অভিরূপ দাস: হাসপাতাল না টাইটানিক জাহাজ বোঝা দুষ্কর। একদিকে টানা কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি অন্যদিকে ডিভিসি থেকে জল ছাড়ায় ডুবে গিয়েছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর। প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চারিদিকে যতদূর চোখ যায়, ধূ ধূ করছে ফেনিল জলরাশি। তারই মধ্যে দিয়ে কার্যত সাঁতার কেটে হাসপাতালে পৌঁছলেন ডা. তারক দাস, ডা. প্রভাস দাস আর এনাস্থেসিস্ট ডা. অশোক খাঁড়া। করোনা আবহেও যেখানে চিকিৎসক নিগ্রহ গা-সওয়া, রোগীর মৃত্যু হলেই তাঁদের পরিবারের হাতে জুটছে লাঞ্ছনা। সেই সময়ই অনন্য নজির হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের (Udaynarayanpur) চিকিৎসকদের। প্রায় ৪০০ মিটার কোমর জল সাঁতরে তাঁরা পৌঁছলেন অস্ত্রোপচার করতে। এরই মধ্যে উদয়নারায়ণপুরে বন্যায় জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরীর। আপনাদের ভয় লাগেনি? এহেন প্রশ্নে অকুতোভয় চিকিৎসকরা। জানিয়েছেন, রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন ছিল। তাঁকে বাঁচানোটাই ছিল প্রধান কর্তব্য।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ৪৮ বছরের দীপালী মালিকের জরায়ু থেকে দীর্ঘদিন ধরেই রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। প্রথমটায় তিনি ভেবেছিলেন কেটে গিয়েছে। বয়সজনিত কারণে ঋতুশ্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছে দীপালীদেবীর। টানা ৩০ দিন পরেও রক্ত বন্ধ না হওয়ায় সন্দেহ হয় হাওড়ার জয়নগরের বাসিন্দার। চলে আসেন উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। দীপালীকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন অতিকায় এক টিউমার হয়েছে তাঁর জরায়ুতে।
[আরও পড়ুন: শিলিগুড়ি থেকে কলকাতায় ২৫ লক্ষ টাকার কাঠ পাচারের চেষ্টা, বমাল গ্রেপ্তার দুই সরকারি আধিকারিক ]
এদিন সেই টিউমারটিই অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয়। তিন চিকিৎসকের টিমে ছিলেন ডা. তারক দাস, ডা. প্রভাস দাস এবং ডা. অশোক খাড়া। এছাড়াও ছিলেন অপারেশন থিয়েটারের নার্সরা। প্রায় এক ঘন্টার এই অস্ত্রোপচারের নাম হিসটেরেকটমি। হিসটেরেকটমি অপারেশনের মাধ্যমে ইউটেরাস বা জরায়ু বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে এই অপারেশনের পর রোগীর ঋতুশ্রাব হয় না গর্ভধারণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে রোগীর বয়স ৪৮ হওয়ায় তা নিয়ে কোনও সমস্যা ছিল না।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ছোটোখাটো তরমুজের আকারের টিউমারটির ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম। এই মুহূর্তে জলের তলায় উদয় নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। ইমার্জেন্সি থেকে আউটডোর সবই জলের নীচে। চারিদিকে কিলবিল করছে বিষধর সাপ। রোগীরাই যেখানে আসতে দু’বার ভাবছেন সেখানে সাঁতরে এসে অপারেশন করার এই ঘটনায় কুর্ণিশ জানিয়েছেন দীপালীদেবীর পরিবার।