সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: চাল দিয়ে তৈরি হয়েছে তিন ইঞ্চির দেবীদুর্গা। যা দেখতে হবে আতসকাচের ভিতর দিয়ে। পূণ্যধাম গঙ্গাসাগরে শ্রীধাম সর্বজনীন দুর্গোৎসব সেবা সমিতির ৪২ বছরের পুজোয় এই প্রতিমাই এবারের মুখ্য আকর্ষণ। যা দেখার জন্য উদগ্রীব হয়েছিলেন আমজনতা। কিন্তু হাই কোর্টের নির্দেশে মেনে করোনার কারণে এবার মণ্ডপে দর্শক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য। ফলে তিন ইঞ্চির এই দুর্গা আদৌ দর্শকরা দেখতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রবল সংশয়।
প্রতিবছরই কিছু না কিছু চমক থাকে শ্রীধাম সর্বজনীনের পুজোয়। এবছর সেই দায়িত্ব ছিল পুজো কমিটির সদস্য ৪৬ বছরের শিল্পী দেবতোষ দাসের উপর। ২০১৯ সালে গাছ বাঁচানোর দাবি নিয়ে কাঁঠের গুড়ো দিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন সাড়ে ছ’ফুটের দেবীদুর্গার প্রতিকৃতি। ২০২০ সালে প্লাস্টিক বর্জনে সচেতনতার প্রচারে মূর্তি বানিয়েছিলেন প্লাস্টিকের জলের বোতল, ক্যারিব্যাগ দিয়ে। এবার টান পড়েছে পকেটে। তাই এবার আর বড় মূর্তি নয়। অনেক কম খরচে পুজোর আকর্ষণ বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন শিল্পী। চাল দিয়ে তৈরি করেছেন মাত্র তিন ইঞ্চির দুর্গা। সঙ্গে থাকছে শিল্পীর কল্পনায় মাটির তৈরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’টি প্রতিকৃতি। তার মধ্যে একটি দশ ফুটের। মুখ্যমন্ত্রীর আদলের দশভূজা সেখানে বধ করছেন করোনাসুরকে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদলে তৈরি অন্য মূর্তিটি ছয় মহিলার হাতে তুলে দিচ্ছে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ‘ব্রহ্মদত্যির ঘরে’ উমা আরাধনা! হুগলির ঘোষ বাড়িতে তুঙ্গে পুজো প্রস্তুতি]
শিল্পী দেবতোষ জানিয়েছিলেন, শ্রীধাম সর্বজনীনের পুজো হবে চিরাচরিত রীতি মেনে মাটির মূর্তিতেই। তিন ইঞ্চির দুর্গাকে রাখা হবে দর্শক আকর্ষণের জন্যই তৈরি করা হয়েছিল। ঠিক ছিল, একটি কাঠের বাক্সের মধ্যে রাখা উমাকে দেখতে হবে আতস কাচের মধ্যে দিয়ে। খালি চোখে কোনওমতেই উমার দর্শন পাবেন না দর্শনার্থীরা। যদিও বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে কী হবে তা এখনও জানা নেই।
কিন্তু কোথা থেকে এই কাজ শিখলেন দেবতোষ? শিল্পী জানিয়েছেন, তিনি কারও কাছেই এই কাজ শেখেননি। সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় একটি চালের ওপর ক্ষুদ্র হরফে লেখা শুরু করেছিলেন। একটি চালের ওপর রং তুলি দিয়ে সর্বাধিক ১৭ টি অক্ষর অনায়াসেই লিখতে পারেন তিনি। শিখেছিলেন ব্যবসার তাগিদেই। একসময় চাবির রিংয়ের লকেটের ভিতর একটি চাল রেখে তাতেই ক্রেতার নাম লিখে বিক্রি করে সামান্য আয় করতেন। পরবর্তীকালে দেবতোষ গঙ্গাসাগরে সমুদ্রতটে গড়ে তোলেন শাঁখ আর ঝিনুকের দোকান। কিন্তু যশের তাণ্ডবে ধূলিসাৎ হয়ে যায় দোকান। এখন সেখানেই লোহার গুমটি করে চালাচ্ছেন শাঁখ-ঝিনুকের দোকান।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: করোনায় ঘরে ফেরা হয়নি, মার্কিন মুলুকেই পুজোর আয়োজনে প্রবাসী বাঙালিরা]
গঙ্গাসাগরের সমুদ্রসৈকতে নানা ধরণের বালির মূর্তি গড়তে সিদ্ধহস্ত দেবতোষ। ২০১৯ সালে সাগরতটে তৈরি করেছিলেন ‘নো এনআরসি, নো সিএএ’ থিমের উপর এক বালুশিল্প। আর তাতেই তিনি নজর কাড়েন মুখ্যমন্ত্রীর। সাগরের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়েই নিজহাতে দেবতোষকে পুরষ্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শিল্পীর কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে নেওয়ার সেই অকল্পনীয় মুহূর্তকে কোনওদিনই ভুলতে পারবেন না তিনি। শিল্পীজীবনে সেটাই তাঁর সবচেয়ে বড় এক পাওনা।