবার ফুল লেংথ ডেলিভারির সামনে ফেলা হল তাঁকে।
যশস্বী জয়সওয়ালও ফর্মে। তাঁর একটা শট তো মাঠ পেরিয়ে সোজা ব্রেথওয়েট স্ট্রিটে গিয়ে পড়ল! এবং বিরাট কোহলির সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে ডনের দেশে আরও এক অকুতোভয় ভারতীয়র যশ-খ্যাতি যে বাড়ছে, সেটাও বোঝা গেল। তিনি, ঋষভ পন্থ! স্থানীয় লোকজন, যাঁরা কি না পারথ মাঠের ‘ফাঁকফোঁকর’-এর সন্ধান জানেন, যাঁরা অবিরাম ভারতীয় ট্রেনিংয়ে উঁকিঝুঁকি মারছিলেন, নিরন্তর ভাবে বিধ্বংসী ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্যাটারকে খুঁজে গেলেন। মাঠে ফেটোগ্রাফারদের কেউ কেউ তো উপস্থিত সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাও করে বসলেন যে, ‘‘আচ্ছা, পন্থ কোনটা বলো তো? পন্থ ভেবে এতক্ষণ যার ছবি তুলছিলাম, সে তো দেখছি জয়সওয়াল!’’
ওহ্, বলা হয়নি। ভারতীয় ট্রেনিংয়ের প্রথম দিনে ‘আবিষ্কৃত’ মাঠের ফাঁকফোঁকর ঢেকে ফেলতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে বুধবার। সে সমস্ত জায়গাও কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। কিন্তু তাতে কি আর অত্যুৎসাহী ক্রিকেট জনতাকে থামানো যায়? কোহলিদের ট্রেনিং দেখতে এ দিন মাঠে মই নিয়ে যে উপস্থিত হলেন তাঁরা! যা দেখার পর অসহায় ভাবে (কারণ মই নিয়ে প্র্যাকটিস দেখা মোটেও আইনবিরুদ্ধ নয়) ব্রেথওয়েট স্ট্রিট ধরে হাঁটতে-হাঁটতে দূরে চলে যেতে দেখা গেল এক নিরাপত্তাকর্মীকে। বিড়বিড় করতে-করতে– পুরো সপ্তাহ এখনও বাকি। কপালে অশেষ ভোগান্তি আছে!