shono
Advertisement

‘এ কোন ম্যানহাটন?’, অবরুদ্ধ মার্কিন মুলুকের ছবি তুলে ধরলেন প্রবাসী বাঙালি

বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদে আমেরিকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমেছেন। The post ‘এ কোন ম্যানহাটন?’, অবরুদ্ধ মার্কিন মুলুকের ছবি তুলে ধরলেন প্রবাসী বাঙালি appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 12:57 PM Jun 03, 2020Updated: 12:57 PM Jun 03, 2020

মিনিয়াপলিসে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু হওয়ার ক্ষোভের আগুন ঝরে পড়েছে গোটা মার্কিন মুলুকে। প্রশাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে পথে নেমেছেন লক্ষ লক্ষ মার্কিনি। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি আমেরিকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ন্যাশনাল গার্ডকে রাস্তায় নামিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মানুষ শান্ত না হলে সেনা নামিয়ে ঠান্ডা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। এই অবস্থায় নিউ ইয়র্কের হালহকিকত বর্ণনা করতে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন প্রবাসী বাঙালি সাহানা ভট্টাচার্য

Advertisement

শোবার ঘরে আলো নিভিয়ে বালিশে মাথা রাখতেই তিনটে হেলিকপ্টারের আওয়াজ পাচ্ছি। টহল দেবে সারা রাত। দুদিন ধরে রাতে কারফিউ। সাদা-কালো-বাদামি-হলুদ-লাল মিলেমিশে সারা বিকেল আন্দোলন করেছে গত দুদিন, ছাদে উঠে দেখেছি। মানুষ আমার বাড়ির সামনের রাস্তায় বসে, শুয়ে পড়েছে।

ঝাঁ-চকচকে বাড়িঘর, ঝলমলে শপিং মল, ব্যস্ততায় ভরা দ্রুতগামী যানবাহনে ভরা আমার ম্যানহাটন। বছরের এই সময়টা ম্যানহাটন ভ্রমণকারীতে ভরে থাকে, শহরজুড়ে মাথাখোলা বাস চলে, মানুষ সারা বছরের রোদ পোহাতে সমুদ্রে যায়। শহরের মাঝের একটুকরো সেন্ট্রলপার্ক ঋতুপরিবর্তনের জানান দেয়! গত পাঁচটা বছর আমি এই শহরে আছি। জীবনের কঠিনতম সময়টা যে শহরটা আমাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে, আমাকে আশ্রয় দিয়েছে, বাসস্থান দিয়েছে, অন্নসংস্থান দিয়েছে, পরিচয় দিয়েছে, স্বপ্ন দিয়েছে, যন্ত্রনায় মলম দিয়েছে – সে শহরটা আজ এমনিতেই করোনাক্রান্ত হয়ে আধো-অচেনা।

এই তো গতবছর, মে মাসের শেষাশেষি কোনও এক বৃষ্টিভেজা রাতে, রাত তিনটের সময় হাঁটাপথে টাইমস স্কোয়্যারে গিয়ে ছবি এঁকেছি একা। শীতের রাতে ল্যাব থেকে রাত বারোটায় বেরিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি আসতে আসতে ভিডিও কলে মা-কে পথের দুধারে পড়ে থাকা স্তূপাকার বরফ দেখিয়েছি। এ শহর নাকি ঘুমোতে জানে না, পুরোপুরি অনুভব করেছি তা! জুন-জুলাই-আগস্ট উইকেন্ডে আমার বাড়ির ঠিক পাশেই বয়ে যাওয়া ইস্ট রিভারের ধারে গিয়ে গলা ছেড়ে গান গেয়েছি, দেশি-বিদেশি মানুষ আশেপাশে প্রেম করতে বা স্রেফ নদীর হাওয়া খেতে বেরিয়ে আমার গান শুনেছে বহুবার। কে কাকে প্রতিবাদ করছে জানি না। কে কাকেই বা অভিযোগ জানাচ্ছে? কোন শিক্ষক কোন রাজনীতিবিদ মানুষকে মনুষ্যত্ব শেখাবে? মনুষ্যত্ব বুঝি শেখানো যায়? তোমার হাতে বন্দুক থাকলেই বা ক্ষমতা থাকলেই দুর্বলকে রাস্তায় মাটিতে পিষে দেবে? তার বদলা নিতে বাকিরা সংগঠন করে পৃথিবীর বৃহত্তম শপিং মল ভাঙচুর করবে?

[আরও পড়ুন: ‘মুখ বন্ধ রাখুন’, ফ্লয়েড হত্যা নিয়ে ট্রাম্পকে তোপ হিউস্টনের পুলিশকর্তার]

আজ মহামারীর কবলে আমার শহর সারা পৃথিবীজুড়ে এমনিতেই ত্রাস তৈরি করে দিয়েছে। এত সংখ্যায় মানুষ আক্রান্ত যে আমরা বাসিন্দারা আক্রান্তের স্ট্যাটিস্টিক্স দেখাও বন্ধ করে দিয়েছি। শপিং মল বন্ধ, রেস্তরাঁয় কেউ গিয়ে বসে খায় না, গ্রসারির সামনে ছফুটের বাধা মেনে লম্বা লাইন, অর্ধেকের বেশি জিনিসপত্র বাজার থেকে উধাও! আমাদের শান্তিবিঘ্ন করার জন্য কি এতটাই যথেষ্ট ছিল না! তারপর এল আমফান, তিনদিন বাবা-মায়ের দেখা পাইনি, পাইনি বন্ধুবান্ধবের খবর। প্রকৃতি আর ভাইরাস কি যথেষ্ট ছিল না আমাদের জন্য? আজ যখন আমার অতি কাছের মানুষ আমার ভ্রাতৃসম সাংবাদিককে নিউজ কভার করতে গিয়ে মার খেতে দেখি, তখন আর যে স্থির থাকতে পারছি না! 

ম্যানহাটনের কেন্দ্রবিন্দুতে বহুতল বাড়ির টপ ফ্লোরে থাকায় হেলিকপ্টারটা যেন ঠিক আমার মাথার ওপর ঘুরছে আজ! এসির শব্দ ছাপিয়ে ভেসে আসা হেলিপ্টারের ব্লেডের আওয়াজের কোথা থেকে যেন মিশে গেছে ইউটউবে শোনা মানুষটির শ্বাসরুদ্ধ যন্ত্রণাময় আর্তি “প্লিজ, আই ক্যান্ট ব্রিদ”। চোখ বুজলে না হয় জোর করে অন্ধকারকে বুকে টেনে নেওয়া যায়, কিন্তু কান দুটোকে কী করে বন্ধ করি? আর ইন্দ্রিয় ছাপিয়ে ভেসে আসা মানুষের আর্তি, তাকে যে কী করে আটকাই?

[আরও পড়ুন: ফ্লয়েড হত্যায় উত্তপ্ত আমেরিকা, জুকারবার্গের বিরুদ্ধে সরব ফেসবুক কর্মীরা]

The post ‘এ কোন ম্যানহাটন?’, অবরুদ্ধ মার্কিন মুলুকের ছবি তুলে ধরলেন প্রবাসী বাঙালি appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement