ইন্দ্রনীল শুক্লা: শোনা যায়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বাঙালির প্রিয় দুর্গাপুজোকে সর্বজনীন করে তোলার পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। সিমলা ব্যায়াম সমিতি, বাগবাজার সার্বজনীন, কুমারটুলি-সহ বহু পুজোয় তিনি সভাপতিও হন। কিন্তু শুধুই কি পুজো? একেবারেই নয়। আসলে পুজো এবং উৎসবের আড়ালে তিনি বিপ্লবী গড়ার কাজ করেছেন একটা সময়ে। দেশপ্রেমী যুবকদের তালিম দিয়ে দলবদ্ধ করাই ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য। তাই শক্তি আরাধনার আসর তৈরি করে তিনি আসলে যুবকদের লাঠিখেলা, কুস্তি, ছুরিখেলার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। সামনে থেকেছে দুর্গাপুজো, পিছনে হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী গড়ার তোড়জোড়।
নেতাজির সংগ্রামকালের এমনই এক অন্য রকম অধ্যায় নিয়ে তৈরি হয়েছে অবন্তী সিনহা পরিচালিত তথ্যচিত্র ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ারশিপ।’ ফিল্মস ডিভিশন-এনএফডিসির উদ্যোগে তৈরি এই ডকুমেন্টারিটি প্রথমবারের জন্য দেখতে পাওয়া যাবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। ১৮ ডিসেম্বর দুপুর দেড়টায় শিশির মঞ্চে এবং ২০ ডিসেম্বর দুপুর দুটোয় নন্দন-৩ এ।
[আরও পড়ুন: দশম বর্ষে গোবরডাঙা নকসার জাতীয় নাট্যোৎসব, দেখা যাবে মহারাষ্ট্র, মণিপুর, কাশ্মীরের নাটক]
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে পরিচালক অবন্তী বলেন, ‘‘রিসার্চ শুরু করে দেখতে পাই, দেশের একাধিক জেলে থাকার সময়ে সেখানেই দুর্গাপুজো করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন নেতাজি। এ ভাবে পুজোর ছত্রছায়ায় বিপ্লবীদের জড়ো করার পরিকল্পনা তাঁর মাথায় অনেক দিন ধরে ছিল। ক্রমে তা পূর্ণাঙ্গ আকার নেয়। তাছাড়া আধ্যাত্মিকতার দিক দিয়ে দেখলে নেতাজি আগাগোড়াই স্বামী বিবেকানন্দর ভক্ত ছিলেন। স্বামীজির দৃঢ় চরিত্র গঠন এবং দেশসেবার আদর্শ তাঁকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।’’
প্রসঙ্গত, এর আগে অবন্তী লুপ্তপ্রায় ছৌ নাচ ‘পরভা’ নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন। আবার সিকিমে অর্ধশতাব্দী প্রাচীন বৌদ্ধ জল-উৎসব ‘ভুমচু’র উপরেও ডকুমেন্টারি বানিয়েছেন। দু’টি ছবিই দেশ-বিদেশের নানা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত ও পুরস্কৃত হয়েছে। এটি তাঁর তৃতীয় তথ্যচিত্র।
নেতাজি কেমন করে স্বাধীন সংগ্রামের পাশাপাশি দেশকে সংস্কার কাটিয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, তথ্যচিত্রে তা-ও স্থান পেয়েছে। দেশের কাজে মহিলাদের যুক্ত করে তাঁদের স্বাবলম্বী করে তোলারও চেষ্টা করেছেন তিনি। দেশমাতৃকা, দুর্গাপুজো আর নারীশক্তির জাগরণ মিলেমিশে গিয়েছে তাঁর কাজে। আবার সশস্ত্র বাহিনীতে যে মহিলাদের নেওয়া যেতে পারে, এটা বিশ্বকে প্রথম নেতাজিই দেখিয়েছেন বলে পরিচালকের দাবি। মোটের উপর নেতাজির কর্মধারার কিছু দিককে খানিকটা অন্যভাবে খোঁজার চেষ্টা হয়েছে তথ্যচিত্রটিতে।