রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: ভারতীয় ক্রিকেটে 'সুপারহিটার' রিচা ঘোষ। প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার হিসাবে বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। শুক্রবার শিলিগুড়িতে ফেরার পর সকলেই দেখেছিল আবেগের বিস্ফোরণ। তাঁকে স্বাগত জানাতে উৎসবের পরিবেশ কলকাতাতেও। শনিবার রিচাকে সংবর্ধনা দিল সিএবি। এই রিচাকেই ভবিষ্যতে অধিনায়ক দেখতে চান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইডেন থেকে রিচাকে বার্তা দিলেন। আর এসবে আপ্লুত রিচা স্বয়ং।
ইডেনে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, প্রাক্তন ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামী, সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সিএবি কর্তা সঞ্জয় দাস, নীতীশ রঞ্জন দত্ত, অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী প্রমুখ। শনিবার যেন দেবীপক্ষের পরেও দেবীবরণ হল রিচা ঘোষের হাত ধরে। তাঁকে পুষ্পস্তবক তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। তাঁকে সঙ্গত করলেন টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, উত্তরবঙ্গের আরও এক অহংকার অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। ইডেনে ফুল দিয়ে সম্মানিত করা হয় রিচার মা-বাবাকেও।
প্রসঙ্গত, রিচার বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ দীর্ঘদিন ধরে সিএবি'র আম্পায়ার। তাঁদের পরিশ্রমেই ২২ বছরের বঙ্গকন্যা আজ বিশ্বজয়ী। এমন স্মরণীয় মুহূর্তকে আরও আলোকিত করলেন ঝুলন গোস্বামী। তিনি বলেন, "২০১৩ সালের কথা। সেই বছর আমরা ভালো খেলতে পারেনি। তখন আমি সিএবি সেক্রেটারি বিশ্বরূপ দে, গৌতম স্যর, বাবলু স্যরকে জিজ্ঞেস করি আমরা কি ডিস্ট্রিক্টে ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম করতে পারি? তাঁরা সম্মতি দেন। সেই সূত্রেই রিচাকে দেখা। শিলিগুড়িতে অনূর্ধ্ব-১৫ এবং অনূর্ধ্ব-১৬ দলে ওকে দেখি। ফিরে এসে সিএবি'তে ওর কথা বলি। ওর বয়সি এমন প্রতিভাবান ক্রিকেটার কাউকে দেখিনি। এরপর ও বাংলায় সুযোগ পায়। সেই সময় সৌরভ স্যর প্রেসিডেন্ট, অভিষেক স্যর সেক্রেটারি। আমি বলি, রিচাকে সিনিয়র দলে নিতে চাই। তখন ও অনেকটা ছোট। আমি কিন্তু সমর্থন পেয়েছিলাম। তারপর বাকিটা তো ইতিহাস। একের পর এক জয় পেয়েছে। ট্রফি জিতেছে। গত ৪৭ বছর ধরে ভারতীয় মহিলা দল যে স্বপ্ন দেখেছিল, তা আজ পূরণ করল রিচা, হরমন, স্মৃতিরা। ওদের ধন্যবাদ। রিচার জার্নি সবে শুরু। অনেকটা পথ চলতে হবে ওকে।"
এরপর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আগে মহিলাদের ক্রিকেট অর্থনৈতিকভাবে এত ভালো জায়গায় ছিল না। কয়েক বছর আগে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, মহিলাদের ক্রিকেটকেও সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনটে আইসিসি ইভেন্টে ক্যাপ্টেন ছিলাম আমি। কিন্তু কখনও বিশ্বকাপ জিততে পারিনি। তুমি বিশ্বকাপ জিতে এসেছ। রিচারা যখন চ্যাম্পিয়ন হয়, তখন মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। এক কথায় রাজি হয়ে যান। রিচা ভারতীয় দলে যে রোল প্লে করে, সেটা খুবই কঠিন। কারণ ছয় নম্বরে নেমে কম বল পাওয়া যায়। কঠিন কাজটা ও সহজভাবে করে এসেছে। তোমার কেরিয়ার সবে শুরু। আরও অনেক খেলার সুযোগ পাবে। তোমাকে আমাদের তরফ থেকে অভিনন্দন। ভারতীয় দলে ওর মূল্য স্মৃতি, হরমনদের চেয়ে কম কিছু নয়। আমরা যেন কোনও একটা দিন বলতে পারে রিচা, ভারত অধিনায়ক।"
জানা গেল, নব্বইয়ের দশকে দিল্লিতে পুরুষ ও মহিলা সাংসদদের নিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রিচায় আপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ওর বয়স অল্প। ওকে মানসিক চাপ দিও না। ভালোবাসা দিয়ে বাংলা ও বিশ্ব জয় করবে ও। মনের শক্তিই সবথেকে বড়। নিজের কাজ নিজেকে করে যেতে হবে। দুর্গমকে জয় করে শীর্ষে পৌঁছতে হবে। লড়তে হবে, করতে হবে, খেলতে ও জিততে হবে।" উল্লেখ্য, সিএবি'র তরফে রিচাকে ৩৪ লক্ষ টাকা এবং সোনার ব্যাটও উপহার দেওয়া হয়েছে। এসবের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের ডিএসপি পদে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে রিচাকে 'বঙ্গভূষণ' সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে।
