জাতীয় পুরস্কার জয়ী পরিচালক সুজিত সরকার। আগামী দিনে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের পরিকল্পনা তাঁর। সাক্ষাৎকার নিলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়
এটা আপনার প্রথম জাতীয় পুরস্কার নয়। এর আগে ‘ভিকি ডোনার’ এবং ‘পিঙ্ক’-এর জন্যও পেয়েছিলেন। কিন্তু ‘সর্দার উধম’-এর জন্য পাঁচটা পুরস্কার পাওয়া কতটা স্পেশাল?
– এই ছবিতে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে যারা কোলাবোরেট করেছে, তাদের সঙ্গে আমি বহুদিন ধরেই কাজ করি। এবং সিনেমাটোগ্রাফি, কস্টিউম, প্রোডাকশন ডিজাইন-সহ ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর-এ পুরস্কার পাওয়ার জন্য আমি খুব খুশি। এখানে তো গান দিয়ে ওরিজিনাল স্কোর তৈরি করা হয়, সেদিক থেকে দেখতে গেলে শান্তনু (মৈত্র) খুব ভাল কাজ করেছে। একটা ছবির জন্য পাঁচটা পুরস্কার পাওয়া কম কথা নয়।
‘সর্দার উধম’ খুব সহজ ছবি নয়। এই ছবির মাউন্টিং, ইতিহাস, বাজেট, রিলিজ- সব মিলিয়ে ফিরে তাকালে কী মনে হয়?
– ইট ওয়াজ কোয়াইট আ প্রিপারেশন! ছবির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ফর্ম-এ আটকে গিয়েছিলাম একটা সময়ে। অনেক সময় ফর্ম-এ মন দিতে গিয়ে যে মেন ন্যারেটিভ তাতে অবহেলা করা হয়ে যায়। একটা ব্যালান্স রাখতে চেয়েছিলাম। পিরিয়ডটা ক্রিয়েট করা এবং দর্শককে এনগেজ করে সেই সময়ে পৌঁছে দেওয়াটা সমানভাবে পেরেছি বলে মনে হয়। পিরিয়ড ফিল্ম অথচ আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক, কারণ বিপ্লবীদের আধুনিক চিন্তাভাবনা, তাদের যাপন– তারা আজকের দিনের মানুষের চেয়ে আলাদা নয়, সেটা বোঝাতে পেরেছি। সেই সব মানুষের কথা, ‘ফর্ম’, ‘ক্যানভাস’, ‘মাউন্টিং’-এ হারিয়ে যায়নি। এইটা এই ছবির গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে আমার মনে হয়। চেয়েছিলাম, সাধারণ মানুষ যেন ‘উধম’-এর সঙ্গে রিলেট করে, ছবির ক্যানভাসের দিকে ফোকাস না করে।
এই যে চরিত্রের গভীরে ঢুকে যাওয়া, এটা আপনার প্রতিটা ছবিতেই থাকে…
– হ্যাঁ, আমি সবসময়ই চেষ্টা করি চরিত্ররা কী ভাবছে, তাদের মাথায় কী চলছে সেটা সহজ করে সামনে আনা। আর ‘উধম’ যেহেতু বেশি কথা বলে না, ওর জার্নিটা খুব ইন্টারনাল ছিল। জালিয়ানওয়ালা বাগ-এ যে মৃত্যু মিছিল দেখেছিল সেটা সারাজীবন ও বয়ে বেড়িয়েছে। সেটাকে এই চরিত্রের মধ্যে দিয়ে সামনে আনা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল।
আমাদের দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনের ছবি হলেই তাতে উগ্র জাতীয়তাবাদের ছাপ থাকে। ‘সর্দার উধম’ একেবারেই তেমন ছবি না হয়ে ওঠে সেটা নিয়ে সতর্ক ছিলেন?
– পরিচালক হিসাবে আমি বিশ্বাস করি যে বিপ্লবী মানেই যে কট্টর জাতীয়তাবাদী হবে এমন নয়। কোনটা র্যাশনাল, কোনটা ঠিক, কোনটা সত্যি– সেটাকে মাথায় রাখতে হবে। ফ্রিডম, ফ্রিডম অফ স্পিচ সবার জন্যই সত্যি! জাতীয়তাবাদের আগে হিউম্যানিটি আসে, ইকুয়্যালিটি আসে। এটা আমারও বক্তব্য।
‘উধম’-এর চরিত্রে ভিকি কৌশল এসেছিলেন ইরফান খানের জায়গায়। এবং তাঁর অভিনয় মনে রাখার মতো। আপনি আশাহত হয়েছেন ভিকি জাতীয় পুরস্কার না পাওয়ায়!
– এই ছবিতে ভিকি কৌশলকে, সর্দার উধম মনে হয়েছে সবসময়। ও যেভাবে চরিত্রের দাবি অনুযায়ী একটা ১৯ বছরের ছেলে থেকে পরিণত ‘উধম’ হয়ে উঠেছে– সেই জার্নিটা মারাত্মক। সেটা দেখে আমার মনে হয়েছিল ওর জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত। খুব সূক্ষ্ম, প্লেয়িং টু দ্য গ্যালারির ব্যাপারটা নেই। আমাদের এখানে আসলে দারুণ সংলাপ না বলা হলে অ্যাক্টিং মনে হয় না। কিছু না করাও যে অভিনয় সেটা অনেকেই বোঝে না।
ভিকির সঙ্গে কথা হয়েছে?
– এমনিই কথা হয়েছে। আমি বললাম, তুই পেলে ভাল হত! ও বলল, ‘ঠিক আছে, আমরা তো পেয়েছি এতগুলো, কোনও ব্যাপার না…’।
ইরফান খানকে ডেডিকেট করেছেন এই জাতীয় পুরস্কার। কতটা মিস করেন অভিনেতাকে?
– কোথাও না কোথাও একটা গিল্ট রয়েই যায়। যে এই চরিত্রটা ইরফানের করার কথা ছিল। ওর সঙ্গে কাজটা করা হল না ওর অসুস্থতার জন্য। ওঁকে ছাড়া আর কাকে ডেডিকেট করব। ওঁকে যত ডেডিকেট করব, কম পড়বে।
আপনার প্রতিটা ছবি একটা আরেকটার থেকে আলাদা। সেভাবে দেখতে গেলে কোনও সিগনেচার স্টাইল নেই। সেটা কি ইচ্ছে করেই?
– অত কনশাসলি তো ভেবে দেখিনি। এটা তো বলা মুশকিল। চরিত্রদের ভিতরে ঢুকে সহজ করে গল্প বলা, এটাই বোধহয় চেষ্টা করি।
পরিচালক হিসাবে আপনাকে আবার কবে পাব? বাংলায় কোনও কোলাবোরেশন ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর পর?
– খুব শিগগিরই জানাব। হিন্দি ছবি প্ল্যান করছি। এখনই বলার সময় আসেনি। আর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা চলছে, ফাইনাল হলে জানতে পারবে।