ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: আবেগে চোখ-মুখ কুঁচকে যায়। গলায় হা-হুতাশ। দুঃখে ভেঙে পড়েছেন। কিন্তু চোখে একফোঁটা জল নেই! এমনই এক সমস্যায় ভুগছেন বারাসতের রবীন মল্লিক। মেডিক্যালের রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অফ অফথ্যালমোলজি (আরআইও)-তে পরীক্ষা করে জানা গেল, ৩৮ বছরের রবীন ভুগছেন ড্রাই আইজ বা ‘স্টিভেন জনসন সিনড্রোম’ রোগে। রবীন একা নন। এমন অসংখ্য মানুষ ড্রাই আইজ সমস্যায় ভুগছেন। ক্রমশ ভিড় বাড়ছে রাজ্যের সরকারি, বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালে।
প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি চোখে লুব্রিক্যান্ট দিয়ে উপসর্গমুক্ত করা হয় রোগীদের। কিন্তু রোগ শুরুতেই বিনষ্ট করার তেমন কোনও উপায় নেই। এবার সেই অন্ধকার জায়গাটাতেই ভরসা দেখাল আরআইও’র একটি গবেষণা। হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সলিল মণ্ডলের কথায়, গলার ভিতরের যে অংশে লালারস উৎপাদন হয় সেখানে অস্ত্রোপচার করে চোখের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ফলে আবেগ বা দুঃখ যে কোনও অবস্থায় চোখের জল বের হয়। চোখ ভিজে থাকে। অন্ধত্বের সম্ভাবনা কমে।
[আরও পড়ুন: দেশের অপমানে মালদ্বীপকে বয়কট! ‘অতিথি দেব ভব’ সংস্কৃতির পাঠ দিলেন ভারতীয় তারকারা]
আবার একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ল্যাকটোব্যাসিলাসের মতো বিশেষ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া-ডায়েরিয়া কমিয়ে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজে লাগে। এই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আটকানো সম্ভব ড্রাই আইজের সমস্যা। বস্তুত, এই আবিষ্কারে উৎসাহিত চক্ষু বিশেষজ্ঞরা। ড্রাই আইজ নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে সারা দুনিয়ায় পথিকৃৎ এস ফ্লাগফেল্ডারের নেতৃত্বে হওয়া ওই গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রো-বায়োটিক বা বন্ধু ব্যাকটেরিয়ার কামাল। গবেষকরা প্রথমে ইঁদুরের উপর গবেষণা করে দেখেন পাকস্থলী, অন্ত্র এবং চোখ-সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মিউকাসের পিছনে থাকা ব্যাকটেরিয়া (প্রো-বায়োটিক) ল্যাকটোব্যাসিলাসকে অ্যাম্পিসিলিন, জেন্টামাইসিন, মেট্রোনিডাজ়োলের মতো অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে মেরে ফেলে।
তার পরেই দেখা যায়, অধিকাংশ ইঁদুরই ড্রাই আইজের সমস্যায় ভুগতে শুরু করেছে। আবার ‘লিমোসি-ল্যাকটোব্যাসিলাস রিউটেরি ডিএসএম ১৭৯৩৮’ নামে এক প্রজাতির ল্যাকটোব্যাসিলাস তাদের দেওয়ার পর থেকেই দেখা যায়, কমতে শুরু করেছে ড্রাই আইজের সমস্যা। একসময় সমস্যা নির্মূলও হয়ে গিয়েছে। সলিলের কথায়, “ইঁদুরের উপর এই সাফল্য ড্রাই আইজের চিকিৎসা-গবেষণায় একটা উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক ধাপ। তবে এখন দূষণের যা বহর, তাতে শুধু ল্যাকটোব্যাসিলাসে হবে না। প্রদাহ কমানোর ওষুধের সঙ্গেই ল্যাকটোব্যাসিলাস প্রয়োগ করতে হবে।” এই গবেষণা মানুষের উপর হওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনিও।