স্টাফ রিপোর্টার: চারিদিকে মৃত্যুর খবর। কিছুক্ষণ আগে যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, পাশের বেডের সেই রোগী নিথর হয়ে গিয়েছে আচমকাই। এমতাবস্থায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড আক্রান্তরা। এদিকে বাড়ির লোকের সঙ্গেও দেখা হচ্ছে না দীর্ঘদিন। পিপিই পরা নার্সদের সঙ্গে কতক্ষণই বা কথা বলা যায়? মনমরা সেই রোগীদের চাঙ্গা করতে হাতে মাইক্রোফোন তুলে নিলেন হাসপাতালের সুপার ডা. অমিয় বেরা। পিপিই পরেই গিটার হাতে হাসপাতালে প্যাথোলজি বিভাগের চিকিৎসক। এক লহমায় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের কোভিড ওয়ার্ড হয়ে গেল সঙ্গীতানুষ্ঠানের মঞ্চ।
গিটার হাতে চিকিৎসক অনির্বাণ দত্ত গাইলেন উই শ্যাল ওভার কাম। যে গানের তালে তালে নাচলেন কোভিড ওয়ার্ডের নার্সরাও। মনমরা করোনা রোগীদের ঠোঁটের কোণে খেলে গেল আত্মবিশ্বাসের হাসি। সম্প্রতি এমন ছবি দেখা গিয়েছিল কানাডার একটি হাসপাতালে। সেখানে আইসিইউতে ভরতি এক রোগীর মনের জোর বাড়াতে গান গেয়েছিলেন নার্স। ১০ হাজার ৯৭২ কিলোমিটার দূরের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল সুপার অমিয় বেরার হাত ধরে।
[আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে এগিয়ে এলেন না কেউ, BJP নেতার শেষকৃত্য সারলেন তৃণমূল কর্মীরাই]
এই মুহূর্তে ১৭০ জন কোভিড রোগী ভরতি রয়েছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। অনেকেরই বয়স ষাটের উপরে। সুপার জানিয়েছেন, অন্যান্য অসুখের সঙ্গে করোনার বিস্তর ফারাক। বাড়ির লোকেরা কোভিড ওয়ার্ডে প্রবেশ করতে পারেন না। সারাদিন একা একা কাটাতে হয় রোগীদের। অনেকেরই চোখেমুখে আতঙ্ক। হয়তো ভাবছেন, আবার প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা হবে তো? কোভিড ওয়ার্ডের ভিতর একটি স্পিকার রয়েছে। নিজের ঘরে বসে মাইক্রোফোনে সেই স্পিকারেই কর্মরত নার্সদের চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশ পাঠান সুপার। সেখান থেকেই আসে বুদ্ধি।
সুপার জানিয়েছেন, কোভিড রোগীদের অবসাদ কাটানো আশু প্রয়োজন। হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ দত্ত পেশাদার গায়কও বটে। তাঁকেই গিটার নিয়ে আসতে বলেন সুপার। চলে আসেন নার্সরাও। কোভিড রোগীদের শোনানো হয়, উই শ্যাল ওভার কাম। গান শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি অনেকেই। মৃদু গলায় রোগীরা জানিয়েছেন, ডাক্তারবাবুরা যখন এত চেষ্টা করছেন, করোনাকে হারিয়ে আমরা জিতবই জিতব। ডা. অনির্বাণ দত্তর কথায়, করোনা রোগীদের অবসাদ কাটাতে পেরে ভালো লাগছে। সম্প্রতি দিল্লিতে চারিদিকে কোভিডে আক্রান্ত মৃতদেহ দেখে আত্মহত্যা করেছিলেন হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডাক্তার ড. বিবেক রাই। ডা. দত্তর কথায়, সাধারণ রোগীদের মনের আতঙ্ক আমাদের কাটাতেই হবে।