সুকুমার সরকার, ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ঢাকার বাসিন্দারা। এর জেরে এবার কলকাতা মডেল অনুসরণের উদ্যোগ নেওয়া হল প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে। এর আগে ঢাকায় ডেঙ্গু (dengue)-তে বহু লোকের মৃত্যু হয়েছিল। তাই প্রশাসনের চিন্তা, মহামারি করোনার সংক্রমণের মধ্যেই মরার উপর খাঁড়ার ঘা না হয়ে আসে ডেঙ্গু।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে, জানুয়ারি মাস থেকে ৫ মে পর্যন্ত ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ভরতি হওয়ার পর ২৯৮ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন। তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কলকাতার মডেল অনুসরণের তাগিদ এল উপরমহল থেকে। এপ্রসঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানান, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তাঁরা ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সভা করেছেন। পুরসভাকেও বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। ঢাকার এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কলকাতা শহরের মডেল অনুসরণ করে দীর্ঘমেয়াদে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে দুটি পুরসভাকে পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: সড়কপথে বাণিজ্যে না পশ্চিমবঙ্গের, মালবাহী রেল চলাচলের সিদ্ধান্ত নিল ভারত-বাংলাদেশ ]
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কলকাতায় একসময় কারও বাড়িতে এডিসের লার্ভা কিংবা জমানো জল পেলে মাত্র একহাজার টাকা জরিমানা করা হত। এখন তার পরিমাণ বাড়িয়ে একলক্ষ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে গত ১০ বছরে তারা ডেঙ্গুর উপদ্রব শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পেরেছে। আমাদের এখানে বেশি জরিমানা করা হলে সাধারণ মানুষ সমালোচনায় মুখর হবেন। তাই এই পদ্ধতি এখানে এখনই বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়।’
কলকাতার মেয়র ও বিশেষজ্ঞদের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সেখানে কোনও এলাকায় ডেঙ্গুর উপস্থিতি পাওয়া গেলে ওই এলাকা লকডাউন করা হয়। আর ওই এলাকার এডিস মশা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ফলে ওই মশা অন্য এলাকায় যেতে পারে না। আমাদের এখানে এক এলাকায় ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানো হলে মশাগুলো অন্য এলাকায় চলে যায়। ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসে না। এর জন্য আমরা পুরসভাকে কলকাতার মডেল অনুসরণ করতে বলেছি। কারণ কলকাতার আলো, বাতাস, পরিবেশ ও মানুষের সংস্কৃতি প্রায় আমাদের মতোই। ওই মডেল এখানেও কার্যকর হবে। এছাড়া কলকাতার কোনও এলাকায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে র্যাপিড অ্যাকশন চিকিৎসা টিম ওই রোগীকে হাসপাতালে ভরতি করে দেয়। তিনি কীভাবে আক্রান্ত হলেন তার বিবরণ জেনে ডেঙ্গুর উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করে নির্মূল করা হয়। এভাবে তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে।’
[আরও পড়ুন: ‘বন্দে ভারত মিশন’-এ উদ্ধারকাজ, সাতটি বিমানে ফিরছেন বাংলাদেশে আটকে থাকা ভারতীয়রা]
গতবছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে মানুষের অসহায় অবস্থার মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও ঢাকার দুই পুরসভা জোরকদমে মাঠে নেমেছিল। পরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমার সঙ্গে সঙ্গে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। বর্তমানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা কেউ বুঝতে পারছেন না। নাগরিকরা বলছেন, ঢাকায় অন্য সময়ের চেয়ে এখন মশার উৎপাত বেশি। এই বিষয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়রকে সতর্ক করেও বক্তব্য রেখেছেন। এবার মানুষকে সচেতন করতে গণমাধ্যমে প্রচারের উপরও জোর দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মহম্মদ তাজুল ইসলাম সতর্ক করে বলেছেন, ‘এডিস মশা নিধনের প্রধান শর্ত হল বাড়ির ভিতরে ও বাইরে যেন জল না জমে। ভাড়াবাড়ি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবন বা চত্বরে মশার বংশবিস্তার সক্ষম পরিবেশ দেখা গেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের তরফে জরিমানা করা হবে। জমে থাকা জলে এডিস মশা সহজেই বংশবিস্তার করতে পারে। কাজেই বাসাবাড়ি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদ, বাথরুমের কমোড-সহ নির্মাণাধীন বিভিন্ন জায়গায় জল জমে থাকলে তা নিজ নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করতে হবে। সরকারি ভবনগুলোর ক্ষেত্রে এই কাজ করবে পূর্তমন্ত্রক।’
[আরও পড়ুন: সড়কপথে বাণিজ্যে না পশ্চিমবঙ্গের, মালবাহী রেল চলাচলের সিদ্ধান্ত নিল ভারত-বাংলাদেশ ]
The post ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ‘কলকাতা মডেল’ অনুসরণের উদ্যোগ হাসিনা প্রশাসনের appeared first on Sangbad Pratidin.