সুকুমার সরকার, ঢাকা: ‘অশালীন’ পোশাক নিয়ে মন্তব্যের প্রতিবাদে হাই কোর্টের সামনে বেনজির বিক্ষোভ। ‘মাই বডি, মাই চয়েস’ এবং ‘নজর সামলে রাখুন’ স্লোগান হাতিয়ার করে সোমবার আদালতের সামনে বিক্ষোভ দেখান একদল তরুণী। তাঁদের স্পষ্ট কথা, কে কেমন পোশাক পরবে সেটা সম্পূর্ণ তাঁর নিজের ইচ্ছা নির্ভর। এক্ষেত্রে আদালতের মন্তব্য কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কেন এই বিক্ষোভ? গত ১৮ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে আক্রান্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। প্রচণ্ড মারধর করা হয় তাঁকে। সেই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। হামলাকারীর দাবি, ওই তরুণী ‘অশালীন’ পোশাক পরেছিলেন। এই ঘটনায় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে অবশেষে নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করে। ওই তরুণীকে হেনস্তা ও মারধরের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত মার্জিয়া আখতার ওরফে শিলাকে পুলিশ ৩০ মে গ্রেপ্তার করে। তারপর বিষয়টি হাই কোর্ট অবধি গড়ায়। গত বুধবার তরুণীকে হেনস্তার প্রসঙ্গ নিয়ে হাই কোর্ট প্রশ্ন করে, “সভ্য দেশে এমন পোশাক পরে রেলস্টেশনে যাওয়া যায় কি না?” আদালতের বক্তব্য, “ওই তরুণী প্ল্যাটফর্মে আপত্তিকর অবস্থায় ছিলেন, সিডিতে দেখা যাচ্ছে।” আদালতের এই মন্তব্যের পরেই তরুণীরা প্রতিবাদ জানান।
[আরও পড়ুন: তৈরি নতুন নীতি, বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজের সময় বেঁধে দিল ইউজিসি]
সোমবার ১৪ জন তরুণী ঢাকায় হাই কোর্টের সামনে প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থান করে নিজেদের হাতে ও মুখে বিভিন্ন স্লোগান লিখে প্রতিবাদ জানান। এই অবস্থান কর্মসূচি চলে প্রায় ৪৫ মিনিট। যেসব স্লোগান লিখে তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম-‘জনপরিসরে আমার স্বাধীনতা কই’, ‘চোখ সরা’, ‘অশ্লীল লাগে’, ‘মাই বডি, মাই চয়েস’, ‘নজর সামলে রাখুন’, ‘আমি স্বাধীন’, ‘শরীর আমার, পোশাকের স্বাধীনতা আমার, আপনি বলার কে?’ এ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অহিংস অগ্নিযাত্রা’। এর আহ্বায়ক ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও আন্দোলনকর্মী অপরাজিতা সংগীতা। প্রতিবাদ কর্মসূচির সংগঠক অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি তৃষিয়া নাশতারান। এ কর্মসূচিতে অংশ নেন শিল্পী, সংগঠক, নাট্যকর্মী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, আলোকচিত্রী, গবেষক, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, উন্নয়নকর্মী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী-সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য, এই বিষয়ে তৃষিয়া নাশতারান বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে উচ্চ আদালতের বক্তব্য যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তা যদি সত্য হয়, তবে তা নারীর সমান অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার মানদণ্ড এবং বর্তমান সরকারের নারীর ক্ষমতায়নসংক্রান্ত নীতির বিরোধী। তা ছাড়া এ ধরনের মন্তব্য প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিদের উদ্বুদ্ধ করবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা স্বাধীন পোশাকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান জানাতে বের হয়েছি। এটি কোনও মিছিল বা সমাবেশ নয়। আমাদের স্বাধীন অবস্থানই আমাদের প্রতিবাদ। আমাদের দাবি একটাই, পোশাকের স্বাধীনতা। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে যাঁর যে পোশাক ভাল লাগবে, তিনি সেটাই পড়বেন।”