অভিরূপ দাস: দুর্গাপুজো তো বটেই, কালীপুজোতেও ছুটি বাতিল করল পুর স্বাস্থ্যদপ্তর। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ জানিয়েছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে অক্টোবর-নভেম্বরে সমস্ত ছুটির দিনেও কাজ করবে পুরসভার স্বাস্থ্যবিভাগ।
বঙ্গে এবং শহরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৬ হাজার ছ’শো। কলকাতাতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। পুরসভা জানিয়েছে, ২০২২-এ কলকাতায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল ২৪০০। ২০২৩-এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই সংখ্যা ছুঁয়েছে ২,৭০০। জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার তিনটে বরোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ১০, ১৩ আর ১ নম্বর বরো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পুর স্বাস্থ্যদপ্তর। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, তিনটে বরোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। তবে মশা নিধনে অভিযান জারি রেখেছে পুরসভা।
[আরও পড়ুন: বদলাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিকের নিয়ম! কেমন হবে স্কুল জীবনের শেষ পরীক্ষা?]
এর মধ্যে আকারে আয়তনে দশ নম্বর বরো বৃহত্তম। এই বরোয় রয়েছে ১২টি ওয়ার্ড। একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে এই বরোতে। অভিযোগ, এরা নিজেদের প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার রাখার কাজ করছে ঢিমেতালে। তার উপর এই বরোর ৯৩ নম্বর ওয়ার্ড ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় দুটো বাড়ির মাঝে পড়ে থাকা খালি আইসক্রিমের কৌটো, ফেলে দেওয়া জলের বোতলে এডিস ইজিপ্টাইয়ের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। সম্প্রতি রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ভাঙরের বাসিন্দা মানোয়ারা বিবি (৩০)। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে মারা গিয়েছেন শান্তিপুরের বাসিন্দা সুস্মিতা মণ্ডল।
কলকাতা পুরসভার সিদ্ধান্ত, এবার থেকে আর পূর্ব নির্ধারিত তালিকা দেখে নয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির ঠিকানা দেখে ডেঙ্গু নিধনে যাবেন পুর আধিকারিকরা। মঙ্গলবার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) জানিয়েছেন, যেখানে মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন, সেখানে দ্রুত পৌঁছতে হবে। যিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁর বাড়ির আশপাশেই ডিম পাড়ছে মশাটা। সে ডিম থেকে নতুন যে মশাটা জন্মাচ্ছে, সে ডেঙ্গুর ভাইরাস নিয়েই জন্মাচ্ছে। এদিন হিসেব দিয়ে পুরসভা জানিয়েছে, আক্রান্তের পাশাপাশি অন্যান্য বছরের তুলনায় শহরে ডেঙ্গু টেস্টও বেড়েছে অনেকটাই। ২০২২-এ শহরে কলকাতা পুরসভার ক্লিনিকে সব মিলিয়ে ৯০ হাজার ডেঙ্গুর রক্ত পরীক্ষা হয়েছিল। এবার আগস্ট পর্যন্ত সে সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এখনও বছর শেষ হতে চার মাস বাকি। পুরসভা মনে করছে, বছর শেষে পুর ক্লিনিকে এই ডেঙ্গু রক্ত পরীক্ষার সংখ্যা দেড় লক্ষ ছোঁবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী এদিন বলেছেন, ‘‘জ্বর মানেই ডেঙ্গু নয়। কিন্তু জ্বর তিনদিন থাকলে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া শ্রেয়।’’
এদিন পুরসভায় ডেঙ্গু বৈঠকে স্বাস্থ্যবিভাগের মেয়র পারিষদ ছাড়াও হাজির ছিলেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরি, স্বাস্থ্যবিভাগের উপদেষ্টা ডা. তপনকুমার মুখোপাধ্যায়, মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস এবং ১৬টি বরোর এক্সিকিউটিভ হেলথ অফিসাররা। এডিস ইজিপ্টাইয়ের বাড়বাড়ন্তের মধ্যে বাংলায় আসতে চলেছে ডেঙ্গুর টিকা। পশ্চিমবঙ্গে আইসিএমআর-এর শাখা নাইসেড আগামী নভেম্বর মাসে রাজ্যের প্রায় সাড়ে দশ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপর শুরু করছে ডেঙ্গু টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। নাইসেডের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এই টিকা ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপ অর্থাৎ ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪ এই চারটি প্রজাতিকে রুখে দিতে পারবে।