আলাপন সাহা: খবরটা শুনে অনেকটাই স্বস্তি পাবেন মহম্মদ শামি। শুধু শামি কেন, বিশ্বের সব পেসারদের কাছেই এটা বিশাল স্বস্তির খবর। বলের উপর লালা ব্যবহার নিয়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আইসিসি, সেটা আর থাকছে না। সোজা কথায়, এবার থেকে আগের মতোই বলের উপর লালা ব্যবহার করা যাবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় সর্বপ্রথম শামি আর্জি জানিয়েছিলেন, লালা ব্যবহার করতে দেওয়া হোক।

আসলে কোভিড-কালে ক্রিকেটীয় নিয়মে বেশ কিছু বদল হয়েছিল আইসিসির নির্দেশে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল, বলের উপর লালার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। ফলে বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন পেসাররা। লালা ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য ক্রিকেট থেকে বিলুপ্ত হতে বসেছিল রিভার্স সুইং শিল্প। করোনার দাপট এখন আর নেই। অনেকেই মনে করছিলেন, আইসিসি এবার নিয়ম বদল করুক। শামি একই দাবি জানান। সেই দাবির পরপরই, আইপিএল শুরুর ঠিক আগে ভারতীয় বোর্ড বলের উপর লালার ব্যবহারে অনুমতি দিয়ে দেয়। এবং শুধু আইপিএলে নয়, এবার থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটাই হতে চলেছে। অর্থাৎ বলের লালা ব্যবহার নিয়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, সেটা আর থাকছে না। এই সপ্তাহে দুবাইয়ে আইসিসি ক্রিকেট কমিটির বৈঠক হয়। দু'দিনের সেই বৈঠকে বেশ কিছু ক্রিকেটীয় নিয়ম বদল নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। শোনা গেল, তার মধ্যে সবচেয়ে চর্চা হয় লালায় ব্যবহার নিয়ে। কমিটির সদস্যদের অনেকেরই মনে হয়েছিল, আগের সেই নিয়ম ফিরিয়ে আনা হোক।
লালার ব্যবহার যখন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন পুরো বিশ্ব অদ্ভুত এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। করোনা পুরো বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। যে কারণে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে লালা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আইসিসি। শোনা গেল, আইসিসির বৈঠকে বলা হয়, এখন আর করোনার ভয়াবহতা নেই। তাই আবারও লালা ব্যবহার করতে দেওয়া হোক। না হলে ক্রিকেটের সেই উত্তেজনা থাকবে না। এমনিতেই এখন ব্যাটারদের বাড়বাড়ন্ত। এবার যদি রিভার্স সুইংও চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বোলারদের সমস্যা আরও বাড়বে। সেই কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত হয়, টেস্ট, ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সব ফরমাটেই এবার বলের উপর লালা ব্যবহার করা যাবে। ফলে ক্রিকেট দুনিয়ার আবারও ফিরতে চলেছে রিভার্স সুইং। যা প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছিল। আইসিসি-র ক্রিকেট কমিটি এই বিষয়ে অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। এবার নিয়ম অনুযায়ী কমিটির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হবে আইসিসি-র চিফ এগজিকিউটিভ কমিটিতে। এপ্রিলে সেই কমিটির বৈঠক হবে। সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই ফের লালা ব্যবহারের পুরনো ছবি ফিরবে ক্রিকেট মাঠে।
শুধু লালা ব্যবহারে অনুমতি দেওয়া নয়। আইসিসি ক্রিকেট কমিটির ওই বৈঠকে আরও বেশ কিছু নিয়মে বদল করা হয়েছে। ক্রিকেটে যাতে শুধু ব্যাটারদের দাপাদাপি না থাকে, তার জন্য বিশেষ নিয়ম করা হচ্ছে। এতদিন বল লেগ স্টাম্পের বাইরে গেলেই ওয়াইড দিয়ে দেওয়া হত। এবার কিছুর ছাড় পেতে চলেছেন বোলাররা। নতুন নিয়মে এখন আর শুধু লেগ সাম্পের বাইরে গেলে ওয়াইড ডেলিভারি হবে না। লেগ স্টাম্পে বিশেষ একটা মার্কার থাকবে। ওই মার্কারের বাইরে গেলে তবেই ওয়াইড হবে। আইসিসি-র কেউ কেউ বলছিলেন, "ক্রিকেট শুধু ব্যাটার কেন্দ্রিক হয়ে গেল খুব মুশকিল। কারণ খেলাটা তখন একপেশে হয়ে যাবে। খেলার মধ্যে সেই উত্তেজনা থাকবে না। ফলে দর্শকদের আগ্রহ কমে যেতে পারে। এটা নিয়ে বৈঠকে কথাবার্তা হয়েছে। তাই ঠিক হয়েছে, এখন আর লেগ স্টাম্পের বাইরে গেলেই ওয়াইড দেওয়া হবে না। নির্দিষ্ট একটা মার্কার রাখা হবে। তাতে বোলাররা কিছুটা হলেও সুবিধে পাবে।
এখানেই শেষ নয়। আরও থাকছে। এতদিন ওডিআই ম্যাচে দু'প্রান্ত থেকে দু'টো বল ব্যবহার হত। সেই নিয়মেও বদল নিয়ে আসা হচ্ছে। ঠিক হয়েছে, নতুন নিয়মে প্রথম পঁচিশ ওভারে দু'প্রান্ত থেকে দু'টো নতুন বল ব্যবহার হবে। পচিশ ওভারের পর শুধু একটা বল থাকবে। ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও নিয়ম বদল এসেছে। প্রায়শই দেখা যায়, বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডাররা উড়ে গিয়ে ছয় আটকান। অনেক সময় আবার সেটা ক্যাচও হয়ে যায়। কিন্তু আইসিসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বাউন্ডারি লাইনের বাইরে যদি শরীরের সামন্যতম অংশও থাকে, তাহলে সেটাকে আউট হিসেবে গণ্য করা হবে না। ফিল্ডারের শরীরের পুরো অংশ বাউন্ডারি লাইনের ভিতরে থাকলে, তবেই সেটা আউট হিসেবে বিবেচিত হবে।