সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বলতে দ্বিধা নেই, ভারতবর্ষের একভাগের কাছে আজও স্পোর্টস মানেই ক্রিকেট কিংবা নিদেনপক্ষে ফুটবল। খেলকুঁদের দুনিয়ায় আরও একগুচ্ছ নাম থাকলেও সেভাবে জনপ্রিয়তার মাপকাঠির শীর্ষ ছুঁতে পারেনি তারা। সাঁতার, তিরন্দাজী, বক্সিং থেকে সাঁতার, দাবা খেলা, ভারতের নবীন প্রজন্মের অনেকেই এদিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু সিনেপর্দা অবধি পৌঁছতে পেরেছে ক্রিকেট-ফুটবল, কাবাডি কিংবা বক্সিং। চৌষট্টি খোপের খেলা নিয়ে 'শতরঞ্জ কে খিলাড়ি' তৈরি করেছিলেন সত্যজিৎ রায়ও। তবে এই প্রথমবার কোনও গ্র্যান্ডমাস্টারের সংগ্রামকাহিনী পর্দায় ফুটে উঠছে এই বাংলায়। নেপথ্যে টলিপাড়ার হিট মেশিন জুটি নন্দিতা-শিবপ্রসাদের উইন্ডোজ প্রযোজনা সংস্থা।
সদ্য প্রকাশ্যে এসেছে 'দাবাড়ু'র ট্রেলার (Dabaru Trailer)। পথিকৃৎ বসুর সিনেম্যাটিক ক্যানভাসের ঝলক দেখে শুভেচ্ছার জোয়ারে ভরিয়ে দিয়েছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়দের মতো দক্ষ পরিচালকরা। ছবিতে কোচের ভূমিকায় অভিনয় করা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। তাঁর মন্তব্য, "বিদেশে যখন খেলোয়াড় তৈরি হয়, তখন রাষ্ট্র তার পাশে দাঁড়ায়। আর এদেশে তৈরি হয়ে যাওয়ায় পর পাশে দাঁড়ায়।" ক্রীড়াদুনিয়ার ব্যক্তিত্বরা বরাবর এমন মত পোষণ করেছেন। সেই কথাই এবার চিরঞ্জিতের মুখে।
গর্বিত সৃজিত বলছেন, প্রথমবার ভারতে দাবার গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়ে ছবি। গোটা টিমের জন্য গর্বিত। কৌশিকের কথায়, "ধারাবাহিকভাবে সরল শৈশব ও কৈশোর জীবন ও তার ভালোবাসার কথা একমাত্র বলে চলেছে উইন্ডোজ! বারবার। হামি, রসগোল্লা, লক্ষ্মীছেলে, মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি, রামধনু, পোস্তো, বলে শেষ হবে না! এবার দাবাড়ু। কোনও এক পবিত্র দায়িত্ব ওদের মনে গেঁথে আছে, তার জন্যই এমন ছবি বারবার তৈরী হচ্ছে। পরিচালক হিসেবে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো। কিস্তিমাত করে দিক পথিকৃতের ছবি।"
এক ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাড়ির শৈশবজুড়ে দাদুর হাত ধরে দাবার সঙ্গে পরিচয়ের স্মৃতি। যা তাঁকে দৌড় করায় নাস্তানাবুদভাবে। সংসারে যেখানে অন্নসংস্থানের লড়াইটাই বড় হয়ে ওঠা, সেই বাড়ির ছেলে খেলবে দাবা! ক্রিকেট, ফুটবল খেললে স্পোর্টস কোটায় চাকরি হয়, কিন্তু দাবা? সমাজের একটা স্তরে সম্ভবত আজও এমন ধ্যানধারণা প্রচলিত। বাংলার গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনেও এহেন সংগ্রাম রয়েছে। তাঁর মায়ের অবদানও কম নয় সাফল্যের নেপথ্যে। ‘দাবাড়ু’র ট্রেলারেও মিলল সেই ঝলক।
রাজার খেলা দাবা। চৌষট্টিটা খোপই যুদ্ধক্ষেত্র। তাতে সাদা-কালোর তীব্র লড়াই। হাতিশালে হাতি আছে। ঘোড়াশালে ঘোড়া। আবার নৌকা-গজের আলাদা খেলা। সবার উপরে রাজা-রানির লড়াই। মগজাস্ত্রের জোরেই হবে কিস্তিমাত। ‘দাবাড়ু’র এই গল্প এবার নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জুটির উইন্ডোজের প্রযোজনায় বড়পর্দায় তুলে ধরছেন পরিচালক পথিকৃৎ বসু। সেই সুবাদেই বহুদিন বাদে এক ফ্রেমে দেখা গেল ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta) ও চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীকে (Chiranjeet chakraborty)।
উইন্ডোজের সঙ্গে পথিকৃতের প্রথম কাজ ‘মুক্তধারা’-র অবজারভার হিসাবে। তারপর যদিও এই হাউসের সঙ্গে তাঁর আর কাজ করা হয়নি। এই প্রথম পথিকৃৎ পরিচালক হিসাবে মেগাহিট হাউসের সঙ্গে যুক্ত। দাবা খেলাকে কেন্দ্র করে তৈরি এই গল্প নিয়ে নাকি নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটির বহুদিন ধরেই কাজ করার ইচ্ছে ছিল। এদিকে পথিকৃৎও চাইছিলেন প্রযোজক জুটির সঙ্গে ভালো কাজ করতে। ব্যস দুইয়ে দুইয়ে চার। গবেষণা করেই ‘দাবাড়ু’ তৈরির কাজে ব্রতী হয়েছে পথিকৃৎ। ছবিতে সূর্যশেখরের ছোটবেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন খুদে সমদর্শী সরকার। কিশোর সূর্যর চরিত্রে অর্ঘ্য বসু রায়।
[আরও পড়ুন: ‘দুই স্তম্ভ…’, ‘মির্জা’ কোটির ক্লাবে ঢুকতেই দেব-জিতের সঙ্গে সিনেমা অঙ্কুশের?]
‘উইন্ডোজ’-এর ছবি মানেই বিষয়ভাবনায় অভিনবত্ব। ‘বেলাশুরু’, ‘হামি ২’ থেকে ‘ফাটাফাটি’, ‘রক্তবীজ’, সবেতেই একশোয় একশো। এবার ‘দাবাড়ু’র (Dabaru Movie) পালা। বাংলার গ্র্যান্ডমাস্টার সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনের অনুপ্রেরণায় গল্প সাজিয়েছেন পথিকৃৎ। অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, দীপঙ্কর দে, খরাজ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসুর মতো অভিনেতা।