সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে একদিন ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে মাথা নিচু করে ফিরতে হয়েছিল, সেখানেই গৌরবের মুকুট মাথায় পরার সুবর্ণ সুযোগ! সেই ব্যর্থ নায়কের সামনেই ইতিহাস তৈরির হাতছানি। তিনি সম্রাট নন, রাজাও নন। খুব বেশি হলে জায়গিরদার হিসেবেই তাঁকে মনে রাখবে দেশের ক্রিকেট মহল। তিনি রাহুল শরদ দ্রাবিড় (Rahul Dravid)। বর্তমানে রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের হেডস্যর।
তাঁর ব্যাটিং নিয়ে পেলব কবিতা কেউ কখনও লেখেননি। তিনি শচীন তেণ্ডুলকরের গ্রহেরও বাসিন্দা নন। এমনকী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো দৃষ্টিনন্দন কভার ড্রাইভও তাঁর তূণে নেই। একসময় তাঁকে শুনতে হয়েছিল, রাহুল দ্রাবিড়ের স্কোর দেখে আইএসডি কোডের কথাই মনে হচ্ছে। তখন অবশ্য তাঁর কেরিয়ারের প্রভাত বেলা। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তিনি দ্রাবিড়-সভ্যতার জন্ম দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ফাইনালে দেখা যাবে বিরাট ধামাকা, দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপেও কোহলির পাশে রোহিত-দ্রাবিড়]
ক্রমে হয়ে উঠেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের মিস্টার ডিপেনডেবল। দ্য ওয়াল। তাঁর ঢিমেতালে ব্যাটিংয়ের সমালোচনা হয়েছে কোনও কোনও মহল থেকে। জবাব দিয়েছে তাঁর ব্যাট। একাধিক বার বিপদের সময় চওড়া হয়ে ভারতকে ভরসা দিয়েছে উইলো। একটা দৃষ্টান্তই যথেষ্ট। ২০০১-এ ইডেনে ভারত-অস্ট্রেলিয়া বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির টেস্টে ফলো অন করে যে ম্যাচ পকেটে পুরেছিল ভারত, তার কারিগর একা ভিভিএস লক্ষ্মণ নন, দ্রাবিড়ও। ভিভিএসের ২৮১-এর পাশে ঔজ্জ্বল্যের দীপ্তিতে কম দ্যুতি ছড়ায়নি দ্রাবিড়ের ১৮০। এমন সোনালি ইনিংস তিনি দেশ-বিদেশের মাঠে বহু খেলেছেন।
কিন্তু কেরিয়ারে সোনার সমস্ত ইমারত গড়েও শচীন-সৌরভের আলোর ছটায় আবছা হয়ে থেকেছেন। কর্ণের মতো ভাগ্যবিড়ম্বিত তিনি। প্রচারের চড়া সার্চলাইট বাকিদের ওলট পালট করে দিলেও তিনি অন্ধকারের বাসিন্দা হয়ে থেকেছেন চিরকাল, আলোর জগতের সন্ধান দিয়ে। ব্যক্তিগত মাইলস্টোন নিয়ে তিনি খুব একটা চিন্তিত নন। দলের স্বার্থ তাঁর ডায়রির প্রথম পাতায় লেখা।
তাঁর রেকর্ড যতই ঝলমলে দেখাক, প্রতিপক্ষের ভয়াবহ বোলারদের যতই তিনি বশ করুন না কেন, তাঁকে নিয়ে জনতার হিস্টিরিয়া দেখা যায় না। দলের এক নম্বরও তিনি নন। তিনি সবসময়ে পার্শ্বচরিত্র। রাহুল দ্রাবিড়ের ক্রিকেটজীবন খুব ভালো করে দেখার পরে মনে হয়, ভারতীয় ক্রিকেটে তিনি এক উপেক্ষিত নায়ক! যিনি সামনে আসতে চান না। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে নিজের কাজটাই করে যেতে চান নীরবে।
দীর্ঘ ক্রিকেট জীবনে বড় খেতাব আর জিতলেন কবে! দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু প্রচারের আলো তাঁর উপরে এসে পড়েনি। তাঁর অধিনায়কত্বে বিতর্কও কম হয়নি। ইডেনে চরম বিরুদ্ধস্রোতের মধ্যে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলছে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে তাঁর নেতৃত্বে এই ক্যারিবিয়ান মুলুক থেকেই ছিটকে যেতে হয়েছিল ভারতকে। শনিবার সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ মুলুকেই রাহুল দ্রাবিড় প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পাচ্ছেন। অধিনায়ক হিসেবে যা পাননি, কোচ হিসেবে সবকিছু পাওনাগণ্ডা বুঝে নেওয়ার আরও একটা সুযোগ তাঁর সামনে।
ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ফাইনালের বল গড়ানোর আগে উচ্চকিত ভাবে শোনা যাচ্ছে তাঁর বিদায়ের রিংটোন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের পরই কোচের চেয়ার ছেড়ে চলে যাবেন রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর উত্তরসূরিও ঠিক হয়ে গিয়েছে। তাঁকে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। কিন্তু রাহুল দ্রাবিড় সযত্নে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করছেন।
যুব দলের কোচ থাকার সময় একবার বিশ্বজয়ী হয়েছেন। কিন্তু সিনিয়র দলের কোচ হিসেবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে এসে মুখ থুবড়ে পড়েছে তাঁর টিম ইন্ডিয়া। পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপেও শেষ মুহূর্তে এসে ধাক্কা খেয়েছে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। সমালোচনা হয়েছে, রাহুল দ্রাবিড় ছোটদের কোচ হিসেবে সফল, কিন্তু সিনিয়রদের নিয়ে একেবারেই সফল নন। তিনি বরং ব্যর্থতার মেরুরই বাসিন্দা। সেই দুর্নাম, বদনাম ঘোচানোর সময় আরও একবার এসে গিয়েছে রাহুল দ্রাবিড়ের সামনে।
তিনি কি ব্যর্থতার অন্ধকার থেকে সাফল্যের আলোর পথে এসে দাঁড়াতে পারবেন শনিবার, ২২ গজে সেই উত্তর পাওয়ার জন্য প্রতীক্ষায় তামাম ভারতবাসী।
[আরও পড়ুন: টেস্টে জোড়া বিশ্বরেকর্ড শেফালি-স্মৃতির, প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে প্রথম দিনে রানের পাহাড়ে ভারতের মেয়েরা]