সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এখনও দিওয়ালির (Diwali) ঘোর কাটেনি দেশে। বহু জায়গাতেই আলোর রোশনাই রয়ে গিয়েছে। আজ আবার নাগ চতুর্থী। এই দিনে ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে নাগ দেবতার পুজো হয় সাড়ম্বরে। তাতে অবশ্য কিছুই এসে যায় না অন্ধ্রপ্রদেশের এই গ্রামে। কারণ গত ২০০ বছর ধরে এখানে দীপাবলিতে কেউ প্রদীপ জ্বালেনি। আলোর উৎসবে মাতেনি কেউ। নাগ চতুর্থী নিয়েও আহ্লাদ নেই এখানে।
গত বছরের মতোই এবছরও মহামারীর রক্তচক্ষু শাসাচ্ছিল সাধারণ মানুষকে। শেষ পর্যন্ত সেই বাঁধা ডিঙিয়ে উৎসবে মেতেছে মানুষ। ভাইরাসের কথা ভেবেই আদালতের নির্দেশে দিওয়ালিতে নিষিদ্ধ ছিল আতসবাজি পোড়ানো। ছাড় ছিল কেবল পরিবেশবান্ধব সবুজবাজিতে। তবে কিনা অন্ধ্রপ্রদেশে রণস্থল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পোন্নানাপালেম গ্রামের তাতে কী! গত ২০০ বছর ধরেই যে তারা দীপাবলি উদযাপন করেন না । ফলে আলোর রাতেও অন্ধকারে গ্রাম! কিন্তু কেন? কেন দীপাবলি ও নাগ চতুর্থী পালন করা বন্ধ করে দিল পোন্নানাপালেমের অধিবাসীরা? এর পিছনে কি রয়েছে নিছক কোনও কুসংস্কার?
[আরও পড়ুন: কেন গোটা দেশজুড়ে পালিত হয় দীপাবলি? উৎসবের আনন্দে গা ভাসানোর আগে জেনে নিন কারণ]
আমাদের কাছে কুসংস্কার মনে হলেও, পোন্নানাপালেম গ্রামের বাসিন্দারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, তাঁরা দীপাবলি ও নাগ চতুর্থী পালন করলে ভয়ংকর অনিষ্ট ঘটে যাবে তাঁদের গ্রামে। বহু বছর আগে ভারতের আর পাঁচটা গ্রামের মতোই পোন্নানাপালেম গ্রামেও দীপাবলি পালিত হত হই হই করে। চতুর্দশীর দিন থেকে শুরু হত উৎসব। এরপর এক সপ্তাহ ধরে দীপাবলি পালিত হত। দীপাবলি পরবর্তী চতুর্থীতে পালিত হত নাগ চতুর্থী। কিন্তু সেবার ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। নাগ চতুর্থীর রাতে নাগ পুজোর উৎসবে গ্রামের এক শিশুকন্যার মৃত্যু হল সাপের কামড়ে। ২০০ বছর আগে একইদিনে অপঘাতে মারা যায় গ্রামের দু’টি ষাঁড়ও। দুইয়ে মিলে গ্রামবাসীর মনে প্রবল ভীতি জন্মায় । তাঁরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন, দীপাবলি ও নাগ চতুর্থী পালন করলে অকল্যাণ হবে গ্রামে। হয়তো মৃত্যু হতে পারে আরও কারও। সেই থেকেই নাগ চতুর্থী ও দীপাবলি পালন বন্ধ হয়ে যায় অন্ধ্রপ্রদেশের পোন্নানাপালেম গ্রামে।
[আরও পড়ুন: রান্নাঘরে ১৩ বছর আগের এঁটো বাসন, আবর্জনা! বিশ্বের সবচেয়ে অপরিচ্ছন্ন বাড়ির অন্দরমহল দেখেছেন?]
এই দুশো বছরে নতুন প্রজন্ম কি দীপাবলি উদযাপনের দাবি তোলেনি? অবশ্যই তুলেছে। কিন্তু সেই দাবি মানতে রাজি হননি গ্রামের প্রবীণরা। কারণ, এর মধ্যে আরও একটি অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গিয়েছে গ্রামে। গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, কয়েক বছর আগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দীপাবলি পালন করেছিলেন তিনি। এর কিছু দিন পর মৃত্যু হয় তাঁর ছেলের। তবে কি সত্যিই এই গ্রামের দীপাবলি ও নাগ চতুর্থী উদযাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অপমৃত্যুর অভিশাপ? নাকি নিছকই কুসংস্কার? সে কথা জানেন না পোন্নানাপালেমের অধিবাসীরা। তবে এবারও তারা দীপাবলি পালন করেননি। জ্বালাননি প্রদীপ। আতসবাজি তো বহুদূর। নাগ চতুর্থীর দিনেও ২০০ বছর আগের শোকের অন্ধকারে ডুবে রয়েছে গোটা গ্রাম।