অভিরূপ দাস: ঘেমে সপসপ করছে জামা। এমতাবস্থায় মাঠের ধারে হাওয়া খেতে বসে পড়ার প্রবণতা মারাত্মক। তবে এই ঘামের গন্ধেই ভনভন করে আসবে ডেঙ্গুর (Dengue) মশা। বেজায় গরমে ডেঙ্গু ঠেকাতে দিনে একাধিকবার স্নান করার পরামর্শ দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা (KMC)।
ইতিমধ্যে ডেঙ্গু ঠেকাতে ১৪৪টি ওয়ার্ডে অভিযান জোরদার করেছে পুরসভা। সপ্তাহে দু’দিন করে প্রতিটি ওয়ার্ডের বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া হচ্ছে। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, প্রতি মঙ্গলবার আর শনিবার করে যাওয়া হচ্ছে বাড়িতে বাড়িতে। দেখা হচ্ছে কোথাও জল জমিয়ে রাখা হয়েছে কি না। এই অভিযানে রাস্তায় নেমেছেন ১০০ দিনের কাজের কর্মীরাও। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং উদ্যান বিভাগের কর্মীরাও যৌথভাবে নেমেছেন অভিযানে। বাড়িতে বাড়িতে যে লিফলেট দেওয়া হচ্ছে সেখানেই গরমের দিনে একাধিকবার স্নান করার পরামর্শ দিচ্ছে পুরসভা।
কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানিয়েছেন, কলকাতায় এখন যেমন আবহাওয়া তাতে দিনে একাধিকবার স্নান করতেই হবে। কেন এমন? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, ‘‘কায়িক পরিশ্রম বেশি হলে ঘামের সঙ্গে ল্যাকটিক অ্যাসিড বেরোয়।’’ আর পুরসভার পতঙ্গবিদ বলছেন, ডেঙ্গু ছড়ানো এডিস ইজিপ্টাইকে আকৃষ্ট করে এই ল্যাকটিক অ্যাসিডের গন্ধ। এডিস মশার ওরকো এবং আইআর রিসেপ্টরে ধরা পড়ে ঘামের এই গন্ধ।
[আরও পড়ুন: শেন ওয়ার্নের বায়োপিকে যৌনদৃশ্যে ‘রক্তারক্তি’! কবজি ভাঙল অভিনেত্রীর, মাথা ফাটল অভিনেতার]
শুধু স্নান নয়, তীব্র সুগন্ধী সাবান মাখতেও বারণ করছেন পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ। দেবাশিস মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তীব্র সুগন্ধী সাবানে ধেয়ে আসে স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই। পতঙ্গবিদের কথায়, ‘‘স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাইয়ের কামড়েই ডেঙ্গু ছড়ায়। এর থেকে বাঁচতে গেলে যতক্ষণ না স্নান করছেন রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে থাকুন।’’ আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে গিয়েছে পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপের সময়ও। ক্যালেন্ডার মেনে হানা দিচ্ছে না ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া। কলকাতায় সারা বছরই প্রায় ডেঙ্গুর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, প্রতিটি থানায় বাজেয়াপ্ত গাড়িগুলি ডেঙ্গু মশার বংশবৃদ্ধির অন্যতম জায়গা। সেই গাড়িগুলোকে ক্রাশ সাইটে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করতে বলা হয়েছে কলকাতা পুলিশকে। এছাড়া, বন্ধ কল-কারখানা ও কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস চত্বরকে পরিষ্কার রাখার শিল্প দপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
‘ন্যাশনাল ভেক্টর-বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’-এর সমীক্ষা অনুযায়ী পতঙ্গবাহিত রোগের ক্ষেত্রে ভারতের মধ্যে শীর্ষস্থানে পশ্চিমবঙ্গ। গত বছর এ রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, গত বছর রাজ্যে ৬৭ হাজার ২৭১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় ৩০ জনের। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।