স্টাফ রিপোর্টার: শুভমান গিলকে টি-টোয়েন্টি দলে অন্তর্ভুক্ত করে ক্রিকেট জনতার কাঠগড়ায় উঠেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। শুভমান গিলকে (Shubman Gill) টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ দিয়ে এবার কাঠগড়ায় উঠলেন জাতীয় নির্বাচকরা। না, অজিত আগরকর নেতৃত্বাধীন জাতীয় নির্বাচক কমিটিকে গিলকে বাদ দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সমালোচিত হতে হচ্ছে না। সমালোচনা চলছে, গিলকে বাদ দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে। ভারতীয় বোর্ড সূত্র বিশ্বাস করলে, গিল যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়তে চলেছেন, সেটা তাঁকে জানানোই হয়নি।
এখানে বলে রাখা যাক, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে রাখা হয়নি এত দিনের সহ-অধিনায়ক শুভমানকে। সহ-অধিনায়ক হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে অক্ষর প্যাটেলকে। শনিবার দল নির্বাচনী বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিশ্বকাপের স্কোয়াড জানান ভারতীয় বোর্ড সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া। কিন্তু ঘটনা হল, শনিবারের অনেক আগেই গিলের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চতুর্থ টি-টোয়েন্টির সময়। যে ম্যাচ দূষণজনিত ঘন কুয়াশার কারণে বাতিল হয়ে গিয়েছিল যোগীরাজ্যে। পায়ের পাতায় চোট পেয়ে লখনউয়ে সেই ম্যাচ খেলতে পারতেন না গিল। কিন্তু শনিবার আহমেদাবাদে তাঁর নামার মতো অবস্থা ছিল। তাঁর খেলার ইচ্ছেও ছিল। কিন্তু তার পরেও খেলানো হয়নি গিলকে। সঞ্জু স্যামসনকে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয়। খবর যা, তাতে না জাতীয় কোচ গৌতম গম্ভীর, না ভারতের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব-গিলকে দু'জনের একজনও জানাননি যে তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়তে চলেছেন!
ওয়াকিবহাল মহলের কেউ কেউ বলছেন, স্রেফ অধিনায়ক বলে সূর্যকুমার থেকে গেলেন। আর গিল, তাঁকে বাদ পড়ে যেতে হল। অথচ ফর্ম বিচারে গিলের চেয়েও খারাপ অবস্থা দলের অধিনায়কের। চলতি বছরে ১৫ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে গিল করেছেন ২৯১ রান। ১৩৭ স্ট্রাইক রেটে। 'আর ১৯ ইনিংস খেলে সূর্য করেছেন ২১৮ রান। স্ট্রাইক রেট ১২৩.২। বলাবলি হচ্ছে, গিল যদি এরপর ভেতরে ভেতরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন, তাঁর প্রতি অবিচার হল ভাবেন, কিছু বলার থাকবে না। এঁরা বিস্মিত হয়ে ভাবছেন, কী এমন ঘটে গেল মাঝে যে, রাতারাতি গম্ভীরের সংসারে প্রিয়পাত্র থেকে ব্রাত্যের পৃথিবীতে পদার্পণ ঘটল গিলের? শুধুই খারাপ ফর্ম? নাকি আরও কিছু?
জাতীয় নির্বাচক কমিটির প্রধান অজিত আগরকর শনিবার দল নির্বাচনী বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে বলে যান, "গিল যথেষ্ট দক্ষ ব্যাটার। কিন্তু ফর্মটা ওর ভালো যাচ্ছে না এই মুহূর্তে। আর টিমের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কম্বিনেশন।" সে তো সরকারি কথা। বাস্তব হল, 'গুরু' গম্ভীরের আজব সংসারে কখন যে কী ঘটে, কেউ বলতে পারে না। কম্বিনেশনই যদি এত গুরুত্বপূর্ণ হবে, তা হলে খামোখা গিলকে আনা কেন হয়েছিল সঞ্জুকে ওপেনিং থেকে সরিয়ে? সবই তো ঠিকঠাক চলছিল সে সময়। সঞ্জু যথেষ্ট ভালো খেলছিলেন, রানের মধ্যে ছিলেন। হঠাৎ দুম করে তাঁর ব্যাটিং পজিশন বদলে দেওয়া হল, গিলকে আনতে গিয়ে! আসলে মুশকিল হল, ধারাবাহিকতা বলে কোনও বস্তুই নেই কোচ গম্ভীরের সংসারে। এতদিন গিল ছিলেন তাঁর প্রিয়পাত্র। টেস্ট অধিনায়কের পর রোহিত শর্মাকে সরিয়ে ওয়ানডে ক্যাপ্টেনও করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। সেই শুভমান যখন বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়ছেন, তাঁকে আগাম জানানোর প্রয়োজনই মনে করলেন না গম্ভীর। এটা তো সরাসরি অবজ্ঞা। অপমান। এরপর মুখোমুখি হলে সব কিছু ঠিক থাকবে তো গম্ভীর আর গিলের?
অনেকে সূর্য নিয়েও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। বলা হচ্ছে, যা আজ গিলের সঙ্গে ঘটল, তা বিশ্বকাপে ব্যর্থ হলে সূর্য-র সঙ্গেও ঘটতে পারে। ভারতের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক যতই আশ্বাস দিয়ে যান, "বিশ্বকাপে আপনারা আমার চেনা ফর্ম দেখবেন," চাপ তাঁর উপরেও থাকবে। প্রবল ভাবে থাকবে। কেন? গৌতম গম্ভীরের আপন দেশে, আইন-কানুন যে সর্বনেশে!
