সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুপুর তখন দেড়টা। বেঙ্গালুরুর সেন্টার অফ এক্সেলেন্সের মাঠ। শীতের অলস দুপুরে পেট্রলিং চলছে। বাউন্ডারি দেওয়ালে সে সময় উৎসমুখ ক্রিকেটপ্রেমীদের ঝাঁক। কেউ কেউ আবার রাস্তার উলটো দিকে দাঁড়ানো কপ্টেনার ট্রাকের ছাদে দাঁড়িয়ে। অতীব মনোযোগ সহ। কেউ আবার ঝুঁকি নিয়ে গাছে চড়ে বসেন। এঁরা সবাই একজনকেই দেখতে চান। একজনের অবতরণ চাক্ষুষ করতে চান। কিং কোহলির! এর ঠিক অন্য দিকে জয়পুরের সোয়াই মানসিংহ স্টেডিয়ামেও একই প্রায় একই ছবি। সেখানে রোহিতকে দেখতে হাজির হয়েছিলেন অসংখ্য দর্শক। তাদেরই একজন হিটম্যানকে সামনে থেকে দেখতে ছুটে আসে। পা ছুঁয়ে প্রণামও করে। টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অধিনায়কও তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। এক কথায় 'রো-কো'কে নিয়ে বুধবার দিনটা ছিল বেঙ্গালুরু এবং জয়পুর দুই শহরের কাছে অনেকটা উৎসবের মতো।
২০১০ সালে শেষবার বিজয় হাজারে ট্রফি খেলেছিলেন কোহলি। তার পর এবার আবার। মাঝে তাঁর দু'খানা বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গিয়েছে (২০১১ এবং ২০২৪), দু'টো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতা হয়ে গিয়েছে, টেস্ট খেলা শুরু করে অবসর নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এত দিন পর ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের মুহূর্তটা জনসমাগম-বেষ্টিত হল না কোহলির। আসলে সেন্টার অফ এক্সেলেন্সের মাঠ বেঙ্গালুরুর প্রাপ্তিক এলাকায়। শহরের মধ্যে নয়। তাই লোকজন এমনিতেই কম। তার উপর সেন্টার অফ এক্সেলেন্সের মাঠে দর্শক প্রবেশ সম্ভব নয়। তাই অনেকের পক্ষে অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে বিজয় হাজারে ট্রফির ম্যাচে কোহলির ব্যাটিং চর্মচক্ষে দেখা সম্ভব হল না। কিন্তু উকিঝুঁকি মেরে যাঁরা বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে দেখলেন, তাঁদের এত ঝঞ্ঝাট পোহানো সার্থক হয়ে গেল।
বিশ্বের তাবড় তাবড় বোলার যাঁর ভয়ে থরহরি কম্পমান। অন্ধ্রের অখ্যাত বোলাররা তাঁকে বেগ দেবেন কী করে? বিরাটও হাঁকালেন অনবদ্য সেঞ্চুরি। এদিন প্রথম শটেই লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ১৬ হাজার রানের গণ্ডি পেরোন কোহলি। শচীন তেণ্ডুলকরের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে এই কীর্তি গড়েন তিনি। শচীন ১৬ হাজার রান করেছিলেন ৩৮৫ ইনিংসে। বিরাট পেরলেন ৩৩০ ইনিংসে। তারপর সেই ইনিংসেই অনবদ্য শতরান। তবে দুরন্ত সেঞ্চুরির পর কোহলি কোনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি। দেখা যায়নি 'ভিন্টেজ বিরাট সেলিব্রেশন'। তবে বিরাটের ব্যাটিং দেখে তাঁরা যে আনন্দ নিয়ে ফিরেছেন ঘরে, তা আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
এবার আসা যাক রোহিত প্রসঙ্গে। ততক্ষণে সিকিমের বিরুদ্ধে জেতা হয়ে গিয়েছে ম্যাচ। সতীর্থ এবং বিপক্ষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলেন হিটম্যান। সেই সময় এক খুদে ভক্ত ছুটে এসে তাঁকে প্রণাম করে। তার গায়ে ছিল সাদা জার্সি। পিছনে লেখা কোহলির নাম এবং জার্সি নম্বর। রোহিত সঙ্গে সঙ্গে নিচু হয়ে 'কোহলি ভক্ত'কে তুলে জড়িয়ে ধরেন। খুদে ওই ভক্ত যে কেবল কোহলির নয়, হিটম্যানেরও ভক্ত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা এই ক্রিকেটারের আচরণে মুগ্ধ নেটপাড়া। উল্লেখ্য, মাত্র ৯৪ বলে ১৫৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
