রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: সংসারের হাজারও কাজ। কিন্তু নারী তো দশভুজা। দু-হাতে সামলে নেন অনেক কিছু। হয়ত সংসারের কাজের ফাঁকেফাঁকেই একতাল মাটি দিয়ে দেবী দুর্গার অবয়ব গড়ে ফেলেন সেই নারী। মৃন্ময়ী দশভুজা তাই রূপ পাচ্ছেন বাস্তবের দশভুজার হাত ধরে। ভারত-বাংলাদেশে সীমান্তের নদিয়ার (Nadia) বেতাই গ্রামের ছায়া পাল তেমনই একজন। শ্বশুরবাড়িতে কাজ শিখে ধীরে ধীরে এই কাজে দক্ষ হয়ে উঠছেন তিনি। বাঁশ-খড় দিয়ে কাঠামো নির্মাণ থেকে চক্ষুদান – সব একা হাতেই করেন ছায়া পাল। এবারের দুর্গাপুজোয় (Durga Puja) তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের তেহট্টের বেতাই সাধুবাজার গ্রামের গৃহবধূ ছায়া পাল। প্রতি বছর ভাল সংখ্যক প্রতিমা গড়ার বরাত পান তিনি। কিন্তু তুলনায় এ বছর বরাত অনেক কম। এছাড়াও অনেক বারোয়ারিগুলির অর্ডার যাতে হাতে আসে, তার জন্য তুলনায় অনেক কম পারিশ্রমিকে কাজ করছেন ছায়াদেবী। সংসারের কাজ সামলে এবারও দুর্গা প্রতিমা গড়ছেন এই গৃহবধূ।
[আরও পড়ুন: বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের শাস্তি! প্রেমিক যুগলকে বেঁধে বেধড়ক মার, তীব্র চাঞ্চল্য ধুপগুড়িতে]
গত কয়েক বছর আগেও একসঙ্গে ১৪টি দুর্গা প্রতিমা গড়ার বরাত পেতেন ছায়াদেবী। তবে এবছরও করোনার (Coronavirus) দাপট কাটেনি। তাই এই আবহে কয়েকটি গৃহস্থ বাড়ির পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই এবছর তিনি আটটি প্রতিমা তৈরির বরাত পেয়েছেন। তাও গতবারের তুলনায় অনেক কম টাকায় প্রতিমা সরবরাহ করতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। তাঁর পরিবারের সকলেই প্রতিমা শিল্পী। স্বামী শংকর পাল এবং ছেলে গোলক পাল – দু’জনেই প্রতিমা শিল্পী। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। প্রতিবেশী বিলাস বিশ্বাস, গোপাল বিশ্বাসরা জানান প্রতিমা শিল্পী ছায়াদেবী বিয়ের আগে মূর্তি গড়ার কাজ সম্বন্ধে কিছুই জানা ছিল না। ভাসুর, শ্বশুরদের কাছে এই কাজ শিখে তিনি নিজেই এখন একজন প্রতিষ্ঠিত সুদক্ষ কারিগর। এখন ছায়াদেবীর হাতে গড়া বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা এলাকার মণ্ডপে মণ্ডপে জায়গা করে নিচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ট্রেকিংয়ের নেশাই কাড়ল প্রাণ, হিমাচল থেকে ফেরার সময় মৃত্যু উত্তর ২৪ পরগনার দুই বাসিন্দার]
শিল্পী ছায়া পাল বলেন, ”আজ থেকে ৩৬ বছর আগে মাত্র তেরো বছর বয়সে বিয়ে হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি এই সাধুবাজার গ্রামে আসি। বাবার বাড়ি বার্নপুর হালসানা পাড়ায়। বাবা চাষের কাজ করে সংসার চালাতেন। যখন বিয়ে হয়, তখন ছিল আমাদের শ্বশুরবাড়ির ভরা সংসার। ছিল যৌথ পরিবার। কিন্তু এখন সকলে পৃথক। সেই সময় সংসারের কাজ সামলে অবসরে শ্বশুর, ভাসুরদের মাটি দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ বসে বসে একদৃষ্টে দেখতাম। তাঁদের কাজের অনেক সময় সহযোগিতাও করতাম। সেই থেকে আমার কাজের হাতে খড়ি।”
এখন তিনি পুরোদমে দুর্গা, গণেশ, লক্ষ্মী, কালী সমস্ত প্রতিমা তৈরি করতে পারদর্শী। বাঁশ ও কাঠ বাদ দিয়ে খড়বাঁধা মাটির প্রলেপ দেওয়া অবশেষে মূর্তির চক্ষুদান সমস্ত কাজই তিনি নিজে হাতে করেন। এবার তিনি ৮টি দুর্গা প্রতিমার বরাত পেয়েছেন। যার প্রতিটির মূল্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে। সারা বছরই কোনও না কোনও মূর্তির কাজ করতেই হয়। প্রতিমা গড়েই সংসার চলে। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির ফলে লাভের অঙ্ক তলানিতে ঠেকেছে। পরিবেশ দূষণের (Pollution) কথা ভেবে ভেষজ রঙে মূর্তি গড়ার কাজ করেন। বাড়িতে বসে সমস্ত মূর্তি গড়ার কাজ করলেও নিজ নিজ বরাত অনুযায়ী স্বামী, সন্তান অন্যত্র মণ্ডপে গিয়ে কাজ করেন। ছেলে গোলক পাল বলেন, ”বাড়িতে তৈরি মূর্তিগুলো মা নিজে হাতে তৈরি করেন। অবসর সময়ে কখনও কখনও আমরা মাকে নামমাত্র সহযোগিতা করি।”