shono
Advertisement

ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু, ৬ মাসের জন্য বর্ধমানের চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন বাতিল

স্বাস্থ্যদপ্তরের তদন্ত করে গাফিলতির অভিযোগের সত্যতা পায়।
Posted: 10:11 AM Mar 05, 2023Updated: 10:11 AM Mar 05, 2023

অর্ক দে, বর্ধমান: ভুল চিকিৎসার কারণে এক রোগী মৃত্যুর ঘটেছিল। স্বাস্থ্যদপ্তরের তদন্ত করে গাফিলতির অভিযোগের সত্যতা পায়। তার ভিত্তিতে বর্ধমানের এক চিকিৎসক অনলদেব বসুর রেজিস্ট্রশন ৬ মাসের জন্য বাতিল করল ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল। কয়েকদিন আগে মেডিক্যাল কাউন্সিলের তরফে বর্ধমানের চিকিৎসক অনলদেব বসুকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ছ’মাস কোনও ধরনের চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে তিনি আর যুক্ত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তী ফোনে বলেন, “চিকিৎসা সংক্রান্ত গাফিলতির কারণেই ওই চিকিৎসককে ৬ মাসের জন‌্য বরখাস্ত করা হয়েছে। চিকিৎসক যদি ৩ মাসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে পারবেন। তাঁকে পুনরায় অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” যদিও অনলদেববাবু এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

[আরও পড়ুন: তিপ্রার সঙ্গে কাজ করতে আপত্তি নেই, ত্রিপুরার ‘মহারাজ’কে জোটের বার্তা বিজেপির!]

জানা গিয়েছে, বর্ধমান শহরের কাঁটাপুকুর এলাকার বাসিন্দা হৃদয়কুমার দে। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তাঁকে বর্ধমানের খোশবাগান এলাকার একটি বেসরকারি নার্সিংহোম ভরতি করা হয় ছিকিৎসক অনলদেব বসুর অধীনে। কিছুদিন ভরতি থাকার পর তাঁকে ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি নার্সিংহোম থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একদিন পরেই অর্থাৎ ওই বছর ৮ জানুয়ারি তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ওই নার্সিংহোমে ভরতি করা‌ হয়। সেদিনই মারা যান তিনি। ঘটনায় ওই নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ করেন হৃদয়বাবুর স্ত্রী মীরা দে। ঘটনার তদন্ত করে স্বাস্থ্যদপ্তর। পূর্ব বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় তদন্ত করে রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিলে ২০১৭ সালের ১২ জুন এই সংক্রান্ত বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেন। তাতে গাফিলতি ও ভুল চিকিৎসা হয়েছে বলে জানানো হয়।

মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, হৃদয়বাবুকে টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগী হিসেবে চিহ্নিত করেন চিকিৎসক। কিন্তু সেই সংক্রান্ত কোনও রক্ত পরীক্ষাই করা‌ হয়নি। স্বাস্থ্যদপ্তর রোগীর ‘বেড হেড টিকিট’ (বিএইচটি) পরীক্ষা করে জানতে পারে রোগীকে কী চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। একইসঙ্গে বিএইচটি পরে পরিবর্তন বা কিছু যুক্ত করা‌ হয়েছে বলেও স্বাস্থ্যদপ্তরের সন্দেহ বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা‌ হয়েছে। রোগীকে অনৈতিকভাবে টাইপ-২ ডায়াবেটিক রোগী বলে উল্লেখ করায় রোগীর পরিবারের লোকজন বিমার ৭৪ হাজার ৮৬ হাজার টাকা থেকেও বঞ্চিত হন। ২০১৭ সালের ১ জুন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরে শুনানির আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে রোগীর পরিজন কোনও আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিতে অস্বীকার করেন। তাঁরা ওই চিকিৎসক ও নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন। পুরো বিষয় উল্লেখ করে মেডিক্যাল কাউন্সিলে রিপোর্ট পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।

[আরও পড়ুন: কফ সিরাপে বিষ! উজবেকিস্তানে শিশুমৃত্যুর পরই দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার প্রস্তুতকারক সংস্থার ৩]

গত ১৬ ফেরুয়ারি ‘এক্সট্রা অর্ডিনারি মিটিং’ করে রাজ্য মেডিক্যাল কউন্সিল। সেখানেই চিকিৎসক অনলদেব বসুকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এরপরই অনলদেব বসুর রেজিস্ট্রেশন ৬ মাসের জন্য বাতিল করা‌ হয়। হৃদয়বাবুর ছেলে শিবপ্রসাদ দে বলেন, “বাবার মৃত্যুর পর সব ঘটনা জানিয়ে স্বাস্থ্যদপ্তর, প্রশাসনিক স্তরে সর্বত্র আমার মা অভিযোগ জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ করা হয়েছিল। মেডিক্যাল কাউন্সিল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও আমার মা দেখে যেতে পারলেন না এই রায়। তদন্ত চলাকালীন উনি গত হয়েছেন।”

একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে তাঁরা মামলা করেছেন। একইসঙ্গে ওই চিকিৎসকের এমডি ডিগ্রিকে চ্যালেঞ্জ করেও মামলা করেছেন। যদিও তা এখনও আদালতের বিচারাধীন রয়েছে। চিকিৎসক অনলদেব বসু অবশ্য বলেন, “ভুল চিকিৎসা হয়েছে কি না সেই বিষয়টি এখনও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। রেজিস্ট্রেশন ছ’মাস বাতিল করার বিষয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি এই বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement