রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: রাহুল শরদ দ্রাবিড়কে হাতের কাছে পেলে কোনও ক্রিকেটারই দু’চারটে কথা বলার সুযোগ ছাড়ে না। ছাড়া উচিতও নয়। দ্রাবিড়ের মতো প্রাজ্ঞ, বিচক্ষণ, জ্ঞানী ক্রিকেটার এ পৃথিবীতে আর আছেন ক’জন? মঙ্গলবার সন্ধের দিকে কেকেআর (KKR) সোশ্যাল মিডিয়া টিম একখানা ছবি দিল। হুইলচেয়ারে উপবিষ্ট দ্রাবিড়। সম্প্রতি পা ভেঙেছে যাঁর। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি পঞ্চাশ বছরেও দ্রাবিড়ের এতটাই প্রগাঢ় শ্রদ্ধা যে, ভাঙা পা আর হুইলচেয়ারে রাজস্থান রয়্যালস (RR) সংসারে হেড কোচের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন! তা, ছবিতে দেখা গেল, সন্ধের বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে দ্রাবিড়ের গুরুকুলের ক্লাস চলছে। কী বললেন, ছাত্রদের নাম চাই? ভেঙ্কটেশ আইয়ার। মণীশ পাণ্ডে। অঙ্গকৃশ রঘুবংশী। রিঙ্কু সিং। একজনও রাজস্থানের নয়। প্রত্যেকে কেকেআরের!

আপাত দৃষ্টিতে যা বেশ ফুরফুরে সংসারের দৃশ্যকল্প। কিন্তু বাস্তব হল, নাইট ছাউনি মোটেও তা নয়। বরং এ দিনই দুপুরের দিকে কেকেআরের যে বোলার্স বৈঠক হয়েছে, তার আবহাওয়াকে আর যা-ই হোক, পুরোদস্তুর বসন্তসুলভ বলা যায় না! আসলে ইডেনে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে কেকেআরকে সবচেয়ে ঝঞ্ঝাটে ফেলেছিল বোলিং। যা বুধবার রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে অষ্টাদশ আইপিএলে (IPL 2025) নাইটদের প্রথম ম্যাচের আগে টিম ম্যানেজমেন্টকে যথেষ্ট ভাবাচ্ছে। আরসিবিকে ১৭৫ রানের যে টার্গেট দিয়েছিল কেকেআর, তা বিত্তশালী টার্গেট না হলেও, একেবারে হেলাফেলা করার মতোও ছিল না। কিন্তু কেকেআর বোলাররা বিরাট কোহলি-ফিল সল্টদের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেননি। স্পেনসর জনসন। হর্ষিত রানা। বৈভব অরোরা। সুনীল নারিন। বরুণ চক্রবর্তী। প্রত্যেককে অতীব সাধারণ দেখিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কাঁপিয়ে ফেরা বরুণ চার ওভারে রান দেন ৪৩। উইকেট একটা। কেকেআর রহস্য স্পিনারের বিরুদ্ধে প্রথম ওভার থেকে আক্রমণের রাস্তায় চলে যান ফিল সল্ট। নাইট পেসারদেরও ইডেনে প্রথম আইপিএল ম্যাচে তথৈবচ দেখিয়েছে। এতটাই যে, আরসিবি ইনিংসের এগারো ওভারের মধ্যে বরুণের বোলিং ‘কোটা’ শেষ করে ফেলতে বাধ্য হন নিরুপায় কেকেআর অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে! বরুণ রান দিচ্ছেন দেখেও তাঁর কিছু করার ছিল না।
অথচ আরসিবি বোলাররা তুলনায় অনেক ভালো পারফর্ম করেছেন ইডেনে। ক্রুণাল পাণ্ডিয়ার স্পিন বোলিং ছেড়েই দিলাম। পেসারদের মধ্যে জশ হ্যাজেলউডও দারুণ বোলিং করে গিয়েছেন। কেকেআরের বিরুদ্ধে চার ওভারে মাত্র ২২ রান গিয়ে দু’উইকেট তুলে নেন অস্ট্রেলীয় পেসার। শোনা গেল, এ দিন বোলার্স বৈঠকে নাকি ‘তিরস্কৃত’ হয়েছেন কেকেআর পেসাররা। দেখা গিয়েছে, আরসিবির বিরুদ্ধে অনেক বেশি ‘ফুল লেংথ’ ডেলিভারি করতে যান কেকেআর পেসাররা। আর করতে গিয়ে, যথেচ্ছ রান দিয়ে ফেলেন। এবং বল সে ভাবে ‘মুভ’ করছে না দেখেও তাঁরা নাকি লেংথ পরিবর্তনের চেষ্টা করেননি। ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ বললেন যে, কেকেআর বোলারদের নাকি বলা হয়েছে, ইডেনে জশ হ্যাজেলউডের বোলিং দেখতে। অস্ট্রেলীয় পেসার বল ‘মুভ’ করছে না দেখে, সঙ্গে সঙ্গে লেংথ এগিয়ে আনেন। নাইট বোলারদের নাকি রাজস্থান যুদ্ধের আগে এ-ও বলে দেওয়া হয়েছে, সর্বক্ষণ যে সাপোর্ট স্টাফদের থেকে বার্তা দেওয়া হবে, এমন নয়। মাঠে তাঁদের নিজেদেরও বুঝতে হবে, কোন পরিস্থিতিতে কী প্রয়োজন? প্রত্যেকে ভালো প্লেয়ার। প্রত্যেকে আইপিএলের (IPL 2025) সঙ্গে সহজাত। নতুন করে কাউকে কিছু বোঝানোর নেই।
এ দিন প্রাক্ ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলন করতে এসেছিলেন কেকেআর বোলিং কোচ ভরত অরুণ। পেশাদারি জগতে কখনওই ভেতরের কথাবার্তা প্রকাশ্যে আসে না। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হল না। অরুণ বলে গেলেন, “প্রথম ম্যাচটা নিয়ে আমরা বিশেষ দুর্ভাবনায় নেই। প্রথম ম্যাচ জিততে পারা সব সময় ভালো। তাতে ছন্দ পেয়ে যাওয়া যায়। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা আরও রান করতে পারতাম যদি না পরের দিকে উইকেট চলে যেত।” কেকেআর বোলিং কোচকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আন্দ্রে রাসেল-রিঙ্কু সিংয়ের মতো ‘পাওয়ার হিটার’দের প্রথম ম্যাচে রান না পাওয়া তাঁকে চিন্তায় রাখছে কি না? উত্তরে অরুণ বলে দেন, “খেলায় যত না প্লেয়াররা সাফল্য পায়, তার চেয়ে বেশি ব্যর্থ হয়। আমি নিশ্চিত রাসেল নিজেও তেতে রয়েছে প্রথম ম্যাচে রান না পেয়ে। রিঙ্কুও চ্যাম্পিয়ন প্লেয়ার। আমি ওদের ফর্ম নিয়ে চিন্তায় নেই।” তবে রাহানে-রাসেলদেরও শোনা গেল, একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দলের লিডারশিপ গ্রুপের অংশ যাঁরা, অর্থাৎ রাহানে-ভেঙ্কটেশ-রাসেলদের মাঠে নিজেদের মধ্যে আরও বেশি যোগাযোগ বাড়াতে হবে। আরও বেশি ‘প্রো-অ্যাক্টিভ’ হতে হবে। উপায়ও বা কী? সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে হেরে যেতে পারে রাজস্থান। কিন্তু রয়্যালসরা হেরেছে, লড়ে। সানরাইজার্সের দেওয়া ২৮৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে সঞ্জু স্যামসনরাও ২৪২ পর্যন্ত রানকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। সঞ্জু-জয়সওয়াল-হেটমায়ারদের এরপর হালকা নিলে রক্ষা আছে?
ওহ্। লেখাই হল না। রাতের দিকে কেকেআর সোশ্যাল মিডিয়া টিম আরও একখানা ছবি দিয়েছে। নীতীশ রানা আর অঙ্গকৃশ রঘুবংশীর। তা, নীতীশের পরিচয়টা জানেন তো? ইনি ফিল সল্টের মতোই আর এক প্রাক্তন নাইট! এবং কেকেআর গত নিলামে নীতীশ নিয়ে উচ্চবাচ্য না করায় তাঁর স্ত্রী বিতর্কিত কী সমস্ত যেন লিখেওছিলেন!