সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রোহিত গুরুনাথ শর্মা কখনওই ভেবেচিন্তে কিছু করেন না। ভবিষ্যতে কী হবে, ভাবতে যান না। যখন যা ঠিক মনে হয়, করে দেন। সাত মাস পূর্বের ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ফাইনালে হারার পর রোহিত ভাবেননি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবেন। এবং জিতবেন। আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামার আগেও ভাবেননি যে, ট্রফি জিতে অবসরে চলে যাবেন!‘‘অত ভেবেচিন্তে আমি কোনও সিদ্ধান্ত নিই না। ভবিষ্যৎ নিয়েও অত ভাবতে যাই না। মন যা চায়, তাই করি। গত ওয়ান ডে বিশ্বকাপের পর যেমন ভাবিনি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা খেলব,’’ বিশ্বজয়ী হওয়ার পর নির্বাচিত কিছু মিডিয়াকে বলে দিয়েছেন রোহিত। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘আমি যেমন ভাবিনি, টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়ে নেব। কিন্তু পরিস্থিতিটাই এমন হল যে নিয়ে ফেললাম। বিশ্বকাপ জেতার পর মনে হল, এটাই সঠিক সময় টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দেওয়ার। ট্রফি জিতে সরে যাওয়ার চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে?’’ তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দিলেও আইপিএল খেলা চালিয়ে যাবেন রোহিত।
ভারত অধিনায়ক (Rohit Sharma) বিশ্বাস করেন, জয়-পরাজয় সবই ক্রিকেট বিধাতার হাতে। সাত মাস আগে আমেদাবাদে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে হারটাও যেমন অদৃষ্ট নিয়ন্ত্রিত ছিল, বার্বাডোজে সতেরো বছর পর দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ও তাই। ‘‘উপরওয়ালা যা লিখে রেখেছেন, তাই তো হবে। আমার তো মনে হয়, উপরওয়ালা লিখে রেখেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (ছবি) আমরা জিতব। তাই জিতলাম,’’ হাসতে-হাসতে বলতে থাকেন রোহিত। ‘‘কী জানেন, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে হলে সব কিছু ঠিক হতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফাইনালে একটা সময় আমরা বেশ পিছিয়েই ছিলাম। একটা সময় মনে হচ্ছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা সহজেই ফাইনালটা জিতে যাবে,’’ হেনরিক ক্লাসেনের বিস্ফোরক ইনিংসের কথা মনে করিয়ে বলে দিয়েছেন রোহিত। দেখতে গেলে, যাঁর ক্রিকেটজীবনের একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল বার্বাডোজে বিশ্বজয়ে। ২০০৭ সালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ক্রিকেটজীবন শুরু হয়েছিল রোহিতের। যাঁর টি-টোয়েন্টি সফর শেষও হল বিশ্বজয় দিয়ে। অধিনায়ক হিসেবে!
[আরও পড়ুন: ক্রিকেটার থেকে ধারাভাষ্যকার, বহু ভূমিকার পর কোহলিদের মেন্টর পদে প্রত্যাবর্তন কার্তিকের]
‘‘আমার তখন মাত্র কুড়ি বছর বয়স। এখন আমি প্লেয়ারদের বলি, অমুক ভূমিকা তোমায় পালন করতে হবে। তমুক কাজ করতে হবে। তখন আমারও নির্দিষ্ট ভূমিকা ছিল টিমে। তখন আমি পাঁচ কিংবা ছ’নম্বরে ব্যাট করতে যেতাম। ম্যাচকে ভালো ভাবে ফিনিশ করা আমার কাজ ছিল,’’ বলে দিয়েছেন রোহিত। এগারো বছর পর এই প্রথম কোনও আইসিসি ট্রফি জিতল ভারত। ২০১৩ সালে ধোনির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় ছিল ভারতবর্ষের শেষ আইসিসি ট্রফি। ‘‘আমার জীবনে এটাই সম্ভবত শ্রেষ্ঠতম মুহূর্ত। বলে বোঝাত পারব না, এই ট্রফিটা ঠিক আমি কতটা চেয়েছিলাম। এত দিন যত রান-টান আমি করেছি, ঠিক আছে। কিন্তু ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান আমার কাছে বিশেষ পাত্তা পায় না। দেশের হয়ে খেলা, দেশের হয়ে ট্রফি জেতাই আমার আসল মোক্ষ।’’ বিশ্বজয়ের পর হাঁটু মুড়ে মাঠের মধ্যে শুয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে রোহিতকে। দীর্ঘ সময় মাঠে উপুড় হয়ে তিনি পড়েওছিলেন। ‘‘খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম ভেতরে ভেতরে। তখন মনে মনে কী ভাবছিলাম, বলতে চাই না। কিন্তু আবেগ সম্পূর্ণ গ্রাস করেছিল আমাকে,’’ বলে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক।
যিনি শেষে সেলাম ঠুকে গেলেন বিরাট কোহলি এবং রাহুল দ্রাবিড়কে। রোহিত বলছিলেন, ‘‘আমাদের চেয়েও বেশি রাহুল ভাইয়ের (দ্রাবিড়) ট্রফিটা প্রাপ্য। গত কুড়ি-পঁচিশ বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের যে সেবা করে গিয়েছে রাহুল ভাই, তার পর ওর ক্যাবিনেটে এই ট্রফিটা থাকা উচিত ছিল। ভেবে ভালো লাগছে, রাহুল ভাইকে ট্রফিটা দিতে পারলাম আমরা। আর বিরাট? ও যে কত বড় প্লেয়ার সবাই জানে। সবাই জানে, দেশের ক্রিকেটের প্রতি ওর ঠিক কতটা অবদান। বিরাট টুর্নামেন্টের আগেই ভেবে রেখেছিল যে, বিশ্বকাপের পর ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিতে চায়। ফাইনালে চ্যাম্পিয়নের মতো ব্যাট করে গেল ও। যেমন করে থাকে।’’