shono
Advertisement

Durga Puja 2023: দুর্গোৎসবের আমেজ বাংলাদেশেও, এ বছর আরও বাড়ছে পুজো মণ্ডপের সংখ্যা

মৌলভীবাজার উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের দুর্গার পুজো হয়।
Posted: 02:18 PM Oct 08, 2023Updated: 05:03 PM Oct 08, 2023

সুকুমার সরকার, ঢাকা: দুর্গোৎসবের ইতিহাস মূলত শহর কেন্দ্রিক। শহর থেকে এর সূচনা হলেও তা পরবর্তীতে গ্রামবাংলা জুড়ে তার ব্যাপক বিস্তার ঘটে। এক সময় দেশের জমিদার বাড়িগুলিতে একছত্র থাকলেও তা ছড়িয়ে পড়ে সর্বজনীন বারোয়ারি পুজো রূপে। দুর্গাপুজোর (Durga Puja) আসল প্রাণটা কিন্তু থাকে গ্রামবাংলার উৎসবের মধ্যে। তবে বাংলাদেশে (Bangladesh) কীভাবে দুর্গাপুজো শুরু হল, তা নিয়ে নানা কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। চলতি বছর বাংলাদেশে ৩২ হাজার দুশোর মতো মণ্ডপে দুর্গাপুজো হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় ৩০টি বেশি। এ বছর ঢাকায় পুজোমণ্ডপের সংখ্যা ২৪৫টি। গত বছরের তুলনায় চারটি বেশি মণ্ডপ। প্রতি বছর ঢাকায় (Dhaka) পুজোমণ্ডপের সংখ্যা বাড়ছে।

Advertisement

বাংলাদেশের রাজশাহীতে (Rajshahi)প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়েছিল। তবে প্রথম কবে দুর্গাপুজো শুরু হয়, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকার লালবাগ থানার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুজোও বেশ প্রাচীন। উল্লেখ্য, ঢাকেশ্বরী (Dhakeswari) মন্দিরের পূজিতা দুর্গার আরেক রূপ দেবী ঢাকেশ্বরীর নামেই ঢাকার নামকরণ হয় বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করে থাকেন। আবার কারও কারও মতে, পঞ্চদশ শতকে শ্রীহট্টের (বর্তমান সিলেট) রাজা গণেশ প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিতভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন গবেষকের লেখা থেকে জানা যায়, ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহীর তাহেরপুর এলাকার রাজা কংস নারায়ণ প্রথম দুর্গাপুজোর প্রবর্তন করেন। রাজা কংস নারায়ণ ছিলেন বাংলার বারো ভূঁইঞার এক ভূঁইঞা।

 

সেসময় রাজা কংস নারায়ণ প্রভূত ভূ-সম্পত্তির অধিকারী হন। তখনকার রাজাদের মাঝে নিজের সামাজিক প্রতিপত্তি বাড়ানোর উদ্দেশে তিনি দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। এই শারদীয় পুজোয় তিনি সে সময়ের হিসেবে প্রায় আট লক্ষ টাকার মতো ব্যয় করেন। ওই একই বছর বসন্তকালে রাজশাহীর ভাদুরিয়ার রাজা জয় জগৎ নারায়ণ বেশ জাঁকজমক করে বাসন্তী পুজোর আয়োজন করেন। তিনি কংস নারায়ণকে টেক্কা দেয়ার জন্য পুজোয় প্রায় নয় লক্ষ টাকা খরচ করেন। আঠারো শতকে সাতক্ষীরার কলারোয়ার মঠবাড়িয়ার নবরত্ন মন্দিরে দুর্গাপুজো হতো বলে বিভিন্নজনের লেখায় পাওয়া যায়।

[আরও পড়ুন: ‘গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করব’, হুঙ্কার নেতানিয়াহুর! হামাস-ইজরায়েল সংঘর্ষে মৃত পাঁচশোর বেশি]

অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্ত তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেন যে, ১৮৩০ সালের পুরনো ঢাকার সুত্রাপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ী নন্দলাল বাবুর মৈসুন্ডির বাড়িতে ঢাকার সবচেয়ে বড় দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। তবে সেই পুজোর কত খরচ হয়েছিল, তা জানা না গেলেও প্রতিমাটি প্রায় দোতলা উঁচু ছিল বলে লেখক উল্লেখ করেন। ১৮৫৭ সালে সিপাই বিপ্লবের সময় বিক্রমপুর (এখন মুন্সিগঞ্জ) পরগনার ভাগ্যকূল জমিদার বাড়ির রাজা ব্রাদার্স এস্টেটে এবং সাটুরিয়া থানার বালিহাটির জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোর আয়োজনের ব্যাপকতা বেশ প্রসিদ্ধ ছিল। সে সময়ে ঢাকার কেন্দ্রস্থলে সিদ্ধেশ্বরী জমিদার বাড়ি ও বিক্রমপুর হাউসেও জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজোর আয়োজন হতো।

১৯২২-২৩ সালে পুরানো ঢাকার আরমানিটোলায় জমিদার শ্রীনাথ রায়ের বাড়ির পুজোও বেশ বিখ্যাত ছিল। সপ্তদশ শতক থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত প্রভাবশালী জমিদার, সামন্ত রাজাদের অর্থকৌলিন্য প্রকাশের পাশাপাশি প্রভাব প্রতিপত্তি দেখানোর জন্য মূলত দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়। তখনও দুর্গাপুজো সকলের হয়ে উঠতে পারেনি। দুর্গাপুজোর সার্বজনীনতার রূপ পেতে লেগে যায় আরও অনেক বছর। বিংশ শতকের শুরুর দিকে বাংলাদেশে দুর্গাপুজো সমাজের বিত্তশালী এবং অভিজাত হিন্দু পরিবারদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। গত শতাব্দীর শেষের দিকে এবং এই শতাব্দীর শুরুর দিকে দুর্গাপুজো তাঁর সার্বজনীনতার রূপ পায়। ১৯৪৭-এ ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর এককভাবে পুজো করাটা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে। এইসময় অভিজাত এবং বিত্তশালী হিন্দুদেরও প্রভাব-প্রতিপত্তি কমতে শুরু করে। ফলে সারা বাংলাদেশে একক দুর্গাপুজো থেকে প্রথমে বারোয়ারি এবং পরবর্তীকালে সার্বজনীন পুজোর চল শুরু হয়। সর্বজনীন হওয়ার পর থেকেই দুর্গোৎসব বাঙালির জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়। সর্বজনীন দুর্গাপুজো প্রচলন হওয়ার পর থেকেই সর্বস্তরের মানুষের কাছে দুগাপুজোর আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

[আরও পড়ুন: কলকাতার বড় মণ্ডপে কত ভিড়? জানিয়ে দেবে ডিসপ্লে বোর্ড]

এসব মণ্ডপের বৈচিত্র্য, ঐতিহ্য আর সাথে চলছে বাহারি থিমের নানা আয়োজন। কোথাও এক হাজার দুই হাত রয়েছে দেবী দুর্গার। কোথাও বা শুধুই হাজার। থিমের পুজোয় কোথাও স্থান করে নিয়েছে নারীর প্রতি সহিংসতা, কোথাও আবার রোহিঙ্গা (Rohingya) শরণার্থীদের ওপর ঘটে চলা নৃশংসতার কথা উঠে এসেছে। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ে উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের দুর্গা দেবীর পূজা হয়ে থাকে। এই পুজো প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। লাল রঙের দুর্গা ঠাকুরকে দেখার জন্য দেশ ও দেশের বাইরের অনেক দর্শনার্থী এখানে ছুটে আসেন।

বাংলাদেশে আশির দশক পর্যন্ত শারদীয় দুর্গোৎসবে বিনোদনের প্রধান মাধ্যমই ছিল যাত্রাপালা, কীর্তন, কবিয়াল গান বা পালাগান। দুর্গাপুজোয় যাত্রাপালা আর যাত্রাগান আমাদের সংস্কৃতির এক গৌরবময় ঐতিহ্য। ১৯৬৯ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার গণ অভ্যুত্থানের সময়টাতে আরপি সাহার টাঙ্গাইলের বাড়ির (ভারতেশ্বরী)দুর্গাপুজোয় প্রথম বিপ্লবী পালা ‘একটি পয়সা’ মঞ্চস্থ হয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement