দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: দেবী দুর্গার (Durga Puja 2021) অগনিত সন্তান মর্ত্যলোকে। আশ্বিণ মাসের দেবীপক্ষে তাঁরাই দেবীর আরাধনা করে থাকেন। কেউ নিজে হাতে মূর্তি গড়ে পূজা করেন, তো কেউ ঘটেই দশভুজার প্রতি পূজার্ঘ্য নিবেদন করেন। হুগলির শুভ মাইতি প্রথম দলের সদস্য। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই সে নিজে হাতে প্রতিমা গড়ে পুজো করে। তার তৈরি দুর্গাপ্রতিমা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান প্রতিবেশীরা। মাইতি পরিবার এবং স্থানীয়দের আশা, একদিন শুভর তৈরি মূর্তি কোনও বড় পুজো মণ্ডপে স্থান পাবে।
মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই ঠাকুর তৈরির হাতেখড়ি। আর সেই ঠাকুর তৈরি করে নিজেই পুজো করে শুভ। হুগলির (Hooghly) রাজহাট উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শুভ মাইতির বয়স এখন ১৩। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। শুভর বাবা অষ্ট মাইতি চাষাবাদ করে সংসার চালান। মা শম্পা মাইতি ঘরের কাজকর্ম সামলান। এইরকম পরিবারে পাঁচ বছর বয়স থেকেই শুভ আপন খেয়ালে নিজেই মায়ের মূর্তি তৈরি করা শুরু করে এবং সেই মূর্তিতে আবার নিজেই পুজো করে। সারাবছর ধরে আত্মীয়-স্বজন বাবা-মা যেটুকু পয়সা শুভকে দেন সেই পয়সা তিল তিল করে জমিয়ে রেখে শুভ মায়ের পুজোয় খরচ করে। তের বছরের এই কিশোরের মায়ের মূর্তি তৈরি করা থেকে শুরু করে সেই মূর্তি নিজেই পুজো করে- যা দেখে স্থানীয় মানুষ রীতিমতো বিস্মিত। তারা ওই কিশোরের মায়ের প্রতি ভক্তি দেখে অবাক হয়ে যান।
[আরও পড়ুন: অক্টোবরেও রাজ্যে জারি করোনা বিধিনিষেধ, পুজোর দিনগুলিতে রাতে ঠাকুর দেখায় থাকছে না নিষেধাজ্ঞা]
শুভ বছর চারেক বয়সে পাড়ার পাল বাড়িতে দুর্গা মায়ের মূর্তি গড়া দেখে নিজে নিজেই একদিন মাটি দিয়ে দশভুজার অবয়ব গড়া শুরু করে দেয়। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে একটা ছোট প্রতিমা তৈরি করে নিজেই পুজো শুরু করে দেয়। সেই থেকেই প্রতি বছর এই কিশোর নিজে মায়ের মূর্তি তৈরি করে নিজেই পুজো করে। প্রত্যেক বছর পুজো করার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমারও উচ্চতা বাড়তে থাকে। বর্তমানে নবম বর্ষে সেই প্রতিমার উচ্চতা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯ ফুটে। শুধু পার্বতীই নয়, প্রত্যেক বছর মায়ের সঙ্গে তাঁর সন্তানরাও আসেন মাইতি বাড়িতে।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: মহাদেবের বাম উরুতে আসীন দেবী, বর্ধমানের দে বাড়িতে আরাধনা হয় হরগৌরীর]
শুভর অবশ্য এই কাজের পিছনে কোনও কারণ সে নিজেই জানে না কেন সে পুজো করে। সে বলে তার ইচ্ছে হয়েছিল-সে মায়ের মূর্তি তৈরী করে নিজেই পুজো করবে। শুভর দিদি ঋতুপর্ণা মাইতি জানান, ”একদম ছোটবেলায় প্রথম দিকে অপটু হাতে ভাই যখন মায়ের মূর্তি তৈরি করত তখন তার চোখ-মুখ ঠিকঠাক হত না। কিন্তু অসম্ভব ভক্তি ও ভালোবাসা নিয়ে ভাই মূর্তি তৈরি করত। তারপর যত দিন গিয়েছে, ভাইয়ের হাতে তৈরি মা যেন জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। সারা বছর এর ওর থেকে পাওয়া টাকা জমিয়ে ভাই নিজেই মূর্তি তৈরি করে ও নিজেই পুজো করে। আমরা পরিবারের সকলে এবং আশেপাশের মানুষজন ভীষণ উপভোগ করি এই পুজোটাকে।”