সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে গেরস্থ বাড়িতে গিয়ে জল চেয়েছিলেন সাধারণ এক বধূ। গঙ্গাজলের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, তাঁকে একটু জল দিতে। তৃষ্ণা মেটানোর পর তিনি নিজের সংসারের দুঃখ-দুর্দশার কাহিনি বলতে থাকেন গৃহকর্ত্রীর কাছে। শান্তিপুরের (Santipur) রায় বাড়ির ‘কর্তা মা’ তাঁকে বলেন ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাড়িতে আসতে। সে কথা না শুনে উধাও হয়ে যান ওই বধূ। তার পর রাতে স্বপ্নাদেশ দেন, ওই বাড়িতে তিনি পুজো চান। দেবীর স্বপ্নাদেশ পেলেও আর্থিক সংকট ছিল, তাই তাঁর নির্দেশেই কুলোয় শুরু হ দুর্গাপুজো (Durga Puja)। সে প্রায় ৫০০ বছর আগেকার ঘটনা। তবে বর্তমানে রায় বাড়িতে দশভুজার একক মূর্তিতে পুজো হয়। দুর্গাপুজোর সময় বাড়ির সমস্ত সদস্য হাজির হন বাড়িতে। কটা দিন খুব ধুমধাম, হইহুল্লোড়ে কাটে।
নদিয়ার শান্তিপুরের রায় বাড়ির দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2023)বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি। এ বাড়ির ইটের পাঁজরে জড়িয়ে অনেক ইতিহাস। রায় বাড়ির পুজো আর পাঁচটা দুর্গাপুজোর থেকে অনেকটাই আলাদা। দেবী এখানে কুলোমাতা। এই নামের পিছনে রয়েছে এক রোমহর্ষক কাহিনি। কথিত রয়েছে, দেবী জল খাওয়ার অছিলায় লাল পাড় শাড়ি পরে এই রায় বাড়িতে আসেন। মিষ্টিমুখ করে ছেলেকে ডাকার নাম করে অদৃশ্য হয়ে যান।
[আরও পড়ুন: ফের মা হতে চলেছেন অনুষ্কা শর্মা! বিরাট কোহলির পরিবারে আসছে নতুন সদস্য?]
রাতে স্বপ্নাদেশ আসে প্রতিষ্ঠা করে পূজা করার। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না তখন। গৃহকর্ত্রী অপারগতার কথা জানান স্বপ্নে দেখা দেবীকে। তখন দেবীই বলেন, কুলোতে পুজো করতে। সেইমতো কুলোয় পুজো শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে অবস্থা ফেরায় দশভুজার মূর্তি তৈরি হয় ঠাকুরদালানে। সেখানেই দেবী দুর্গা পূজিত হন চার-পাঁচদিন ধরে। তবে যেহেতু দেবী এই বাড়িতে একা এসেছিলেন, তাই এখানে শুধু মায়ের মূর্তিই গড়া হয়। যদিও পুরোহিত কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী-সহ সকলের নামেই নিবেদন করা হয়।
[আরও পড়ুন: ‘লিপস্টিক, ববকাট চুল…’ মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য লালুর দলের নেতার]
এসব কথা জানালেন রায় পরিবারের সদস্যরাই। পাঁচশো বছর অতিক্রান্ত করেছে এই রায় বাড়ির পুজো। আজও এখানকার পুজোয় বারবার মুখে মুখে ফেরে একলা মায়ের ফিরে আসার কাহিনি।
দেখুন ভিডিও: