সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: "মেয়েরা হল ফুলের মতো। তাঁরা গৃহপরিচারিকা নন।" হিজাব আইন বিতর্ক তথা নারী স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে বুধবার টুইট করলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনেই। আগেই জানা গিয়েছিল ইরানে আপাতত লাগু হচ্ছে না বিতর্কিত হিজাব আইন! এর পর খামেনেইয়ের নরম মন্তব্যে প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ ভূতের মুখে রাম নাম কেন?
বুধবার খামেনেই টুইট করেন, "মেয়েরা ফুলের মতো, তাঁরা গৃহপরিচারিকা নন। ঘরে ঘরে একটি ফুলের মতোই নারীদের সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত। ফুলের যত্নের প্রয়োজন হয়। ফুলের সতেজতা এবং মিষ্টি ঘ্রাণে অন্যরা উপকৃত হন, সুগন্ধীময় হয়ে ওঠে বাতাস।" যখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এই মন্তব্য করছেন, তখন বিতর্কিত হিজাব আইন নিয়ে প্রতিবাদ সরব সে দেশের অসংখ্য নারী। বছর দুয়েক আগে ঠিকমতো হিজাব না পরার অপরাধে নীতি পুলিশের মারে ইরানে মৃত্যু হয়েছিল কুর্দ তরুণী মাহসা আমিনির। মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল গোটা দেশ। শুরু হয়েছিল হিজাব বিদ্রোহ। যা নাড়িয়ে দিয়েছিল ইসলামিক দেশটির ‘মোল্লাতন্ত্র’কে। তীব্রতা কমলেও তারপর থেকে জারি রয়েছে হিজাববিরোধী আন্দোলন। প্রশ্ন উঠছে, নাগরিকদের প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপেই কি পিছু হঠছে ইরানের প্রশাসন? নাকি সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেস্কিয়ানের ছোঁয়ায় ‘খোলা হাওয়া’ বইছে ইরানে?
মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির মানবাধিকার কর্মী এবং উদারপন্থীরা বলছেন, খামেনেইয়ের এই বক্তব্যও আসলে মেয়েদের ঘেরাটোপে বেধে রাখারই বার্তা। আরও একটি টুইটে যা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। তিনি সেখানে লেখেন, "মহিলা ও পুরুষদের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা রয়েছে পরিবারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পুরুষের দায়িত্ব উপার্জন করা। মেয়েরা সন্তানপালন করেন। কেউ ছোট বা বড় নন। দুটি সম্পূর্ণ আলাদা মেধার কাজ। অতএব, এই কাজের ভিত্তিতে নারী ও পুরুষের অধিকার স্থির হওয়া উচিত নয়।"
খামেনেইয়ের আমলেই সবচেয়ে বেশি দমন-পীড়ন হয়েছে মেয়েদের উপরে। পুরুষসঙ্গী ছাড়া ঘরের বাইরে বেরনো নিয়েই জারি হয়েছে বিধিনিষেধ। মৌলবাদী সেই ধর্মীয় নেতার থেকে মেয়েদের সম্পর্কে এমন মন্তব্য আশা করাই যায়, বলছে ওয়াকিবহাল মহল। উল্লেথ্য, প্রস্তাবিত হিজাব আইনে বলা হয়েছে, মহিলাদের কঠোরভাবে হিজাব বিধি মেনে চলতে হবে। সব সময় মাথার চুল, কাঁধ ও পা ঢেকে রাখতে হবে। যদি এই নিয়ম কেউ না মানে তাহলে নেমে আসবে শাস্তির খাঁড়া। জরিমানা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ সাজা হিসাবে ১৫ বছরের কারাবাস হতে পারে। এই আইনের খবর প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় ওঠে। ইরানিদের পাশাপাশি এই হিজাব আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো একাধিক মানবাধিকার সংগঠনও।