নব্যেন্দু হাজরা: গত কয়েকদিনের নাগাড়ে বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে পদ্ম। ডিভিসির ছাড়া জলে একাধিক জেলায় বন্যার পরিস্থিতি। যার জেরে চাষবাসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পচে গিয়েছে ফুলও। বিশেষ করে পদ্ম। পুজোর মুখে যার জেরে চিন্তায় পড়েছেন ফুলচাষিরা। এমনকী প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় দুর্গা আরাধনার চিরকালীন প্রথা ধাক্কা খাবে কি না, সেভাবনাও প্রকট হয়ে উঠছে গেরস্ত বাড়ি থেকে তাবড় পুজোকমিটিতে।
শরতের দিনেরাতে শ্রাবণের দাপাদাপিতে পদ্ম নষ্টের জেরে তার দাম এখনই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। মল্লিকঘাট ফুলবাজারে এখনই এক পিস পদ্ম বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২টাকা পিসে। ফলে হিমঘরে মজুত করার জন্য ফুল কিনতে গিয়েও দামের ঠেলায় ধাক্কা খেতে হচ্ছে। পুজোর সময় এই ফুলের দাম ২৫-৩০ টাকা প্রতি পিস হতে পারে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
গত প্রায় দিন পনেরো ধরে চলা নাগাড়ে বৃষ্টিতে পদ্মচাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলেই জানাচ্ছেন ফুলচাষিরা। তাই তাঁদের কথায়, এবারে মায়ের পায়ে পদ্মের জোগান দিতে ওড়িশা এবং বেঙ্গালুরুর পদ্মের উপরও নির্ভর করতে হতে পারে। তবে দুই পদ্মের ফারাক আছে। বাংলার পদ্মকে বলে ডবল সাইজ পদ্ম। আকারে বেশ বড়। আর ওড়িশার সিঙ্গল সাইজ পদ্ম বা ছোট। বৃষ্টির পাশাপাশি পুজো (Durga Puja 2023) দেরিতে এবার।
[আরও পড়ুন: দু’কামরার ফ্ল্যাটে মাথা গুঁজেই হরগৌরীর পুজোর প্রস্তুতি চালাচ্ছেন রূপান্তরকামীরা]
ফলে ভোরের দিকে শিশির পড়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আর শিশির পড়লে পদ্ম পচে যায়। তাই পুজোর অন্তত এক মাস আগে থেকেই হিমঘরে পদ্ম মজুত করতে শুরু করেন চাষিরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রতিবছর অষ্টমীর দিন মায়ের পায়ে দিতে প্রায় এক কোটি পদ্ম লাগে। কিন্তু এবার পদ্মের জোগানে টান পড়ার শঙ্কা। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ বেশ কয়েকটি জেলার ফুলচাষ একেবারে নষ্ট হয়েছে। পদ্মের পাশাপাশি অন্য ফুলও পচে গিয়েছে।
কথা হচ্ছিল জগন্নাথ ঘাটের ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তাঁদের কথায়, এ রাজ্যে বীরভূম ও বাঁকুড়া ও বর্ধমানে বড় বড় জলাশয়ে পদ্মের চাষ হয়। এছাড়াও হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন নয়ানজুলি ও জাতীয় সড়কের ধারে খালগুলিতে পদ্ম চাষ করেন অনেক ফুলচাষি। বৈশাখ থেকে ভাদ্র এই সময়কালেই মূলত পদ্মের চাষ হয়। কিন্তু সেই সময় এবার বৃষ্টি হয়নি। তাই চাষও ভালো হয়নি। অতিরিক্ত তাপে নষ্ট হয় গাছ। যতটুকুও বা হয়েছিল, তা এই টানা বৃষ্টিতে অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
চাষিরা জানাচ্ছেন, প্রায় ৩০ শতাংশ পদ্মই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর সেই পদ্মের ক্ষতি সামলাতেই ওড়িশা থেকে পদ্ম আমদানি করতে হতে পারে। তবে দাম এবার যথেষ্ট চড়াই থাকবে। কারণ ইতিমধ্যেই পদ্মের দাম যথেষ্টই চড়া। মা দুগ্গার পায়ে ১০৮ পদ্ম দিতে হয়। এবারের পুজোয় যা কিনতে মোটা টাকাই খসবে বলে জানাচ্ছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, “টানা বৃষ্টিতে পদ্মচাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রচুর ফুল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই পুজোর সময় পদ্মের জোগানে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে ওড়িশার পদ্মই ভরসা। দামও ভালোই থাকবে।”