রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। শাসকদলের প্রার্থী তালিকায় পয়লা নম্বরের হেভিওয়েট। তাঁর বিরুদ্ধে কে প্রার্থী হবেন, সেই নিয়ে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা। কত নাম নিয়ে জল্পনা। শেষমেশ এমন একজনকে গেরুয়া শিবির প্রার্থী করল, রাজ্য রাজনীতিতে যাঁর বিশেষ পরিচিতি নেই। এর আগে দুবার ভোটে লড়েছেন। জেতা তো দূরের কথা সেভাবে লড়াইও করতে পারেননি। অন্তত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার সামনে পাতে দেওয়ার যোগ্য নয়। তাহলে কেন প্রার্থী করা হল অভিজিৎ দাসকে (Abhijit Das)?
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, অভিষেকের বিরুদ্ধে হার অনিবার্য, এটা জেনেই বিজেপির নেতারা হয়তো পিছিয়ে আসছিলেন। সেকারণেই শেষমেশ ঘরের ছেলের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে সংঘকে। অভিজিৎবাবু আক্ষরিক অর্থেই সংঘ পরিবারের ঘরের ছেলে। এর আগে ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে ডায়মন্ড হারবারে বিজেপির টিকিটে লড়েছেন। এ কথা ঠিক যে তিনি সেভাবে দাগ কাটতে পারেননি, কিন্তু দলের কঠিন সময়ে সঙ্গও ছাড়েননি। তাছাড়া রাজ্য রাজনীতিতে সেভাবে পরিচিত না হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার রাজনীতিতে তিনি বেশ পরিচিত। সেই ১৫ বছর বয়স থেকে সংঘ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। এখনও রাজ্য বিজেপির (BJP) নির্বাচন পরিচালন কমিটিতে রয়েছেন তিনি। একটা সময় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বিজেপির সভাপতি ছিলেন। জেলার কর্মীদের কাছে পরিচিত 'ববিদা' হিসাবে। এলাকায় সমাজসেবী হিসাবে নামডাক আছে। বিজেপি কর্মীরা বলেন, সমাজসেবা নাকি তাঁর নেশা। রাজনীতিটাও তেমনই। তাঁকে প্রার্থী করার নেপথ্যে সংঘের যুক্তি, ও পুরনো লোক। ডায়মন্ড হারবারের ভূমিপুত্রও বটে। তাছাড়া লড়াই যখন কঠিন, তখন ভাঁড়াটে সৈন্যর থেকে ঘরের লোকে আস্থা রাখাটাই শ্রেয়।
প্রসঙ্গত, অভিষেকের বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসাবে বিজেপির তরফে অনেক নামই ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। একটা সময় শোনা যাচ্ছিল আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি (Nawsad Siddique) প্রার্থী হলে তাঁকে পরোক্ষে সাহায্য করতে পারে বিজেপি। নওশাদ সরে যাওয়ার পর শোনা যাচ্ছিল, কোনও হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়ে অভিষেককে নিজের কেন্দ্রেই বিপাকে ফেলার চেষ্টা করা হবে। সে তালিকায় বেশ কয়েকটি নাম শোনাও যাচ্ছিল।
[আরও পড়ুন: গোয়া নির্বাচনে ছিলেন আপের আর্থিক দায়িত্বে, লোকসভা ভোটের আগে ইডির হাতে গ্রেপ্তার সেই চনপ্রীত]
এক প্রাক্তন ছাত্রনেতা, যিনি তৃণমূল (TMC) থেকে বিজেপিতে গিয়েছেন। এক অভিনেতা তথা বিজেপি নেতা, এক আইনজীবী, যিনি কংগ্রেস (Congress) থেকে বিজেপিতে গিয়েছেন, বিজেপির এক শীর্ষ মহিলা নেত্রী, এমন অনেকের নামই শোনা যাচ্ছিল। তবে স্থানীয় স্তরে অভিজিৎ দাসের নামটাও জল্পনায় ছিল। বিজেপির সূত্র বলছে, প্রার্থী হিসাবে অনেকের নামই ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো সাহস কেউ সেভাবে দেখাতে পারেননি। তাছাড়া সংঘ পরিবার চাইছিল অভিজিৎবাবুকে প্রার্থী করতে। তাঁর নাম ঘোষণায় দেরি, কারণ রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) ও সংঘ পরিবার অভিজিৎকে প্রার্থী করতে চাইলেও দলের ভিতরে মতবিরোধ ছিল। তবে শেষমেশ ভূমিপুত্রেই ভরসা রাখল গেরুয়া শিবির।