কলহার মুখোপাধ্যায়: বেয়োনেট যখনই ঝলসে উঠেছে, তখনই ধীরে ধীরে ধারালো হয়েছে কাস্তে। কাস্তে শান দেওয়ার ইতিহাস দেশের প্রতিটি খামারে রক্তাক্ষরে খোদিত রয়েছে। পেট ভরানোর সংগ্রামের ইতিকথা সবারই অল্পবিস্তর জানা। কলকাতার দুর্গাপুজোর সঙ্গে এবার জুড়ে গিয়েছে সেই লড়াইয়ের কাহিনি। যা লখিমপুর খেরি (Lakhimpur Kheri) কাণ্ডের পর অন্যমাত্রা পেল। উত্তরপ্রদেশের মর্মস্পর্শী কৃষকমৃত্যুর ঘটনা ফুটে উঠেছে দমদম পার্ক (Dum Dum Park) ভারতচক্রের মণ্ডপে। আর বাংলা যেভাবে কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবকেই বেছে নিয়েছে, তা মন কাড়ল কৃষক মোর্চারও।
তেভাগা, তেলেঙ্গানা আধিয়ার থেকে শুরু করে ফকির বা সন্ন্যাসী আন্দোলন। কুকা থেকে তিতুমিরের বারাসত। ভবানীপাঠক হোন বা দেবী চৌধুরানি, অহল্যাদেবী থেকে ইরাদেবী, সবশেষে লখিমপুর খেরি, শাসকের বিরুদ্ধে ঝড় তোলা সব নাম নিয়ে পুজো মণ্ডপ সেজেছে তিলোত্তমায়, এমনটা বিশেষ কানে আসেনি। সে লড়াইয়ের কথাকাহিনিই এবার ভারতচক্রের দুর্গাপুজোর থিমে।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: নজরুল মঞ্চে পুজোর অ্যালবাম প্রকাশ মমতার, গাইলেন গান, বাজালেন সিন্থেসাইজারও]
ভিআইপি রোড ধরে লেকটাউন পেরিয়ে বাগুইআটি যাওয়ার পথে দমদম পার্ক অঞ্চল। যশোর রোড দিয়েও সে এলাকায় ঢোকা যায়। সেখানেই ভারতচক্র ক্লাব। শাসকের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী ‘কৃষক আন্দোলনে’র নানা ছবি উঠে এসেছে শিল্পী অনির্বাণ দাসের ভাবনায়। এক অদ্ভুত সমাপতন কিংবা চিন্তাভাবনার ফসলও বটে। দীর্ঘদিন বাদে এই ট্রাক্টরের যুগে এ দেশ রক্তঝরা এক লড়াই চাক্ষুষ করছে। সাক্ষী হয়েছে লখিমপুরের মর্মান্তিক ঘটনারও। আর সেই প্রেক্ষাপটেই মণ্ডপের দেওয়াল লিখন, "মোটরগাড়ি ওড়ায় ধুলো, পিষে মরে চাষিগুলো।" যা বাস্তবে শাসকদের কঙ্কালসার চেহারাটাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আর তাই বাংলার সীমানা পেরিয়ে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই পুজো। কিষান মোর্চার সদস্যরাও আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে এই পুজোর থিমকে।
উত্তরপ্রদেশের নারকীয় কৃষকহত্যার ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছেন তাঁরা। জানাচ্ছেন, তাঁদের আন্দোলনে বাংলাও পাশে আছে। থিমের বিষয়ে জানাতে গিয়ে শিল্পী অনির্বাণ দাস জানান, “বিষয় ভাবনার দৃঢ়তা চমকে দেবে দর্শকদের।”
শাকম্ভরী দুর্গা এখানে ধান খেতে বাটনাবাটা শিলের উপর দাঁড়িয়ে। তিন মানুষ সমান ধানের শিস পেরিয়ে কৃষকবধূর রূপে প্রতিমাকে দেখা যাবে। আর মণ্ডপের প্রতি ছত্রে চাষিদের আন্দোলন গেঁথে রাখা। থাকছে লড়াই-সংগ্রামের পুরনো ফুটেজ। প্রোজেক্টরের মাধ্যমেও ফুটিয়ে তোলা হবে তাঁদের জ্বালা-যন্ত্রণার কথা। শিল্পীর যে ভাবনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশে।