shono
Advertisement

পারিবারিক দুর্যোগ এড়াতে বিনিয়োগ হোক ধনতেরসে

অর্থাভাব, এমনকী মৃত্যুর হাত থেকেও কী ভাবে রক্ষা করে ধনতেরস? The post পারিবারিক দুর্যোগ এড়াতে বিনিয়োগ হোক ধনতেরসে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:58 PM Oct 27, 2016Updated: 03:28 PM Oct 27, 2016

সুমিতা ভাস্কর: দুর্গাপুজোর পাট এ বছরের মতো শেষ৷ কিন্তু উৎসবের মরশুম তো সবে শুরু৷ পুজোর গায়ে গায়েই মিটে গিয়েছে লক্ষ্মীপুজোও৷ সামনের তালিকা এখন অতি দীর্ঘ৷ দীপাবলি, ভাইফোঁটা, জগদ্ধাত্রী পুজো, আরও কত কী রয়েছে৷ তার আগেই কিন্তু রয়েছে আরও একটি উৎসব৷ গত দু’দশকে বাঙালি এর সঙ্গে বেশ স্বচ্ছন্দ্য হয়ে উঠেছেও৷ বারো মাসে তেরো পার্বণের বাঙালির জীবনে এ কিন্তু চতুর্দশ পার্বণ৷ ধনতেরস বা ধনত্রয়োদশী৷

Advertisement

সম্পদের দেবতা কুবের

কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী৷ এই সন্ধ্যায় আরাধনা করা হয় ধনপতি কুবেরের৷ হিন্দুদের মধ্যে রাবণ কোথাও বিশেষ পাত্তা না পেলেও দশাননের এই দাদাটি কিন্তু উত্তর ও পশ্চিম ভারতে বেশ জনপ্রিয়৷ বিশেষত বণিক মহলে দেবতা হিসাবে তাঁর প্রচুর খাতির৷ এই দিনটির অন্য একটি পরিচিতিও রয়েছে৷ ধনত্রয়োদশীর পাশাপাশি দিনটি ধন্বন্তরি ত্রয়োদশী নামেও পরিচিত৷ এই দিনটিকে চিকিৎসকদের ঈশ্বর বা ঈশ্বরদের চিকিৎসক ধন্বন্তরির জন্মদিন হিসাবেও মনে করা হয়৷ সমু্দ্র মন্থনের পর এই দিনেই অমৃতের ভাণ্ড হাতে ধন্বন্তরি উঠে এসেছিলেন বলে মনে করা হয়৷ তাই এটি ধন্বন্তরির জন্মদিন৷ আর সর্বরোগহর সেই অমৃতের স্পর্শেই সবরকম রোগবালাই এমনকী, মৃত্যু থেকেও সুরক্ষিত হয়েছিলেন দেবতারা৷ ধন্বন্তরির জন্মদিবস হিসাবেও দিনটির আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে৷ কিন্তু তার থেকেও বেশি করে কুবের আরাধনার দিন হিসাবেই ধনতেরসের পরিচিতি বহুল৷ কারণ লক্ষ্মী বা কুবের, যাঁকে আরাধনা করেই ঘরে ধনসম্পদের বাড়বাড়ন্ত, তাতে কারই বা আপত্তি হয়!

দেব চিকিৎসক ধন্বন্তরি

ফলে কুবেরের আরাধনায় ব্রতী হন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ৷ প্রধানত উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বাসিন্দারাই৷ বণিক শ্রেণির মধ্যেই এর বহুল আয়োজন৷ পুজোর কেন্দ্রীয় চরিত্র রামায়ণের হলেও এর পিছনের গল্পটি কিন্তু মহাভারত থেকে নেওয়া৷ তরুণ রাজা হিমের কোষ্ঠীতে ছিল বিয়ের চার দিনের মধ্যে সর্পাঘাতে মৃত্যুর যোগ৷ কিন্তু তাতে বিয়ের অনুষ্ঠান আটকাল না৷ বিয়ের সময়েই সে কথা জানতে পারলেন হিমের সদ্যপরিণীতা স্ত্রীও৷ কেটে গেল তিনটি দিন৷ নির্দিষ্ট দিনটিতে স্বামীর সঙ্গে ঘরের দরজা বন্ধ করলেন স্ত্রী৷ তার আগে তাঁর সমস্ত স্বর্ণালঙ্কার ও স্বর্ণমুদ্রা বিছিয়ে দিলেন ঘর জুড়ে৷ জ্বালিয়ে দিলেন অজস্র আলো৷ স্বামীকে কিছুতেই ঘুমোতে দিলেন না৷ নানা কথায় গল্পে তাঁকে জাগিয়ে রাখলেন৷ গভীর রাতে সাপের বেশে রাজা হিমের শয়নকক্ষে ঢুকলেন স্বয়ং যম৷ কিন্তু ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও স্বর্ণমুদ্রায় আর আলোতে ঝলসে গেল তাঁর চোখ৷ আর উল্টোদিকে নতুন রানি তখন একের পর এক গল্প শুনিয়ে চলেছেন  তাঁর স্বামীকে৷ গল্পে মোহিত হয়ে গেলেন সর্পবেশী যমও৷ যখন তাঁর হুঁশ ফিরল ততক্ষণে সকাল হয়ে গিয়েছে৷ চুপচাপ ফিরে গেলেন মৃত্যুর দেবতা৷ রক্ষা পেলেন তরুণ রাজা৷ নতুন রানির বুদ্ধির জোরেই প্রাণরক্ষা হল তাঁর স্বামীর৷ সেই থেকেই এই দিনটি ধনতেরস বা ধনত্রয়োদশী হিসাবে পালন করা হয়৷

তৈজসের উৎসব

ঘরে সঞ্চিত সমস্ত অর্থসম্পদ, ধনদৌলত, সোনা, রুপো এবং অন্যান্য সমস্ত মূল্যবান সম্পত্তি এনে তা নিবেদন করা হয় ঈশ্বরকে৷ প্রধানত কুবেরের আরাধনা করা হলেও, অনেক বাড়িতেই এর সঙ্গে লক্ষ্মীর আরাধনাও করা হয়৷ সারারাত জেগে চলে আরাধনা– গান, পুজো প্রভৃতি৷ এরই সঙ্গে এই দিনে প্রধানত সোনা ও রুপো কেনার চল রয়েছে৷ এছাড়া অন্যান্য ধাতুর কেনাবেচাও চলে পুরোমাত্রায়৷ আসলে এই দিনে তৈজসপত্র কেনার একটা প্রচলন রয়েছে বহুকাল ধরেই৷ সামর্থ্য ভেদে কেউ কেনেন রুপোর বাসন আবার কেউ কেনেন কাঁসা, পিতল কিংবা নিদেনপক্ষে স্টিল৷ আসলে এই দিনে বাসন বা অলঙ্কার যে রূপেই ধাতু কেনা হোক না কেন, তা অক্ষয় হয় বলেই হিন্দুদের বিশ্বাস৷ এই ধাতু গৃহে সৌভাগ্য ডেকে আনে বলেও মনে করা হয়৷ একই সঙ্গে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও ধুমধাম করে পালন করা হয় এই ধনতেরস উৎসব৷ আসলে বাণিজ্যেই তো লক্ষ্মীর বসত৷ তাই অগত্যা!

স্বর্ণ বিনিয়োগ

তবে গত দুই থেকে আড়াই দশকে এই ধনতেরস উপলক্ষে দেশের বাণিজ্য ক্ষেত্র বিপুলভাবে চাঙ্গা হয়ে ওঠে৷ শুধু পুজোপাঠ উপলক্ষেই নয়৷ শুধুমাত্র বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই৷ ওই যে বললাম, তেরো পার্বণের দেশের চতুর্দশ পার্বণ৷ হুজুগে বাঙালি কিংবা বানিয়া গুজরাতি, বিন্দাস পাঞ্জাবি কিংবা হিসেবি ইউপিওয়ালা– উৎসব হোক বা রোজকার প্রয়োজন, গত তিন দশকে ধনতেরস উপলক্ষে দেশজুড়ে যে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য হয়, হয় টাকার লেনদেন, কেনাকাটা তা অন্য কোনও উৎসব ঘিরে হয় না৷ এমনকী, দুর্গাপুজো বা দীপাবলি উপলক্ষেও নয়৷ কারণ প্রধানত দু’টো৷ দুর্গাপুজো সারা বিশ্বে সামগ্রিক ব্যপ্তি পেলেও তা প্রধানত বাঙালিদের উৎসব৷ আর এই পুজোর মরশুমে নানাবিধ জিনিসের কেনাকাটার কথা ধরা হলেও পুজোর কেনাকাটা বলতে কিন্তু প্রধানত সোনা-রুপোর কেনাকাটার কথা বোঝায় না৷ ফলত, ধনতেরসের লেনদেনে সারা দেশের বাণিজ্য যে বিপুল অঙ্কে পৌঁছয় তা অভাবনীয়৷ সোনারুপোর পাশাপাশি অন্যান্য ধাতব দ্রব্যের বিকিকিনিও ব্যাপক হারে চলে৷ তার সঙ্গে যোগ হয় বিভিন্ন সংস্থার কুবের আরাধনা৷ যাকে বলে সোনায় সোহাগা৷

বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী

কুবের আরাধনার অবশ্য অন্য আরেকটি দিকও রয়েছে৷ প্রধান উদ্দেশ্য অবশ্য যে কোনও প্রকারে ঘরকুনো মানুষকে বাণিজ্যমুখী করা৷ বিশেষত বাঙালি৷ বাঙালিরা চিরকালই সাবধানী, ঘরকুনো, ঝুঁকি নিতে পছন্দ না করা গোত্রের৷ বিশেষত বাংলার রেনেসাঁর পর থেকে তার প্রবণতা আরও বেশি চোখে পড়ে৷ রবীন্দ্রনাথ যাকে বলেছেন, ‘ভদ্র মোরা শান্ত বড় পোষমানা এ প্রাণ’৷ যে কারণে ঔপনিবেশিক ইংরেজ বাঙালিকে কাজে লাগিয়েছিল প্রধানত কলম পেষার কাজেই৷ চাঁদ সদাগর নিছকই ব্যতিক্রম৷ তবে গত কয়েক দশকে ভাবনাচিন্তায় বেশ কিছুটা বদল দেখা যাচ্ছে৷ এখন বাঙালিও বণিক দলে নাম লেখাচ্ছে৷ বাড়ছে শেয়ার কেনাবেচার প্রবণতা৷ আসলে ধীরে ধীরে ক্রমেই আরও বাণিজ্যমনস্ক হচ্ছে বাঙালি৷ আর তার অঙ্গ হিসাবেই কুবের আরাধনার চলও বাড়ছে৷ সঙ্গে বাড়ছে ধনতেরসের আয়োজন৷ শুধু গয়না কিংবা বাসনপত্র কেনাই নয়, বহু বাঙালি বাড়িতেই এখন কার্তিকের কৃষ্ণ ত্রয়োদশীতে কুবের পুজো হয়৷ লম্বা লাইন লাগে সোনার দোকানের বাইরে৷ ধনতেরসের আগের দিন ও ধনতেরসের দিন সারারাত চলে বিপুল কেনাবেচা৷ আসলে কেনাকাটার উপলক্ষেই রাতাজাগার কাজটাও সারা হয়ে যায়৷ ওই যে শুরুতে মহাভারতের যে গল্পটা বললাম, তাতে যে রাত জেগে থাকার আখ্যান শোনানো হল, সেটার কথাই বলছি৷ ফলে একই সঙ্গে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না৷ জুয়েলারি শপিংও হল আর সঙ্গে রাত জাগা৷ আর ওই দিনগুলোতে সোনার দোকানে যে ভিড় থাকে, তাতে রাত না জাগলে দোকানিরাই বা সামাল দেবেন কী করে! বড়, মাঝারি, ছোট, সব দোকানই এই উপলক্ষে নানা ছাড়, প্রতিযোগিতা আর উপহারের আয়োজন করে৷ সুযোগ দেয় পুরনো গয়নাকে বদলে নতুন করে নেওয়ার৷ কোনও কোনও সংস্থা আবার তার সঙ্গে আয়োজন করে মেহেন্দি পরানোর৷ দীপাবলির আগে সাজগোজের এই উপরি পাওনাই বা মন্দ কী! আসলে বাণিজ্যের দেবতার উপলক্ষে বাণিজ্যেই বড়সড় জোয়ার৷

সোনাঝরা ত্রয়োদশী

অবশ্য সাম্প্রতিক কালে সোনার পাশাপাশি অন্যান্য নানা জিনিস কিনেও বিনিয়োগের ধারাকে অন্য পথে চালিত করার একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে আম আদমির মধ্যে৷ কেউ কেনেন সোনার কিংবা রুপোর কয়েন৷ কেউ কেনেন গোল্ড সার্টিফিকেট৷ তবে ভারতীয় মহিলা বিশেষত বাঙালিনীদের যে গহনাপ্রীতি তা যে কোনও ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানকে সাত হাত দূরে ফেলে দেয়৷ ফলে সবচেয়ে বেশি বিক্রি নিশ্চিতভাবেই চুড়ি, বাউটি, কঙ্কণ, নেকলেস, ঝুমকো, পাশা, আংটি কিংবা সীতাহারের৷ প্ল্যাটিনামও দৌড়ে সমানতালে পা মেলাচ্ছে৷ সোনাকে হারাতে না পারলেও প্রায় প্রথমদিকেই রয়েছে হীরেও৷ তবে যা-ই কেনা হোক না কেন, তা মহামূল্যবান ধাতু কিংবা রত্নই৷ কর্তাও হয়তো ভাবেন গয়না কিনে তাঁর ইনভেস্টমেন্টও হল আবার গিন্নিটিও খুশি রইলেন৷ ধনতেরসের আসল সার্থকতা বোধহয় এখানেই৷

The post পারিবারিক দুর্যোগ এড়াতে বিনিয়োগ হোক ধনতেরসে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement