জ্যোতির্ময় কর্মকার: ‘ল্যাংড়া বুখার’-এ খোঁড়াচ্ছে রাজধানী৷ অভিজাত লুটিয়েন এলাকাই হোক বা পুরনো দিল্লির বস্তি, সব জায়গাতেই রীতিমতো মহামারীর আকার নিয়েছে চিকুনগুনিয়া৷ প্রবল জ্বর, বমি, সারা গায়ে লাল লাল দাগ৷ কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে মানুষকে রীতিমতো পঙ্গু করে দিচ্ছে সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা৷ ব্যথায় দু’পা হাঁটাও কার্যত অসম্ভব৷ স্বাভাবিকভাবেই দিল্লির বস্তি এলাকায় চলতি কথায় চিকুনগুনিয়ার নাম হয়ে গিয়েছে ‘ল্যাংড়া বুখার’৷
সোমবার স্যর গঙ্গারাম হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির৷ এর পরই ল্যাংড়া বুখারকে নিয়ে রীতিমতো অশনি মেঘ দেখছে প্রশাসন৷ কারণ এই নিয়ে চিকুনগুনিয়ায় রাজধানীতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৷ বেসরকারি মতে, সংখ্যাটা আরও বেশি৷ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখনও রীতিমতো সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন অসংখ্য রোগী৷ অনেকেরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে৷ প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও সরকারি আধিকারিকদের একাংশের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে৷ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও এতদিন মৃত্যুর খবর ছিল না৷ এবার পরিস্থিতিকে ‘মহামারী’ বলেই মানছেন তাঁরা৷ কারণ চিকুনগুনিয়া ছাড়াও ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো অন্যান্য মশাবাহিত রোগে গত কয়েকদিনেই মোট ১০ জনের মৃত্যুর খবর সরকারিভাবে নথিভূক্ত হয়েছে৷ দেশজুড়ে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১২ ও ৪০ হাজার৷ কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করা উচিত তা নিয়ে দিশেহারা প্রশাসন৷ এইমস, গঙ্গারাম, ম্যাক্স-সহ দিল্লির প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই উপচে পড়া ভিড়৷ এর মধ্যেই সরকারি আধিকারিক এবং চিকিৎসকদের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে তীব্র সংঘাত৷ কারণ অনেকেরই অভিযোগ, সুনির্দিষ্ট পরিকাঠামোর অভাবেই জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না অসংখ্য গুরুতর অসুস্থ রোগীকে৷
নিউ দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বা এনডিএমসি-র হিসাব বলছে, এখনও পর্যন্ত দিল্লি, এনসিআর-এ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মাত্র ১০৫৭৷ ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ১১৫৮ এবং ২১৷ যদিও এই পরিসংখ্যান কোনও মতেই মানতে নারাজ ডাক্তাররা৷ তাঁদের অভিযোগ, এই পরিসংখ্যান সম্পূর্ণ ভ্রান্ত৷ নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এইমস-এর এক সিনিয়র ডাক্তারবাবুর কথায়, “কর্পোরেশন যে তথ্য-পরিসংখ্যান দিচ্ছে তা থেকে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা কোনওমতেই আঁচ করা যাবে না৷ দিল্লির যে কোনও হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে গেলেই ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে৷ এখানে ৩৮টা এমার্জেন্সি বেড আছে৷ কিন্তু যে কোনও সময় গেলেই দেখা যাবে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ মানুষ যেখানে সেখানে শুয়ে রয়েছে৷”