বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত ও সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: ভারতের সাংবিধানিক ইতিহাসে তৈরি হল নতুন অধ্যায়। এই প্রথম সংবিধানের অভিভাবক পদে বসলেন অনগ্রসর শ্রেণির এক নারী। নাম তাঁর দ্রৌপদী মুর্মু (Draupadi Murmu)। বিপুল ভোটে প্রতিপক্ষ যশবন্ত সিনহাকে হারিয়ে তিনি নাম তুললেন ইতিহাসের পাতায়। ভারতের ১৫ তম রাষ্ট্রপতি (President) হিসেবে রাইসিনা হিলসের অধিবাসী হলেন দ্রৌপদী ঝাড়খণ্ডের নেত্রী। দেশের দ্বিতীয় মহিলা রাষ্ট্রপতি হলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধের পর ফলাফল ঘোষণা হতেই শুভেচ্ছার বন্যায় ভাসছেন দ্রৌপদী মুর্মু। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে তাঁর বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রতিপক্ষ হলেও সৌজন্যের ঘাটতি রাখেননি বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহা (Yashwant Sinha)। সবার আগে তিনিই বিবৃতি দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নতুন রাষ্ট্রপতিকে। আশাপ্রকাশ করেছেন, তাঁর সময়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। টুইটে শুভেচ্ছা জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
আগাম ইঙ্গিত ছিলই, আদিবাসী নেত্রী দ্রৌপদী মুর্মুই দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন। বৃহস্পতিবার গণনার শুরু থেকেই তিনিই এগিয়ে ছিলেন। সন্ধের পর গণনা শেষ হলে দেখা যায়, বিরোধী প্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে বিপুল ভোটে তিনি হারিয়েছেন। অঙ্ক বলছে, তৃতীয় রাউন্ড শেষে দ্রৌপদী মুর্মুর পক্ষে পড়েছে ৮১২টি ভোট। আর যশবন্ত সিনহা পেয়েছেন ৫২১ ভোট। ১৫ জন সাংসদের ভোট বাতিল হয়। ১৭জন বিরোধী সাংসদ তাঁদের প্রার্থীকে সমর্থন করেন বলে দাবি বিজেপির। দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষে দ্রৌপদী মুর্মুর জয় কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায়। বর্ণানুক্রমিকভাবে প্রথম ১০টি রাজ্যের গণনা শেষে দ্রৌপদী মুর্মু ১৩৪৯টি ও যশবন্ত সিনহা ৫৩৭টি ভোট পান। দু’জনের ভোটের মূল্যের ব্যবধান দাঁড়ায় প্রায় ৩ লক্ষের। তৃতীয় রাউন্ডের শেষেই জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায় করেন নেন নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। কারণ জয়ের জন্য প্রয়োজন ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার ২৬১। তৃতীয় রাউন্ডের শেষে এনডিএ প্রার্থীর ভোটের মূল্য দাঁড়ায় ৫লক্ষ ৭৭ হাজার ৭৭৭। শেষমেশ দ্রৌপদীকেই জয়ী ঘোষণা করে দেন রাজ্যসভার সাধারণ সচিব পি সি মোদি।
[আরও পড়ুন: মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই! ৬০০ কোটির সম্পত্তি দান উত্তরপ্রদেশের চিকিৎসকের]
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের (Presidential Election) দিন ভোটে ‘টাকার খেলা’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন যশবন্ত সিনহা। কিন্তু ফলপ্রকাশের পর হেরে গিয়েও তার আর রেশ রইল না তাঁর মনে। বরং খোলা মনেই দ্রৌপদী মুর্মুকে শুভেচ্ছাবার্তা লিখলেন তিনি। আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন বিরোধীদের ভূমিকাও। ‘গীতা’র কিছু অংশ তুলে তাঁর বক্তব্য, ফলের আশা না রেখে কাজ করে যাওয়াটাই প্রকৃত ‘কর্ম’। তাই বিরোধী দলগুলি নিজেদের কাজ করবে, তাতেই গণতন্ত্র আরও মজবুত হবে।
কথা ছিল, সন্ধেবেলা দ্রৌপদীর দিল্লির বাড়িতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি (PM Modi)। তাই ফল ঘোষণা হতেই সেখানে গেলেন প্রধানমন্ত্রী, সঙ্গে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। পুষ্পস্তবক দিয়ে অভিননন্দন জানানো হয় তাঁকে। এরপর তিনজন বসে কথা বলেন। পরে টুইটেও মোদি শুভেচ্ছা জানান। দেশের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতিকে টুইটে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
শুক্রবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের বিদায় উপলক্ষে নৈশভোজের আয়োজন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার সরকারিভাবে কোবিন্দকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সোমবার সংসদের সেন্ট্রাল হলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেবেন পরবর্তী দ্রৌপদী মুর্মু। তাঁর শপথে বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও বিরোধী দলের নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। মঙ্গলবার বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা প্রধানমন্ত্রীর।